সিবিআই বনাম সিবিআই: পদ্ধতি না মানাতেই অযথা জটিলতা

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো গভীর রাতে নয়, নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেত

 |  3-minute read |   28-10-2018
  • Total Shares

সিবিআইয়ের নির্দেশক পদের মর্যাদা কী সে কথা প্রথমেই মনে রাখতে হবে। সিবিআইয়ের নির্দেশক হলেন নিখাদ, নিখুঁত এক ব্যক্তি যাঁর বিরুদ্ধে কোনও দিন কোনও অভিযোগ ছিল না (impeccable integrity)।

এই পদে নিয়োগ করে একটি কলেজিয়াম। এই কলেজিয়ামে থাকেন দেশের প্রধানমন্ত্রী, দেশের সর্বোচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি এবং সংসদের বিরোধী দলের প্রধান। ওই পদে যাঁকে নিয়োগ করা হবে, তাঁর বিরুদ্ধে সবকিছু খতিয়ে দেখা হয়। যদি দেখা যায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনও দুর্নীতির অভিযোগ নেই তখনই তাঁকে এই পদে নিয়েগ করা হয়।

alok_verma_rakesh_as_102818025547.jpegআস্থানা ও ভার্মা: দুই আধিকারিকই যদি নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কাজ করতেন তা হলে এত জটিলতা তৈরি হত না

গোয়েন্দা সংস্থা হিসাবে সিবিআইয়ের যে পরিকাঠামো রয়েছে, এ দেশে অন্য কোনও গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠানের সেই পরিকাঠামো নেই। এমন প্রতিষ্ঠানের যিনি সর্বোচ্চ পদে থাকেন তাঁর ক্ষমতা ও দায়িত্বও বিপুল। যথাযথ যোগ্যতা-অভিজ্ঞতা তো আছেই এবং কোনও অভিযোগ নেই বলেই তাঁকে সেই পদে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এ ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, কোনও অভিযোগ ছিল না মানে এই নয় যে কখনও কোনও অভিযোগ উঠবে না। এখনও পর্যন্ত কোনও অভিযোগ না থাকলেও পরে তাঁর বিরুদ্ধে কোনও অনিয়ম বা দুর্নীতির অভিযোগ উঠতেই পারে।

এই পদে যিনি বা যাঁরা রয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলেও তার তদন্ত করতে হবে, এফআইআর-ও করা যাবে। তবে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে। এক শীর্ষকর্তার যদি অন্য কোনও শীর্ষকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে, তা হলে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনেই সেই অভিযোগ নথিভুক্ত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে চিফ ভিজিল্যান্স আধিকারিককে বিষয়টি জানানো এবং যার ভিত্তিতে সেই অভিযোগ সেই সংক্রান্ত নথি সেই অভিযোগপত্রের সঙ্গে দাখিল করতে হবে। একই সঙ্গে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সেই অভিযোগের বিষয়ে জানিয়ে রাখাও প্রয়োজন।

দুই আধিকারিকই যদি এই নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কাজ করতেন তা হলে এত জটিলতা তৈরি হত না।

আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে, সিবিআইয়ের মতো প্রতিষ্ঠান কী ভাবে চলছে তা নজরে রাখারও নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। কেন্দ্রীয় ভিজিল্যান্স কমিশন এবং প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের দেখার কথা যে সিবিআইয়ের যাঁরা শীর্ষকর্তা তাঁরা কী ভাবে কাজ করছেন। প্রশ্ন উঠতেই পারে যে তাঁরাও তাঁদের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করেছেন কিনা তা নিয়ে। সিবিআইয়ের শীর্ষ দুই কর্তার মধ্যে যখন দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে তখন সেই বিষয়টি কেন তাঁদের নজর এড়িয়ে গেল সেই প্রশ্নও উঠতে বাধ্য।

modi-story_647_05301_102818030021.jpgসার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো রাত দুটোয় সিদ্ধান্ত না জানিয়ে ১০ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে পারতেন প্রধানমন্ত্রী

আরও একটা কথা, রাত দু’টের সময় সিবিআইয়ের এক কর্তাকে জানানো হবে তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে এবং একজনকে তাঁর স্থলাভিষিক্ত করা হবে কেন? এই কাজটিই পরের দিন সকালে করা যেতে পারত। প্রধানমন্ত্রী হলেন প্রশাসনের ক্ষেত্রে দেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তি। তিনি জরুরি বৈঠক ডাকতে পারতেন, সেখানে দেশের প্রধান বিচারপতি ও প্রধান বিরোধী নেতার কাছে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে বলতে পারতেন যে এই অচলাবস্থা কাটাতে তিনি কী পদক্ষেপ করতে চাইছেন। একই সঙ্গে এ ব্যাপারে সেন্ট্রাল ভিজিল্যান্স কমিশনারের বক্তব্য জানতে চাওয়া যেত। তা হলে পুরো পদ্ধতিতেই স্বচ্ছতা বজায় থাকত।

সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মতো গভীর রাতে এ সব না করে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে এই কাজ করা যেত, তাহলেই এত বিতর্ক তৈরি হত না। রাত দুটোর বদলে আর দশ ঘণ্টা তিনি অপেক্ষা করলেই এই প্রশ্ন উঠত না। এই তাড়াহুড়ো থেকেই অস্বচ্ছ্বতার প্রশ্ন উঠছে। সেটা ওঠাই স্বাভাবিক।

দেশের সংবিধান থানার একজন ওসিকে কী ক্ষমতা দিয়েছে তা অনেকেই আন্দাজ করতে পারেন না। তা হলে জেলার পুলিশ সুপারের কতটা ক্ষমতা একবার ভেবে দেখুন। এবার ভাবুন রাজ্যপুলিশের নির্দেশকের কী ক্ষমতা। একই ভাবে কল্পনাও করতে পারবেন না যে দেশের সংবিধান অনুযায়ী সিবিআই নির্দেশকের ক্ষমতা ও এক্তিয়ার কতটা। আমি নিজে রাজ্যপুলিশের আইজি ছিলাম বলে জানি কার কী সাংবিধানিক ক্ষমতা। প্রশ্ন হল, তাঁদের যাঁরা পরিচালনা করছেন, তাঁদের সেই পরিচালন পদ্ধতি স্বচ্ছ কিনা।

cbi-story_102818025732.jpgসিবিআই নিয়ে সাধারণ মানুষের মনে এখন অনেক প্রশ্ন

লালুপ্রসাদ যাদবকে জেলে পাঠিয়েছে সিবিআই, জয়ললিতাকে চার্জশিট দিয়েছে। সিবিআইয়ের সাফল্য অনেক। যদিও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল পুরস্কারের স্মারক উদ্ধার করতে না পারার মতো ব্যর্থতাও রয়েছে। তবে এ দেশে কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সিবিআইয়ের কোনও কর্তাও নন। কারও বিরুদ্ধে কোনও সন্দেহ হতেই পারে। সেক্ষেত্রে স্বচ্ছতার সঙ্গে ও নির্দিষ্ট পদ্ধতি মেনে কাজ করলেই সমস্যা থাকে না, জটিলতা থাকে না।  

সিবিআইয়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের মনে অনেক প্রশ্ন আছে, অনেক প্রশ্ন উঠছে। প্রথম থেকে পদ্ধতি অনুযায়ী যদি প্রতিটি কাজ করা হত তা হলে তাঁদের মনে এই প্রশ্ন আজ উঠত না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment