দশ বছরেই বদলে যেতে পারে কলকাতার ঋতুচক্র, সতর্কতা দরকার এখনই

তাপীয় দ্বীপের প্রভাবে মেঘ জমলেও বৃষ্টি হচ্ছে না সে ভাবে

 |  3-minute read |   30-06-2018
  • Total Shares

পরবর্তী ১০ বছরের মধ্যেই ওলট-পালট হতে পারে বাংলা ঋতুচক্র। মানে বদলে যেতে পারে ঋতুর সময়সীমাও। হয়তো শরৎকাল জুড়ে দেখা মিলতে পারে বৃষ্টির বা বর্ষাকালে কাঠফাটা রোদ্দুর।  আর এ সব কিছুই হতে পারে ঋতুরানি বর্ষার মর্জিতে।  কিন্তু কেন? কারন হল, বিশ্ব উষ্ণায়ন ও শহুরে তাপীয় দ্বীপের প্রভাব। এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদ ও আবহাওয়াবিদদের অনেকেই। তবে বিশদ  উত্তর পেতে হলে আমাদের ফিরে যেতে হবে অন্তত ১০ থেকে ১৫ বছর আগে। 

বাংলা পঞ্জিকায় বারো মাসকে ছটা ঋতুতে মোটামুটি সমান ভাগে ভাগ করা। যার সহজ অর্থ হল, প্রত্যেক ঋতুর বাংলার বুকে থাকে দু’মাস করে। প্রত্যেক ঋতুর উপর অন্য ঋতুর প্রভাব থাকলেও, বর্ষার গুরুত্ব বা প্রভাব অন্য ঋতুর উপর তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই বেশি। তাই বর্ষার স্বভাব ও প্রকৃতি পরিবর্তনের লক্ষণ যথেষ্টই  চিন্তার কারণ।

body1_063018033224.jpg

কয়েক বছর আগেও এরকম পরিস্থিতি ছিল না। গ্রীষ্মের শেষে নিয়মিত সময়েই আগমন ঘটত বর্ষার। আর শরতের নীল আকাশ বিদায় জানাত তাকে। তবে শেষ ৫-৬ বছরে চিত্রটা অনেকটাই বদলে গেছে। পরিবর্তন হয়েছে বর্ষার আসার ও যাওয়ার সময়ের। পরিবর্তন হয়েছে বর্ষার প্রকৃতিও। এখন যেন বর্ষা অতিরিক্ত খামখেয়ালি। এ বছরও তার আগমন হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের ১৫ দিন পরে।

আকাশ কালো করা মেঘ। দিনের বেলাতেই সন্ধ্যার অন্ধকার। যে কোনও সময় শুরু হবে আকাশ ভাঙা বৃষ্টি। কিন্তু কোথায় বৃষ্টি? হালকা একটু বৃষ্টি শুরু হতে না হতেই আকাশ পরিষ্কার। পাওনা বলতে শুধু কান ফাটানো বিদ্যুতের আওয়াজ আর আলোর ঝলকানি। কিন্তু প্রকৃতির এই আমূল পরিবর্তনের কারণ কী? পরিবেশবিদ সুজীব করের মতে "শহুরে তাপীয় দ্বীপ" ও প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা পরিবেশ দূষণই এর অন্যতম মূল কারণ। এই জন্যই আকাশে যে পরিমাণ মেঘ জমছে, সেই পরিমাণ বৃষ্টি হচ্ছে না।।

body3_063018033245.jpg

সুজীব করের মতে আগে বর্ষা আসত নির্দিষ্ট সময়ে এবং তা থাকত নির্দিষ্ট সময় পর্যন্তই। তবে এখন সেটা আর হচ্ছে না। বর্ষা আসার সময় ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে। তা ছাড়া  বর্ষাকালেও স্বাভাবিক নিয়মে বৃষ্টিপাত প্রায় হচ্ছে না বললেই চলে। বেশির ভাগ সময়ই বৃষ্টিপাত হচ্ছে কোনও না কোনও নিম্নচাপ অথবা ঘূর্ণাবর্তের কারণে। ফলে কোথাও অতিবৃষ্টি আবার কোথাও বা অনাবৃষ্টি। কোথাও বন্যা, কোথাও খরা। আর বঙ্গে বর্ষার এই পইরিবর্তন কিন্তু সেই বিশ্ব উষ্ণায়ন ও বাড়তে থাকা শহুরে তাপীয় দ্বীপের প্রভাব বলেই মনে করছেন বিশিষ্ট পরিবেশবিদ সুজীব কর।

বিশ্ব উষ্ণায়ন শব্দটা পরিচিত হলেও "শহুরে তাপীয়  দ্বীপ" বিষয়টা বেশ অপরিচিত। এই বিষয়টা আগে বোঝা দরকার। যে সমস্ত শহরে নির্ধারিত পরিমাণের থেকে অনেক বেশি তাপের সৃষ্টি হয়,  মূলত তাদেরই শহুরে তাপীয় দ্বীপ বলা হয়। বিষয়টা আরেকটু সহজ ভাবে বোঝা দরকার। ধরা যাক কলকাতা একটা দ্বীপ। কলকাতার ক্ষেত্রফল হল ২১৮ বর্গকিলোমিটার। কিন্তু কলকাতা থেকে যে তাপ উৎপন্ন হয় তা ৬৩৬ বর্গকিলোমিটার ক্ষেত্রফল যুক্ত অঞ্চল থেকে  উৎপন্ন হওয়া  নির্ধারিত তাপের সমান। যার সহজ অর্থ হল, কলকাতা থেকে যে পরিমাণ তাপ উৎপন্ন হয় তা নির্ধারিত পরিমাণের প্রায় তিনগুণ। এই কারণেই কলকাতার আকাশে ঘন কালো মেঘ জমলেও সে ভাবে বৃষ্টি হচ্ছে না। শহরের কোনও কোনও অংশ যখন বৃষ্টিতে ভাসছে, ঠিক সেই সময় শহরের অপর প্রান্তে "ছিটে ফোঁটা বৃষ্টি"। 

body4_063018033257.jpg

তাই কলকাতা হল একটা "শহুরে তাপীয় দ্বীপ"। কলকাতা হল শুধুমাত্র একটা উদাহরণ, এরকম একাধিক শহুরে তাপীয় দ্বীপ রয়েছে যার কারণেই মূলত বর্ষার এই পরিবর্তন। কিন্তু কিন্তু নির্ধারিত পরিমাণের থেকে বেশি উত্তাপ সৃষ্টির কারণ কী? এর জন্য পরিবেশবিদ  ও আবহাওয়াবিদরা মূলত শহরের উল্লম্ব বিস্তারকে দায়ী মনে করছেন। মানে, যে কোনও শহরের বুকে বাড়তে থাকা উঁচু বাড়ির সংখ্যাকেই এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী মনে করছেন আবহাওয়াবিদ ও পরিবেশবিদদের অনেকেই।  আর এর ফলে  আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই আমূল বদলে যেতে পারে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও প্রকৃতি।

পরবর্তী ১০ বছরে সম্পূর্ণ বদলে যেতে চলেছে কলকাতায় বৃষ্টির প্রকৃতি ও তার পরিমাণ। শহরের উল্লম্ব বিস্তারের পরিমাণ যত বাড়বে, ততই উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাবে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ।  আবার যখন ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হবে তখন কলকাতায়  অতিবৃষ্টির কারণে বন্যা হতে পারে। যদিও এই পরিবর্তন সম্পূর্ণভাবে আটকানো  সম্ভব না হলেও কিছুটা আটকানো যেতেই পারে। তবে তার জন্য শহরে হারিয়ে যাওয়া জলাভূমি পুনরুদ্ধার ও একাধিক উঁচু ভবন তৈরি করা বন্ধ হওয়া দরকার বলেই মনে করেন পরিবেশবিদ সুজিত কর।

body2_063018033233.jpg

পরবর্তী কয়েক বছরের মধ্যেই বর্ষার প্রকৃতির পরিবর্তন, কিম্বা  বাংলা দিনপঞ্জিকায় ঋতু বিন্যাস বা সময়ের পরিবর্তন হওয়া নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয় অধিকাংশ শহরবাসীই। "দেখা যাক কী হয়" বলেই তারা এড়িয়ে গেছে বিষয়টা। তবে আজ যারা দেখা যাক বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন, আগামী কয়েক বছর বাদে কিন্তু তাঁরা এতটা হেলায় এই বিষয়টা এড়িয়ে যেতে পারবে না, কারণ প্রকৃতির পরিবর্তনের প্রভাব সব  সময় ভয়ঙ্কর। আর তাই আগাম সতর্কতা তা অবশ্যই প্রয়োজন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment