শেষ নর্দার্ন হোয়াইট পুরুষ গন্ডার সুদানের মৃত্যু ভারতেরও চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াবে
অভয়ারণ্যগুলো লোকবল ও উন্নত প্রযুক্তির অভাবে ভুগছে
- Total Shares
কয়েকদিন আগে কেনিয়া সরকারের তরফ থেকে ঘোষণা করা হয়েছিল যে শেষ পুরুষ নর্দার্ন রাইনো সুদান ৪৫ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছে। সুদানের কন্যা ও নাতনি এখনও জীবিত। কিন্তু আর একটিও পুরুষ জীবিত না থাকার জন্য এই প্রজাতি এখন বিলুপ্তির পথে।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম জানাচ্ছে যে বন্যপ্রাণী ও তার দেহাংশ পাচার এখন বিশ্বের চতুর্থ লাভজনক ব্যবসা। মাদক পাচার, নারী পাচার ও অস্ত্র পাচারের পরেই এর স্থান। জীবজন্তুদের নিয়ে এই বেআইনি ব্যবসা করে বছরে ৭০ লক্ষ থেকে ২৩০ লক্ষ ডলার (৪৫ কোটি থেকে ১৪৯ কোটি টাকা) আয় করা যায়। এবার এ ব্যাপারে ভারতের অবস্থানতা দেখা নেওয়া যাক। সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের (সিএসই) সমীক্ষা অনুযায়ী ভারতে চোরাশিকারের সংখ্যা ২০১৪ থেকে ২০১৬ অবধি প্রায় ৫২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৪ তে ৪০০ টি প্রজাতির প্রাণী চোরাশিকারিদের খপ্পরে পড়েছিল। ২০১৬ তে ৪৬৫টি প্রজাতি চোরাশিকারিদের হাতে আক্রান্ত হয়েছিল।
কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কয়েকটি সংস্থা-সহ কয়েকটি বেসরকারি সংস্থাও চোরাশিকার রুখতে কাজ করেছে। তা সত্বেও চোরাশিকার বন্ধ হওয়া তো দূরঅস্ত্, প্রতি বছর শিকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
সিএসই জানাচ্ছে যে ২০১৬ সালে চোরাশিকারিরা ৫০টি বাঘ হত্যা করেছে, যা এই দশকে সর্বোচ্চ। ২০১৫ ও ২০১৬ সালে ৩৪০টি মতো ময়ূর শিকার করেছে তারা। ২০১৪ সালের তুলনায় যা ১৯৩ শতাংশ বেশি। একটি অভয়রণ্যে রেঞ্জার্সরা মাত্র একটি ছোট্ট এলাকার উপরে নজরদারি করতে পারেন। লোকবল কম, অস্ত্রশস্ত্রও আধুনিক নয় - তা সত্বেও ফরেস্ট গার্ডরা মাঝেমধ্যেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চোরাশিকারিদের পাকড়াও করে ফেলেন। কিন্তু তা যে যথেষ্ট নয় পরিসংখ্যানই এর প্রমাণ দিচ্ছে।
এর একটি বড় কারণ হচ্ছে চোরাশিকারীরাও বুদ্ধিমান। তারা জঙ্গল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল এবং বনদপ্তরের আধিকারিকদের প্রতিটি পদক্ষেপ তাদের নখদর্পনে। তাই তারা সহজেই আধিকারিকদের চোখের আড়ালে থেকে শিকার চালিয়ে যেতে পারে। তাদের অস্ত্রশস্ত্রও যথেষ্ট উন্নতমানের।
লোকবল বাড়িয়ে চোরাশিকার রোধ করা যাবে না, প্রয়োজন উন্নত প্রযুক্তির
তা হলে কী ভাবে চোরাকারবারিদের রোখা সম্ভব?
শুধুমাত্র লোকবল বাড়িয়ে চোরাশিকার রোধ করা যাবে না। এর জন্য উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন। ড্রোন, ইনফ্রা-রে ক্যামেরা, আরএফআইডি ট্যাগ, জিপিএস-এর মতো কিছু যন্ত্র অবিলম্বে প্রয়োজন। এর সঙ্গে যদি তথ্য সঞ্চয়ের মাধ্যমগুলো আরও উন্নত করে তোলা যায় তা হলেই পরিস্থিতির সুরাহা হবে। গোটা বিশ্ব জুড়েই এখন এই ধরণের প্রযুক্তির ব্যবহার চলছে।
এই প্রযুক্তির মাধ্যমে যদি তথ্য সঞ্চয় করে এবং তথ্যগুলোকে বিশ্লেষণ করে রেঞ্জারদের তড়িঘড়ি পাঠিয়ে দেওয়া যায়, তা হলে তাদেরও নজরদারি করতে সুবিধা হবে। এ ছাড়াও, চোরাশিকারিদের পছন্দের রাস্তা, কোন সময়ে তারা বেশি সক্রিয় থাকে এবং কোন ধরণের প্রাণী তাদের শিকারের লক্ষ্য তা নিয়েও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। তবে এখানেই শেষ নয়।
ভারতে বাঘ, ময়ূর, হাতি, চিতাবাঘ, কৃষ্ণসার হরিণ ও চিতল হরিণ বেশি শিকার করা হয়। তাই এই প্রযুক্তি কাজিরাঙ্গা, সুন্দরবন, কানহা, বান্ধবগড়, রণথম্ভোর, পেরিয়ার ও গির অরণ্যে অবিলম্বে প্রয়োগ করা উচিৎ।
দেখা যাক, মানুষ না পারলেও প্রযুক্তি জীবজন্তুদের রক্ষা করতে পারে কিনা।

