নগ্ন করে রাজপথে ঘোরানো হল মহিলাকে, বিহারে কি জঙ্গলের শাসন চলছে?
পাঁচ ঘণ্টা ধরে পুলিশকর্মীদের চোখের সামনেই চলল মহিলার উপর অত্যাচার
- Total Shares
সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে বিহারে নীতীশ কুমার প্রশাসনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন। কিছুদিন আগে বিহারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মহিলা ও তরুণীদের উপর যৌন লাঞ্ছনার অভিযোগ উঠেছিল। এর পর আবার ভোজপুর জেলার বিহিয়াতে এক মহিলাকে জনসমক্ষে নগ্ন করে ঘোরানোর অভিযোগ উঠল। নীতীশ কুমারের নেতৃত্ব নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দিয়েছে।
এই শেষের ঘটনাটিতে একদল লোক এক মহিলাকে মারধর করে, তাঁকে উলঙ্গ করে জনসমক্ষে রাজপথে ঘুরতে বাধ্য করিয়েছে। সন্দেহ করা হয়েছিল যে এলাকার এক তরুণের মৃত্যুর জন্যে এই মহিলাই দায়ী। এই ঘটনাটি বিহারের জনতা দল (ইউনাইটেড) সরকারকে বেশ বিপাকে ফেলে দিয়েছে।
Apologies for the graphic pic - it's pixellated but I don't usually share such a pic. How else to bring home the horror - a mob stripped, paraded and thrashed this woman in Bihiya, Bhojpur, in Bihar. She lives in a 'red light area', was falsely accused of killing a teenage boy pic.twitter.com/sKu5z5CNWu
— Kavita Krishnan (@kavita_krishnan) 21 August 2018
২১ আগস্ট সকালে রেললাইনের ধারে বিমলেশ সভের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয়রা। দোকান ও গাড়ি ভাঙচুর করে তা জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। পুলিশের একাধিক গাড়িও এই তাণ্ডবের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
এর পরেই এই মহিলার বাড়িতে চড়াও হয় উত্তেজিত জনতা। স্থানীয় লোকেদের অভিযোগ, এই মহিলাই বিমলেশকে খুন করে তাঁর মৃতদেহ রেললাইনে ফেলে আসেন যাতে ঘটনাটি দুর্ঘটনা বলে মনে হয়। অবাক করে দেওয়ার মতো বিষয় হচ্ছে যে পুলিশকর্মীদের সামনেই মহিলাকে মারধর করে উলঙ্গ করা হয়েছিল। মহিলাটিকে যখন উলঙ্গ করে রাজপথে হাঁটতে বাধ্য করা হচ্ছিল তখন পুলিশকর্মীরা ঘটনাস্থালে উপস্থিত থেকেও নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছিল।
ভোজপুর জেলাতে অপরাধমূলক কার্যকলাপ অনেকটাই বেড়ে গিয়েছে। স্থানীয়দের ক্ষোভের আসল কারণ এটাই। বিহিয়ার মতো ছোট্ট শহরেও গত কয়েকদিনে ১০টি খুনের অভিযোগ রুজু হয়েছে। এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার - রাজ্যে আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়েছে।
এই মহিলাকে নাকি প্রায় ঘণ্টা পাঁচেক ধরে উত্যক্ত করা হয়। কিন্তু সাধারণ মানুষ বা প্রশাসনের কেউই তাঁকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি।
কিন্তু নীতীশ কুমারের 'সুশাসনে' ভোজপুর জেলার ঘটনাই যে শুধু কালি ছিটিয়েছে তা নয়।
গত সপ্তাহতেই পাটনাতে ৫৮ বছর বয়সী উপসচিবকে নিজের বাড়ির সামনেই গুলি করে হত্যা করা হয়। খবরের প্রকাশ দুষ্কৃতীরা তাঁর বাড়িতে লুট করতে এসেছিল। কিন্তু কুমার বাধা দেওয়ায় তাঁকে খুন হতে হল। এই ঘটনার একদিন আগেই বৈশালী জেলাতে মহেশ সাহানি নামের রাষ্ট্রীয় লোক সমতা দলের এক আঞ্চলিক নেতা নিজের দপ্তরে খুন হন।
সম্পত্তি জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে বিহারের ভোজপুর জেলাতে [টুইটার]
এই ঘটনাগুলো এমন সময় ঘটছে যখন বিহারের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মহিলাদের উপর যৌনলাঞ্ছনার খবরে গোটা দেশ উত্তাল।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে বিহারে কি জঙ্গলের আইন চলছে?
২০০৫ সালে নীতীশ কুমার যখন মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ছিলেন তখন মোটামুটি ৭৭,০০০ অপরাধীকে হাজতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ২০১৩ সালে বিজেপির সঙ্গে জোট বাঁধার পর থেকেই নীতীশ কেমন জানি উল্টো পথের পথিক হয়েছেন।
শেষ কয়ে মাসে যে ভাবে খুন, লুঠ ও ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধি পেয়েছে তাতে সাধারণ বিহারবাসী বেশ ক্ষিপ্ত। যে ভাবে পাঁচ ঘণ্টা ধরে এক মহিলাকে উলঙ্গ করে রাজপথে ঘোরানো হল তা একেবারেই মেনে নেওয়া যায় না।
মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের উত্তর কিন্তু নীতীশকেই দিতে হবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

