যাঁরা পশুদের কোনও ভাবেই আঘাত করেন না তাঁরাই ভিগান, লড়েন প্রাণীদের অধিকার নিয়ে

মানুষের বিরুদ্ধে অন্যায়ের শাস্তির বিধান রয়েছে, অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রে সেই বিধান নেই

 |  3-minute read |   28-05-2018
  • Total Shares

আমাদের দেশে বিশুদ্ধ শাকাহারী ব্যাপারটা বেশ পুরোনো হলেও 'ভিগান' তুলনামূলক ভাবে একটা নতুন কথা। ১৯৪৪ সালে ডোনাল্ড ওয়াটসন 'ভিগান' বা 'ভিগানিজম' কথাটি প্রথম ব্যবহার করেন।

যাঁরা প্রাণীরক্ষার অধিকারের কথা বলেন তাঁদের ভিগান বলা হয়। ভিগানদের মতে প্রাণীকে আঘাত করে কোনও ভাবেই মানুষের কাজে লাগানো উচিৎ নয়, সেটা খাবার থেকে শুরু করে পোশাকআশাক, ওষুধ, সাজগোজের সামগ্রী, বিনোদন বা গবেষণা যাই হোক। তাই একই কারণে ভিগানরা মাছ-মাংস তো দূরের কথা, ডিম এবং দুগ্ধজাত কোনও ধরণের খাবারদাবার খায় না। এখানে একটা কথা উঠে আসে সেটা হল 'আনবায়াসড জাসটিস্' কিংবা পক্ষপাতহীন বিচার। ভারতীয় সংবিধানে মানুষের বিরুদ্ধে কোনও অন্যায়-অবিচার হলে শাস্তির বিধান রয়েছে, কিন্তু সেখানে পশুপাকির বিরুদ্ধে হওয়া অন্যায়ের কোনও প্রতিকারের কথা বলা নেই। তবে আমরা বিশ্বাস করি, মানুষের বিরুদ্ধে কোনও রকম অন্যায়ের যেমন প্রতিকার বা প্রতিবাদের প্রয়োজন, ঠিক একই ভাবে পশুপাখিদের বিরুদ্ধে অন্যায় হলে সেটা নিয়েও সরব হতে হবে। এই সব অবলা প্রাণীর সহমর্মিতার প্রয়োজন। যেহেতু এরা কথা বলতে পারে না সেই জন্য, এদের সাহায্যের জন্য মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রাণীদের কষ্ট লাঘব করার দিকেই আমরা নজর দিচ্ছি।

body4_052818072551.jpgপশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত আমাদের ২০০ জন মতো সদস্য

রবিবার সেই ভেগান ইন্ডিয়া মুভমেন্ট সংগঠনের পঞ্চম অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে। একসঙ্গে ৬০টি শহরে আমরা মৌনমিছিল আয়োজন করেছিলাম। রেস্তোরাঁ ও কষাইখানাগুলোর সামনে সমবেত হওয়া ও কষাইখানাগুলোতে কী ভাবে পশু হত্যা করা হয় তার বিভিন্ন ছবি দেখানোর মতো পদ্ধতি অবিলম্বন করে আমরা ভিগানরা নীরব প্রতিবাদ করি। প্ল্যাকার্ড ও পোস্টার হাতে 'কল ফর মার্সি' ক্যাম্পেনটির জন্য কলকাতার সমস্ত ভেগানরা এদিন কসবা এলাকায় সমবেত হয়েছিলাম।

শহরে এই ভিগান ইন্ডিয়া মুভমেন্টটি খুব একটা পুরোনো না হলেও ইতিমধ্যেই প্রাণী হত্যা ও প্রাণীদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন বহু মানুষের মনকে নাড়া দিযেছে। এখানে আলতাব হোসেনের হাত ধরে আন্দোলনটি শুরু হয়।সারা পশ্চিমবঙ্গে এখনও পর্যন্ত আমাদের ২০০ জন মতো সদস্য।

body2_052818072704.jpgবাইরের দেশগুলো এই বিষয়টা নিয়ে বেশ অনেকদিন হল সচেতন হয়েছে

পশুপ্রেমের দিকটা তো রয়েছেই সঙ্গে রয়েছে পরিবেশ বাঁচানোর দিকটাও। আমরা চামড়ার কোনও কিছু ব্যবহার করি না কিংবা আমরা মৌমাছি থেকে যেই মোম তৈরি হয় তারও বিরোধিতা করি।

আমার ভিগান হওয়ার কারণটা বেশ অন্যরকম। আমার মা-বাবা দুজনেই প্রাণী রক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে সবসময় যুক্ত ছিলেন বলে আমিও খুব ছোটবেলা থেকে পশুপাখিদের অধিকার নিয়ে কাজ করছি। একবার একটি মিছিলে আমাকে একজন সহকর্মী হঠাৎই জিজ্ঞেস করেন, "আচ্ছা তুমি কি নিরামিষাশী?" উত্তরে আমি না বলি। তখন তিনি আমাকে বলেছিলেন, "কী অদ্ভুত! তুমি নিজেকে পশুপ্রেমী বলো অথচ তুমি তাদের কেটে তাদের মাংস খাও?" তাঁর ওই কথাটা আমাকে সেদিন খুব নাড়া দিয়েছিল। তারপর কিছুটা সময় লাগলেও আমি এখন একজন সম্পূর্ণ নিরামিষাশী পশুপ্রেমী।

বাইরের দেশগুলো এই বিষয়টা নিয়ে বেশ অনেকদিন হল সচেতন হয়েছে কিন্তু আমাদের দেশকে এখনও আরও বেশি সচেতন হতে হবে। যদিও সোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্যে ক্রমশ আমাদের সংখ্যা বাড়ছে। 

body3_052818072727.jpgসোশ্যাল মিডিয়া ও অন্যান্য মাধ্যমের সাহায্যে ক্রমশ এঁদের সংখ্যা বাড়ছে

বিভিন্ন সময় ভিগানরা কী খান বা তাঁদের কী খেতে নেই কিংবা তাঁরা অপুষ্টির জন্য অসুস্থ হয় পড়তে পারে - এই সব নানা বিষয়ে অনেক তর্ক-বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বলি ভেগানদের খাদ্যাভ্যাস আর পাঁচজনেরই মতো। শুধু পার্থক্যটা হল একটা জায়গাতেই আমরা নিরামিষাশী এবং আমরা মাছ, মাংস, ডিম কিংবা দুধ থেকে তৈরি -মাখন, ঘি, পনির বা ছানা আমরা খাই না। ঠিক একই ভাবে আমরা মধুও খাই না। নিরামিষাশী বললে অনেকেই মনে করেন পেঁয়াজ বা রসুনে বাঁধা কিন্তু তেমনটা নয়।

সচেতনতার একটা মূল ভাবনা হিসেবে আমরা সবাইকে বলি চামড়া বা প্রাণী থেকে যে সব জিনিস তৈরি করা হয় সেই সব জিনিস ব্যবহার না করে তার বিকল্প বা কৃত্রিম জিনিস ব্যবহার করতে। অবশ্য অনেকেই বলেন এই যে আমরা মাংস খাই না বরং শাক-সবজি খাই তাহলে গাছেরও তো প্রাণ আছে। তাহলে আমরা যখন ফলমূল বা শাক-সবজি খাই সেটাও তো তুলতে গেলে গাছের আঘাত লাগছে। আপনি একটা বাচ্চার সামনে একটা আপেল কাটতে পারবেন কিন্তু একটা বাচ্চা বা একজন বড় ব্যক্তির সামনে একটা ভেড়া বা ছাগলকে কাটতে পারবেন কী?

body1_052818072619.jpgমৌমাছি থেকে যেই মোম তৈরি হয় তারও বিরোধিতা করি

আমাদের এই আন্দোলনে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন যেমন আমাদের সাহায্য করে সরকারের তরফ থেকেও বিভিন্ন সাহায্য আমরা পাই। সচেতনতার অঙ্গ হিসেবে আমি যেখানে যাই সেখানে পাড়ার সারমেয়দের টিকা দেওয়ানো ও নির্বীর্যকরণের কথাও বলে থাকি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

AHANA DASGUPTA AHANA DASGUPTA

VEGAN | ANIMAL RIGHTS ACTIVISTS

Comment