আজ বন্যপ্রাণীদের বিরুদ্ধে অপরাধ ঘটছে, কাল কিন্তু আমার আপনার বিরুদ্ধে হবে
চোরাশিকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং চোরাশিকারীরা গ্রেপ্তারও হচ্ছে, কিন্তু এই মামলায় নিতান্তই সাজা হয়
- Total Shares
সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রচারিত হয়েছে যে গত এক দশকে ৪২৯টি বাঘ ও ১০২টি গন্ডার চোরাশিকারিদের হাতে মারা গিয়েছে। বেশ কয়েকটি আরটিআইএর উত্তরে এই তথ্যটি জানা গিয়েছে।
আমি খুশি যে আমার করা এই আরটিআইগুলোর উত্তরে দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে একটি আলোড়ন সৃষ্টি করতে পেরেছে বলেছে। মানুষ আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য জীবজন্তুদের সংরক্ষণের ব্যাপারে সচেতন হয়েছে। এর ফলে কতৃপক্ষ চোরাশিকারের বিরুদ্ধে আইন আরও কঠোর করতে বাধ্য হয়েছে।
আমাদের বাস্তুতন্ত্রের উপর পরিবেশ সংক্রান্ত সমস্যা ও মানুষের স্বভাব যে কুপ্রভাব ফেলে তা নিয়ে আমি সেই স্কুল জীবন থেকেই চিন্তিত। অবশ্য এখন পরিবেশ আইন নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেখছি যে আমার এই চিন্তা একেবারেই যথাযথ ছিল।
একটি শিকার হওয়া বাঘের চামড়া দেখাচ্ছেন আধিকারিকরা [ছবি: রয়টার্স]
এই আরটিআইগুলো করার পিছনে দুটি কারণ ছিল। এক, যে পরিমাণে দেশের গুরত্বপূর্ন জীবজন্তুরা চোরাশিকারিদের শিকার হচ্ছে। দুই, চোরাশিকারীরা ধরা পড়লেও তাদের শাস্তির পরিমাণ নিতান্তই কম। প্রথমে বাঘ দিয়ে শুরু করলেও, আসতে আসতে আমি গত এক দশকে কত সংখ্যক গন্ডার, হাতি, সাদা চিতাবাঘ এমনকি মাক্যাও হনুমান চোরাশিকারিদের হাতে মারা গিয়েছে তা নিয়ে খোঁজ খবর শুরু করি।
পরিবেশ ও বন দপ্তরের অধীনে থাকা বন্যপ্রাণী নিয়ন্ত্রণ সংস্থার (ডাবলুসিসিবি) দেওয়া জবাবগুলো থেকে জানতে পারলাম যে চোরাশিকারিদের হাতে মারা যাওয়া জন্তু ও চারাশিকারীদের গ্রেপ্তারি সংখ্যার পুঙ্খনাপুঙ্খ বিবরণ তাদের কাছে থাকলও, এই মামলাগুলোর নিষ্পত্তি কী ভাবে হয়েছে তার কোনও খবরই এই দপ্তরের কর্তারা রাখেন না। এই চোরাশিকারিদের মধ্যে কতজন দোষী সাব্যস্ত হয়েছে তার কোনও হিসেবই তাঁদের কাছে নেই।
ব্যাপারটা একেবারেই উৎসাহব্যঞ্জক নয় .যতক্ষণ না পর্যন্ত চোরাশিকারিদের সাজা পাওয়ার সংখ্যা বাড়ছে ততক্ষন এই সমস্যা চলতেই থাকবে। হাজার হোক চোরাশিকারের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত অর্থের পরিমাণ কিন্তু যথেষ্ট বেশি।
বাস্তুশাস্ত্র বাঁচিয়ে রাখতে বিভিন্ন প্রজাতির জীবজন্তুদের সংরক্ষণ নিতান্তই প্রয়োজনীয়। এর মধ্যে একটি জন্তুও যদি লুপ্ত হয়ে যায় তাহলে গত বাস্তুশাস্ত্রের উপর তার নির্মম প্রভাব পড়বে।
অসমের পবিতরা অভয়ারণ্যে খুন হওয়া একশৃঙ্গ গন্ডার [ছবি: রয়টার্স]
বন্যপ্রাণীদের জীবন কী ভাবে বদলে যাচ্ছে সে সম্পর্কে মানুষ খুব একটা ওয়াকিবহাল নন।
নয়ডাতে থেকে চারপাশের আবহাওয়া বদলের ধরণ প্রযবেক্ষন করে কিংবা শীতকালে একটি গ্যাসচেম্বারের মধ্যে আবদ্ধ থেকে আমরা যে আমাদের চারপাশের বিষয়গুলো নয় চিন্তাভাবনা করব তাই স্বাভাবিক। একই সঙ্গে বন্যপ্রাণীদের জীবন বা পরিবেশ পরিবর্তন নিয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে। কারণ সরকার কিন্তু এই বিষয়ে খুব উদাসীন।
যারা আজ বন্যপ্রাণীদের বিরুদ্ধে অপরাধ নিয়ে উদাসীন তারা ভবিষ্যতে মানুষের বিরুদ্ধে সংগঠিত অপরাধ নিয়ে উদাসীন হবে না এমন নিশ্চয়তা কিন্তু নেই।
(লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে)

