নানারূপে নানা দেশে দেবী মহিষাসুরমর্দিনী

দেবী দুর্গার নামের উল্লেখ প্রথম কোথায় পাওয়া যায়, নানা দেশে তাঁর কী রূপ?

 |  3-minute read |   13-10-2018
  • Total Shares

ঈশ্বর মানেই তিনি নেশায় বুঁদ, এমনকি ঋষিদের তপস্যার ফলে ভাগ বসাতেও কুণ্ঠা বোধ করেন না, এমন উদাহরণ পর্যন্ত রয়ছে। বিপদে পড়লে তাঁরা মানুষের শরণাপন্নও হন, তেমনই এক বিপদ থেকে দেবতাদের উদ্ধার করে ফেরার পথে কণ্বের আশ্রমে শকুন্তলাকে দেখেছিলেন দুষ্মন্ত।

pic1_101418123104.jpgদেবী দুর্গা (৭ম-১০ম শতাব্দী), ভিটা বুদ্ধগয়া (ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত)

যুদ্ধের পরে অস্ত্র কোথায় রেখেছেন অনেক সময় তাও ভুলে যেতেন দেবতারা, তাঁরা এতটাই মত্ত থাকতেন। তখনও দেবকুলকে রক্ষা করতে আত্মত্যাগ করতে হয়েছিল দধিচিকে।

দেবী দু্র্গা অবশ্য ব্যতিক্রমী, নারী হয়েও তিনি শক্তির প্রতীক, তিনি বলপ্রদায়িনী। যদিও তিনি মহিষাসুরকে বলছেন, “গর্জ্জ গর্জ্জ ক্ষণং মূঢ় মধু যাবৎ পিবাম‍্যহম্।ময়া ত্বয়ি হতে হতেয়ত্রৈব গর্জিষ‍্যন্ত‍্যাশু দেবতাঃ।।” অর্থাৎ তিনি সুরা পান করছেন। হিন্দু ধর্মে নারী শক্তি পূজিতা হয়েছেন জয়ন্তী মঙ্গলা কালী ভদ্রকালী কপালিনী দুর্গা শিবা ক্ষমা ধাত্রী স্বাহা স্বধা নামে, চণ্ডীতে এই সকলকে পৃথক ভাবে উল্লেখ করে প্রণামও জানানো হয়েছে।

pic2_101418123133.jpgতৃতীয় শতকের লাল বেলেপাথরের পার্বতী (ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত)

পৃথিবীর প্রচীনতম সভ্যতার অন্যতম সিন্ধু উপত্যকা থেকে পাওয়া গিয়েছে দেবী মূর্তি, নারীমূর্তি -- তবে তা কোন দেবীর তা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন থাকতে পারে। সভ্যতার আদিকাল থেকে এ দেশে যে নারীর পুজো হয়ে আসছে, মাতৃরূপের পুজো হয়ে আসছে তা নিয়ে কোনও প্রশ্ন নেই। মায়ের পরিচয় শুধু নয়, ধাত্রী বা পালিকা মায়ের পরিচয়ও যে কত বড় তা বোঝা যায় শাক্যমুনি বুদ্ধের গৌতম নাম থেকে।

রামায়ণ অনুসারে বসন্তের বদলে শরৎকালে দেবীর বোধন করছিলেন শ্রীরামচন্দ্র। তাই ত্রেতা যুগে, মানে যখন রামায়ণ রচনা করা হয়েছিল তার আগে থেকেই এ দেশে দুর্গাপুজোর প্রচলন ছিল, তবে বসন্তকালে, দেবী বাসন্তী হিসাবে।

mamalla_dailyobangla_101418125945.jpgমমল্লাপুরমে দেবী দুর্গা ও মহিষাসুরের সংগ্রাম

ত্রেতাযুগ ঠিক কোন সময়ে সেই বিতর্কে না গিয়ে সহজ ভাবে বলা যায় যে ঋগ্বেদে দুর্গি শব্দের উল্লেখ রয়েছে, সেই দুর্গিই হলেন দেবী দুর্গা যিনি মহিষাসুরমর্দিনী রূপে পুজিতা হন এই বঙ্গদেশে।

দেবী দুর্গা তথা মহিষাসুরমর্দিনী শুধু যে এই বঙ্গদেশে পূজিতা হন তা নয়, পুরো ভারত তো বটেই, দক্ষিণ এশিয়াতেও তাঁর পূজা যে হত তা স্পষ্ট হয়ে যায় দক্ষিণ এশিয়া থেকে পাওয়া দেবী দুর্গার মূর্তি থেকে।

হাতের কাছে যত টুকু দেখা গেল, তাতে গুপ্তযুগে মৃন্ময়ী মহিষাসুরমর্দিনী পূজিতা হতেন দেশে। বুদ্ধগয়ার ভিটায় তেমন মূর্তি পাওয়াও গেছে, তা আকারে বেশ ছোট।

pic3_101418123232.jpgইন্দোনেশিয়ার জাভায় প্রাপ্ত মহিষাসুরসর্দিনী (ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত)

দক্ষিণ ভারতের মমল্লাপুরমে (খ্রিস্টাব্দ চতুর্থ শতাব্দী) মহিষাসুরের সঙ্গে দেবী দুর্গার ঘোর যুদ্ধ উৎকীর্ণ রয়েছে পাথরে। উত্তরপ্রদেশের মথুরা থেকেও লাল বেলেপাথরের একটি পার্বতীমূর্তি পাওয়া গিয়েছে যেটি সম্ভবত তৃতীয় শতকে তৈরি বলে মনে করা হয়। ইন্দোনেশিয়ার জাভা থেকে পাওয়া গিয়েছে নবম শতকের বেলে পাথরের এক দুর্গামূর্তি।

ভারতীয় জাদুঘরে রক্ষিত মূর্তিগুলির মধ্যে মানভূম থেকে প্রাপ্ত দ্বাদশ শতকের মহিষাসুরমর্দিনী মূর্তিটি বিশেষ ভাবে উল্লেখ্য। সেই মূর্তির অসামান্য কারুকাজ সত্যিই পালযুগের শ্রেষ্ঠ নিদর্শনগুলির মধ্যে একটি। এটি সাধারণ ভাবে মানভূম দুর্গা নামে পরিচিত।

dscn7243_101418125014.jpgমানভূম থেকে প্রাপ্ত দ্বাদশ শতকের মহিষাসুরমর্দিনী (ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত)

দেবী দুর্গার কয়েকটি প্রথাভাঙা রূপেরও সন্ধান পাওয়া যায়। সাধারণ ভাবে যে পৌরাণিক তত্ত্ব সকলে জানি তাতে ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরের মিলিত শক্তি থেকে দেবী দুর্গার উৎপত্তি। অন্য একটি মতে তিনি হিমালয়ের কন্যা পার্বতী, কখনও তিনি প্রজাপতি দক্ষরাজের কন্যা। তবে এমন মূর্তিও পাওয়া যায় যেখানে দেবী দুর্গা মাতৃরূপী এবং পাশে রয়েছেন সদ্যোজাত দেবাদিদেব, যিনি নিজেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন, অর্থাৎ স্বয়ম্ভু।

dscn7241_101418125049.jpgগৌরী ও সদ্যোজাত শিব, একাদশ শতকের মূর্তি, আনুমানিক একাদশ শতাব্দী, গঙ্গারামপুর (ভারতীয় সংগ্রহালয়ে রক্ষিত)

বঙ্গে দেবীর প্রধানত তিন ধরনের পুজো প্রচলিত আছে: পটপুজো, ঘটপুজো ও মূর্তিপুজো। পটপুজো হোক বা মূর্তিপুজো – ঘট আবশ্যিক। ঘটেই দেবীর অধিষ্ঠান। খড় ও মাটি দিয়ে তৈরি প্রতিমা পুজো শুরু আগে মূলত পটপুজোরই প্রচলন বেশি ছিল, যদিও ঘটপুজোও হত। এখনও বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন দেবীর শুধুমাত্র ঘটপুজোই দেখা যায়, যেমন হাওড়া জেলায় কাঁঠালেমনসা, যদিও তিনি দুর্গা নন, স্থানীয় লৌকিক দেবী।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment