প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার সঙ্গে নিক জোনাসের বাগদান নিয়ে আমি খুশি নই কেন

বিয়ে হয়ে যাওয়ার জন্য কি বলিউড বহু প্রতিভা হারায়নি?

 |  5-minute read |   25-08-2018
  • Total Shares

আমাকে যেন ভুল বুঝবেন না।

মার্কিন গায়ক নিক জোনাসের সঙ্গে বিয়ে হচ্ছে প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার, সব ভারতীয়র কাছেই এটা সত্যিই আনন্দের মুহূর্ত। প্রিয়াঙ্কার জনপ্রিয় গানগুলোর সঙ্গে বল্লে বল্লে বলে একবার কোমর দুলিয়ে নিন, তবে আপনাদের এই আনন্দোৎসবে যেন আমার যোগদান আশা করবেন না।

আমি বরং আমার ঘরের কোনও অন্ধকার স্থানে একগেলাস গাঢ় রঙের ওয়াইন নিয়ে বসে এক ফোঁটা কি দু-ফোঁটা চোখের জল ফেলব কারণ বলিউড তার অন্যতম সেরা প্রতিভাকে হারাতে চলেছে... বিবাহের জন্য।

ভারতের যে কোনও বিবাহিতা মহিলার কাহিনি সম্ভবত এমনই; পার্থক্য একটাই, সে সব নিয়ে আমরা সত্যিই কোনও কথা বলি না। তবে আজ যখন প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার বিয়ে হচ্ছে তখন আমরা সত্যিই এই ঘোর বাস্তবকে আর কোনও ভাবে ধামাচাপা দিয়ে রাখতে পারছি না।

chopra-1_082518065040.jpg প্রিয়াঙ্কা চোপড়া হয়ে যাবেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস এবং বলিউড তাঁকে আগের চেয়ে কম পাবে, এটা বুঝে কী ভাবে আনন্দ করব?

লস এঞ্জেলেসের পার্টি সার্কিটের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মিসেস জোনাসের চেয়ে আমার কাছে অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা চোপড়া অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যদি বলিউড তাঁকে হারিয়ে ফেলে তা হলে সেই দুঃখ ঢাকতে পারবে না বিয়ের কোনও সানাই-ই।

আমাকে ভুল বুঝবেন না, আমাকে শুধু আমার কথাগুলো বলতে দিন, আমার যুক্তিগুলো বোঝাতে দিন।

বলিউডে আজ অবধি যত প্রতিভা দেখেছে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া তার মধ্যে নিঃসন্দেহে বড় এক প্রতিভা, সেই প্রতিভার বহু স্বীকৃতি তিনি পেয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে জাতীয় পুরস্কার (এবং পদ্মশ্রী)। চলচ্চিত্রের একজন ছাত্র হিসাবে সত্যিই আমি ওঁর বিয়ে নিয়ে বিন্দুমাত্র ভাবিত নই। আমি শুধু ভাবিত, তিনি যেন বিয়ের পরে তাঁর পেশাজীবন শেষ করে না দেন বা সেদিকে গুরুত্ব দেওয়া কমিয়ে না দেন।

তবে এখনকার মতো গতিতে কাজ করে যাওয়া শুধু অসম্ভবই নয়, এর জন্য অতিমানবিক ক্ষমতা প্রয়োজন হয়। তাঁর আগে অন্য কেউ তা করে দেখাতে পারেননি।

যখন কর্মস্থলে আসতে গেলে আপনাকে বিশ্বের অর্ধেকটা পাড়ি দিতে হবে তখন আশাই করা যাবে না যে আপনি নিয়মিত ভাবে আপনার কর্মস্থলে আসবেন।

chopra-2_082518065119.jpg ঘটক (১৯৯৬) ছবিতে আমরা শেষ বার মীনাক্ষীকে দেখেছি, তারপরে তিনি পাকাপাকি ভাবে মার্কিন মুলুকে চলে যান

মীনাক্ষী শেষাদ্রি, পুজা বাত্রা, সোনু ওয়ালিয়া, মুমতাজের মতো প্রতিভাধর বহু অভিনেত্রীই বিয়ের পরে বিদেশে পাকাপাকি ভাবে রয়ে গেছেন। কেউই বিয়ের পরে বলিউডে তাঁদের অভিনয় জীবন ধরে রাখতে পারেননি এবং শেষপর্যন্ত চলচ্চিত্র জগৎও তাঁদের বিদায় জানিয়েছে।

কোনও কোনও অভিনেত্রী অবশ্য নিনজার মতো চেষ্টা করেছেন, যেমন মাধুরী দীক্ষিত ও শিল্পা শেট্টি। তাঁরা ভারতে পাকাপাকি ভাবে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন।

এই দুই ক্ষেত্রেই তাঁদের স্বামীরা বলিউডে স্ত্রীর পেশাজীবনের কথা বিবেচনা করে ভারতে পাকাপাকি ভাবে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন। এই দুই অভিনেত্রীই নিয়মিত বিদেশে যাতায়াত করেন, তবে তাঁদের বাড়ি বলতে যা বোঝায় (সন্তান-সহ) তা মুম্বইয়েই।

তাঁরা কেন ফিরে আসার কথা ভাবলেন?

মাধুরী দীক্ষিত যখন তাঁর স্বামী ও সন্তানদের নিয়ে পাকাপাকি ভাবে মুম্বইয়ে চলে আসার সিদ্ধান্ত নেন, মনে আছে তখন এ কথা আমি তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। অন্তত এক দশক আগের সেই কথোপকথন এখনও প্রাসঙ্গিকতা হারায়নি। মাধুরী সে দিন স্বীকার করেছিলেন যে, যখন তিনি মুম্বইয়ের ও তাঁর কাজের অভাব বোধ করছিলেন তখন একটা সময়ের পরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জীবন ভালো লাগছিল না। তারপরে একসময় তিনি তাঁর স্বামীর সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলা শুরু করলেন আর তাঁর স্বামীও তাঁর সমস্যা বুঝে তা মেনে নেন।

মাধুরীর কথায়, “আমাদের মধ্যে এ নিয়ে তখন নিয়মিত আলোচনা হত। ভারত ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে কোথায় কী সুযোগ আছে তা নিয়ে আমাদের আলোচনা হত। আমরা চাইতাম আমাদের সন্তানরা যেন আমাদের শিকড়ের কাছে ফিরতে পারে। এক সময় আমরা সিদ্ধান্তে উপনীত হলাম যে আমরা যদি মুম্বইয়ে ফিরে আসি তা হলে আমাদের খুব একটা কিছু হারাতে হবে না, কোনও কিছুর অভাবও তেমন বোধ করব না। সত্যি কথা বলতে কী পার্থিব ও অপার্থিব অনেক সুবিধাই পেয়েছি। একটা পার্থিব সুবিধা হল আমি আবার আমার পেশাজীবন শুরু করতে পেরেছি। গৃহবধূর কাজ ছাড়া ওখানে (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র) আমার কোনও কিছুই করার ছিল না। যখন আপনার সব সহকর্মীরা ঘুমাচ্ছেন তখন আপনি জেগে আছেন বলে কাজ করছেন এটা সম্ভব নয় (উনি দুই দেশের সময়ের পার্থক্য বোঝাতে চেয়েছেন)। এক সময় তাঁর পরিবারের সকলকে নিয়ে মুম্বইয়ে চলে আসার ব্যাপারে রাজি হয়ে গেলেন ডক্টর নেনে। খুব কঠিন সিদ্ধান্ত ছিল, তবে এমন সিদ্ধান্তে আমি খুবই খুশি হয়েছিলাম।”

মাধুরীর জীবন অকল্পনীয় ভাবে মোড় নেয়, এখন এ দেশের টেলিভিশনের পর্দায় তাঁর উপস্থিতির যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে, তিনি বহু ব্র্যান্ডের বিজ্ঞাপনও করছেন। তাঁর ও ডক্টর নেনের সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণিত হয়েছে। ভারতে ফিরে এসে তাঁদের কোনও কিছু হারাতে হয়নি, উল্টে তাঁরা যা পেয়েছেন তা এককথায় বিপুল।

যদি শিল্পা শেট্টিকে একই প্রশ্ন করা হয়, তা হলে হয়তো একই রকম উত্তর পাওয়া যাবে।

chopra-3_082518065204.jpgশিল্পা শেট্টি ভারতে ফিরে বলিউডে তাঁর যাত্রা নতুন করে শুরু করেছেন

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কাজ করে যাওয়া সত্যিই কঠিন, কারণ কোনও আলোচনায় যোগ দিতে হলে ২০ ঘণ্টার পথ পার করে মুম্বইয়ে আসতে হবে, আপনি বহু হাজার মাইল দূরে আছেন ও এমন একটি জায়গায় আসছেন যে জায়গাটি অন্তত ১২ ঘণ্টা এগিয়ে, তাই প্রযোজককেও তাঁর পুরো দলবল নিয়ে সেই সময় হিসাব করে চলতে হবে।

বিশ্বাস করুন, এটা কোনও ভাবেই সম্ভব নয়।

আপনাকে নিয়ে চলতে চাওয়ার করার অর্থ অসম্ভব ও অবাস্তবের পথে চলা, তাই প্রযোজকও আপনার পরিবর্ত ভাবতে শুরু করে দেবে। আপনার পরিবর্ত হিসাবে অন্য কোনও অভিনেত্রীকে দিয়ে কাজটি করিয়ে নেওয়া হবে। সেই অভিনেত্রী ও তাঁর ভক্তরা ছাড়া কারও কোনও ক্ষতি হবে না।

বিয়ের পরে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলিউডে তাঁর কাজকে বিদায় জানাচ্ছেন, এটা দেখতে আমার মোটেই ভালো লাগবে না।

chopra-4_082518065234.jpgমার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জীবন একসময় মাধুরী দীক্ষিতের আর ভালো লাগছিল না

আমি জানি যে বিয়ের পরে একজন মহিলা তাঁর পেশাকে বিদায় জানিয়ে স্বামীর ঘরকে নিজের ঘর বলে নেবেন, ভারতে এটা খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।

তবে এখন ভারতে অনেক পরিবর্তন ঘটেছে। ভারতে স্ত্রীর পেশাজীবনের কথা ভেবে অনাবাসী ভারতীয়রা বিদেশে তাঁদের সফল পেশাজীবন ছেড়ে দিয়ে ভারতে ফিরছেন।

প্রিয়াঙ্কা চোপড়া কেন ব্যতিক্রমী হবেন?

আমি যখন দেখব যে বিয়ের পরেও প্রিয়াঙ্কা চোপড়া বলিউডে তাঁর অভিনয়জীবন শেষ করে দিলেন না, তখনই আমি উৎসবে মাতব। সোনম কাপুরের ক্ষেত্রেও তাই।

মাফ করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আপনাদের আনন্দোৎসবে যোগ দিতে পারছি না।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment