দেশের সেরা পঞ্চায়েতের স্বীকৃতি কী ভাবে পেল দিগম্বরপুর

১৭টি বিষয়ের উপরে জোর দিয়ে তা সফল ভাবে রূপায়িত করেছে

 |  3-minute read |   13-07-2018
  • Total Shares

দেশের প্রায় ২.৪৮ লক্ষ গ্রাম পঞ্চায়েয়েতর মধ্যে পাথরপ্রতিমার দিগম্বরপুর গ্রামপঞ্চায়েত সেরা নির্বাচিত হয়ে আমরা গর্বিত। সাতটি মানদণ্ডের ভিত্তিতে সেরা গ্রাম পঞ্চায়েত হিসাবে আমাদের বেছে নেওয়া হয়েছে। সাতটি মানদণ্ডের বিচারে আমাদের শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের গ্রামোন্নয়ন ও পঞ্চায়েত দপ্তর সব গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছ থেকেই তাদের এলাকা উন্নয়নের পরিকল্পনা চেয়ে পাঠিয়েছিল।

একশোটি বাছাই করা গ্রাম পঞ্চায়েতের মধ্যে থেকে প্রাথমিক ভাবে ২১টি গ্রাম পঞ্চায়েতকে বেছে নেওয়া হয়। তারপরে অতি সূক্ষ্ম ভাবে বিচার করে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের নাম কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হয়। এই তালিকায় আমাদের দিগম্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও ছিল হাওড়ার বালি-জগাছা ব্লকের চামরাইল গ্রাম পঞ্চায়েত, পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর ২ ব্লকের সাঁকোয়া গ্রাম পঞ্চায়েত এবং জলপাইগুড়ির মাটিয়ালির ইদং গ্রাম পঞ্চায়েত। দেশের সব রাজ্যের গ্রামপঞ্চায়েতগুলির মধ্যে উন্নয়ন নিয়ে চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় আমরাই শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হই।

এই সাফল্য অবশ্য এক দিনে আসেনি। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য সরকারের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন বিভাগের অধীনে স্টারপার্ড (সোসাইটি ফর ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ অন পঞ্চায়েতস অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট)আমাদের প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করে। স্টারপার্ডের এই প্রশিক্ষণে ডিস্ট্রিক্স লেভেল ট্রেনার-কাম-চার্জ অফিসার (ডিএলটিসিও), প্রধান ও উপপ্রধান-সহ গ্রামপঞ্চায়েতের সমস্ত নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সমস্ত কর্মীকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় পরিকল্পনা গ্রহণ, রূপায়ণ ও বাজেট করা নিয়ে। আমরা ২০১৭ সালের মার্চে প্রথম নিজেদের বাজেট নিজেরা করতে সক্ষম হই।

তার আগে ২০১৬ সালে ১০৫ জনকে নিয়ে একটি সহায়ক দল তৈরি করা হয়। সেই দলে ছিলেন গ্রাম পঞ্চায়েতের সব নির্বাচিত সদস্য, গ্রাম পঞ্চায়েতের সব কর্মচারী, এলাকায় কর্মরত অন্যান্য বিভাগীয় দপ্তরের কর্মী যেমন আশা কর্মী, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী, স্বাস্থ্য সুপারভাইজার প্রমুখ)এবং এলাকায় বসবাসকারী সমাজসেবীরা। ডিএলটিসিও-রা তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন।

body_071318070135.jpgআমরা ছাত্রছাত্রীদের সামিল করেছি, তারা নিজেদের এলাকার সামাজিক ও প্রাকৃতিক মানচিত্র অঙ্কন করেছে

তার পরে এই ১০৫জনকে ছোট ছোট দলে ভাগ করে এলাকাভিত্তিক উন্নয়নমূলক কাজ আমরা শুরু করি। এখানে ১৯টি গ্রাম সংসদেই উন্নয়নমূলক কাজ হচ্ছে। এলাকার লোকজনকে প্রত্যক্ষ ভাবে সেখানে সামিল করা হচ্ছে। পুরষ্কার আমরা আগেই পেয়েছি, তবে সম্প্রতি রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এখানে আমাদের কাজ দেখতে এসেছিলেন।

এই কাজে আমরা ছাত্রছাত্রীদের সামিল করেছি। তারা নিজেদের এলাকার সামাজিক ও প্রাকৃতিক মানচিত্র অঙ্কন করেছে। আমরা শিক্ষা, জনস্বাস্থ্য, কৃষি, নারী শিশু ও সমাজকল্যাণ, কুটির ও ক্ষুদ্র শিল্প, পরিকাঠামো প্রভৃতি সম্বন্ধে তথ্য আহরণ করেছি প্রতিটি গ্রাম-সংসদ ধরে, স্থানীয়দের কাছ থেকে। তার উপরে ভিত্তি করে আমরা বার্ষিক বৈঠক করেছি। সেখানে গুরুত্ব বিচার করে কাজের বিন্যাস করেছি। আমরা তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তাও নিয়েছি। যেমন জিওগ্রাফিক্যাল ইনফর্মেশন সিস্টেমের মাধ্যমে গ্রাম পঞ্চায়েতের মানচিত্র অঙ্কন করেছি, অনলাইন গ্রিভ্যান্স রিড্রেসাল সিস্টেম চালু করেছি।

body1_071318070224.jpgআমরা সরকারের সব প্রকল্প সবচেয়ে ভালো ভাবে রূপায়িত করার চেষ্টা করেছি

ইতিমধ্যে অর্থ ও পরিকল্পনা সংক্রান্ত উপসমিতি পাঁচটি পঞ্চায়েত উপসমিতির জন্য বাজেট বরাদ্দ করে দেয়। আমরা ১৭টি বিষয়ের উপরে নজর দিই, এর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য দূরীকরণ, অনাহার ও দুর্ভিক্ষ দূরীকরণ, উন্নত মানের শিক্ষা সুনিশ্চিত করা, নারী-পুরুষের বৈষম্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন সুনিশ্চিত করা, নিরাপদ পানীয় জলের সুব্যবস্থা করা, নির্মল পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ প্রভৃতি। জৈব সারের উপরেও আমরা জোর দিয়েছি।

আমরা সরকারের সব প্রকল্প সবচেয়ে ভালো ভাবে রূপায়িত করার চেষ্টা করেছি। গ্যাসের সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থার উপরেও জোর দিয়েছি। নদীর চরে আমরা ম্যানগ্রোভ গাছ লাগিয়েছি, পানীয় জল আসের্নিক মুক্ত করার প্রয়াস করেছি। পচনশীলও অপচনশীল বর্জ্য ব্যবস্থাপনাতেও উদ্যোগী হয়েছি।

মহাত্মা গান্ধী জাতীয় গ্রামীণ কর্ম নিশ্চয়তা প্রকল্পের মধ্যে আমরা উদ্যানপালন, পান চাষ, মাছ ও কাঁকড়া চাষ প্রভৃতি করেছি। এই সব কাজে স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও মহিলাদের যুক্ত করেছি। তা ছাড়া স্থায়ী সম্পদ আমরা সৃষ্টি করতে পেরেছি। এই সব কাজেরই স্বীকৃতি আমরা পেয়েছি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Rabindranath Bera Rabindranath Bera

Pradhan, Digambarpur Gram Panchayat, 24 Parganas (S), West Bengal

Comment