পাঁচ রাজ্যের ফল বাংলাকে প্রভাবিত করবে না, লোকসভা ফলেও হেরফের ঘটাবে না

তৃণমূল কংগ্রেসের মস্ত সুবিধা, রাজ্যের অধিকাংশ পঞ্চায়েত তাদের দখলে

 |  3-minute read |   11-12-2018
  • Total Shares

পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হল মঙ্গলবার। ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এটাই শেষ বিধানসভা নির্বাচন। ফলে, এই পাঁচটি বিধানসভা নির্বাচনের গুরুত্ব অপরিসীম। লোকসভা নির্বাচনের অঙ্ক যে এই পাঁচটি নির্বাচনের ফলের উপর অনেখানি নির্ভর করবে তা বলাই বাহুল্য। বস্তুত, এই ফলাফলের পর এবার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা নেত্রীরা আলোচনায় বসবেন। সাধারণ নির্বাচনে কার সঙ্গে জোট বাঁধবেন বা কার সঙ্গে জোট বাধা যাবে না তা অঙ্ক কষে ঠিক করে নেওয়া হবে।

গোটা দেশের সঙ্গে অঙ্ক কষা চলবে পশ্চিমবঙ্গেও। বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরমহলে। তৃণমূল নেত্রী এবার কী করবেন? আঞ্চলিক দলগুলোকে নিয়ে জোট বাঁধবেন কি? ইতিমধ্যেই রাজধানী নয়াদিল্লিতে ২১ দলের বৈঠকে তিনি যোগ দিয়েছেন সে ক্ষেত্রে, তাঁর সেই 'একের-বিরুদ্ধে-একের' ফর্মুলার কী হবে? রাজনৈতিক হিসেবে কষা এই শুরু হল বলে।

এই রাজনৈতিক অঙ্ক কষে জোট বাঁধলে ফল ঘোষণার পরবর্তী অধ্যায়ে হয়ত সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা যাবে। কিন্তু তার আগে লোকসভা নির্বাচনে তো ভালো ফল করতে হবে দলগুলোকে। আর, ভোট দেবেন ভোটাররা। এখানেই একটি বড় প্রশ্নের উদয় হচ্ছে। যে রাজ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে না সেই রাজ্যের ভোটাররা এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের ফলাফলে কতটা প্রভাবিত হবে?

পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে বলা চলে, এই ফলাফল কোনও প্রভাবই ফেলবে না এ রাজ্যের ভোটারদের মধ্যে।

body_121118024049.jpgঅন্য রাজ্যের বিধানসভার ফলাফল এ রাজ্যের ভোটারদের উপর পড়বে না [ছবি: পিটিআই]

কেন? এবার সেই প্রশ্নের উত্তরে আসা যাক।

প্রথমে আসা যাক গ্রাম বাংলার কথায়। রাজ্যের গ্রামাঞ্চলে ফ্লোটিং ভোটারের সংখ্যা অনেকটাই কম। অর্থাৎ, ভোটাররা কোনও না কোনও রাজনৈতিক দল দ্বারা প্রভাবিত। এই ভোটাররা রাজস্থান বা ছত্তিসগড়ের ভোটের ফল নিয়ে চিন্তিত নন। ইভিএম মেশিনে বোতাম টেপার আগে তারা শুধুমাত্র এলাকা বা অঞ্চলের উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়। শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের সুবিধা এখানেই। রাজ্য শাসনের পাশাপাশি রাজ্যের অধিকাংশ পঞ্চায়েতেই তাদের দখলে। এর পরে গ্রাম বাংলার ভোটারদের যদি প্রভাবিত না করতে পারে তাহলে তা তৃণমূলের ব্যর্থতা। আশা করা যায় এত বড় ভুল তৃণমূল কংগ্রেস করবে না।

তৃণমূলের সমস্যা রয়েছে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে। এই যে অমিত শাহ কথায় কথায় বিজেপি বাংলা থেকে কটা আসন জিতবে তা ঘোষণা করে দিচ্ছেন তার অনেকটাই কিন্তু সীমান্তবর্তী এলাকাগুলো বা আসনগুলোর কথা মাথায় রেখে। এই এলাকাগুলোর প্রধান সমস্যা অনুপ্রবেশ। আর স্থানীয়রা মনে করেন অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ তৃণমূল। বরঞ্চ, ভারতের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যদি একটি দলও পারে অনুপ্রবেশ রুখতে তাহলে তা শুধুমাত্র বিজেপিই পারবে। সুতারং, সীমান্তবর্তী এলাকার এক বড় সংখ্যক ভোটারদের ভোট বিজেপির পক্ষেই যাবে। তা, বিজেপি এই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনে যাই ফল করুক না কেন।

body1_121118024202.jpgতৃণমূলের সবচাইতে বড় সুবিধা পঞ্চায়েত তাদের হাতে [ছবি: রয়টার্স]

শহরের ভোটাররা অবশ্য বরাবরই বিরোধীদের ভোট দিতে পছন্দ করেন। ভরা বামফ্রন্টের বাজারেও কলকাতা ও শহরতলির লোকসভা ও বিধানসভা আসনগুলোতে ভালো ফল করে এসেছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস। ২০১১ সালে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর এই ধারার যে খুব একটা অন্যথা হয়নি তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছিল ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ও ২০১৬ সালের বিধানসভার নির্বাচনে। এই দুটি নির্বাচনেই প্রায় সবকটি আসনেই দু'নম্বরে চলে এসেছে বিজেপি।

শহরাঞ্চলের বিজেপির ভোট উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাওয়ার আরও একটি কারণ রয়েছে - অবাঙালি ভোটার, বিশেষ করে বিহার বা উত্তরপ্রদেশের ভোটার। আর, একটা কথা নিঃসংকোচে বলে ফেলা যায়। এই ভোটাররা কিন্তু লোকসভা নির্বাচনেও বিজেপিকে ভোট দেবে।

সুতরাং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাহুল গান্ধী, কে চন্দ্রশেখর রাও বা অমিত শাহরা পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনের পর নিজেদের অস্তিত্বের জন্যে গুটি সাজাতেই পারেন। এই পাঁচ রাজ্যের ফল কিন্তু বাংলার ভোটারদের উপর প্রভাব ফেলবে না, লোকসভার সম্ভাব্য ফলেও খুব একটা হেরফের ঘটাবে না।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment