গুরুসদয় মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে অতীতকে জানার একটা রাস্তা বন্ধ হয়ে যাওয়া
ভয় হয়, এটাই দৃষ্টান্ত হবে না তো অন্য মিউজিয়ামগুলোকে বন্ধ বা পঙ্গু করার?
- Total Shares
গুরুসদয় মিউজিয়াম যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাতে কার কী যায় আসে?
যায় আসে, অবশ্যই যায় আসে- অনেকেরই যায় আসে। ভাবুন যাঁরা মিউজিয়ামকে ভালোবেসে চাকরি করতে এসেছিলেন, সেই দশটা পরিবার - তাঁদের কী হবে? তাঁদের সামনে বেঁচে থাকার রাস্তাটা কেমন হবে? তাঁরা পেটের দায়ে, বাঁচার তাগিদে মিউজিয়াম ছেড়ে চলে যাবেন বা বলা ভালো চলে যেতে বাধ্য হবেন না তো!
একটা মিউজিয়াম, সেখানে যে সম্পদ আছে তা দুর্মূল্য এবং দুষ্প্রাপ্য। এই সম্পদ সংগ্রহের পিছনে অনেক পরিশ্রম, অধ্যাবসায় আর ভালোলাগা জড়িত। একটা মিউজিয়ামকে বন্ধ করে দেওয়া মানে সেই পরিশ্রম, সেই অধ্যাবসায়, সেই ভালোলাগাকে সম্মান না দেওয়া, মূল্য না দেওয়া।
ছবি সৌজন্য: ফেসবুক
মিউজিয়ামের একটা বৃহত্তর ব্যপ্তি আছে। মিউজিয়ামে সাধারণ ভাবে যে সামগ্রী রাখা থাকে তা ইতিহাসের সাক্ষ্য-প্রমাণ। এই প্রমাণ থেকেই আমরা আমাদের ইতিহাস সম্পর্কে সজাগ হই, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করি। যে কোনও গবেষণায় এই পুরোনো নথির প্রয়োজনীয়তা থাকে। ফেলে আসা অতীতের পথই সামনের রাস্তার সঠিক দিশা দেয়। তাই মিউজিয়াম বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে অতীতেকে দেখার আর একটা দরজা বন্ধ হয়ে যাওয়া।
যাঁদের অর্থানুকূল্যে এই মিউজিয়াম চলছিল তাঁদের একদিন ইচ্ছে হলো অর্থদান বন্ধ করে দেবেন- করতেই পারেন কিন্তু রাষ্ট্রের কি কোনও দায়বদ্ধতা নেই সেই মিউজিয়ামের প্রতি? সমাজের প্রতি। মিউজিয়াম সমাজের প্রতিভূ। রাষ্ট্র যদি না চায় তবে রাজ্যের উচিত এগিয়ে আসা। রাজ্য যদি অনীহা প্রকাশ করে তবে আমাদের উচিত পাশে থাকা। আমরা দায়বদ্ধ সমাজের কাছে। মিউজিয়াম সমাজের মুখ। সমাজ গঠনে মিউজিয়ামের ভূমিকা প্রশ্নাতীত। তাই নাগরিক হিসাবে, সামাজিক দায়িত্ব বোধে, যে কোনও মূল্যে মিউজিয়ামকে টিকিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্য। গুরুসদয় মিউজিয়াম রত্নের সম্ভারে সজ্জিত। তার সঙ্গে জড়িয়ে আছে এই বাংলার গৌরব গাথা। অনেক ভাবনা নিয়ে বহু পরিশ্রম করে যত্নে গড়ে তোলা হয়েছিল এই সংগ্রহালয়। আমরা সক্কলে যদি এগিয়ে আসি তাহলে নিশ্চই বাধা মুক্ত হবে এই মিউজিয়াম। চলার পথের অর্থাভাব দূর হবে। আমি জানি অনেকের মধ্যেই রয়েছে এগিয়ে আসার তাগিদ।
আর একটা কথা। গুরুসদয় মিউজিয়াম যদি বন্ধ হয়ে যায়, ভয় হয়, এটাই দৃষ্টান্ত হবে না তো অন্য মিউজিয়ামগুলোকে বন্ধ বা পঙ্গু করার। হবে না তো আপনার সাধের, আপনার পাশের, আপনার কাছের মিউজিয়ামটার একই পরিণতি। ভয় হয়। তাই আসুন যে কোনও মূল্যে বন্ধ করি এই ‘বন্ধ-বন্ধ’ খেলা।

