পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোট: তিনটি সম্ভাব্য ফল এবং বিজেপি কেন চিন্তায়

হেরে গেলে বিজেপির ‘অপ্রতিরোধ্য’ তকমাটাই খসে যাবে

 |  3-minute read |   27-11-2018
  • Total Shares

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়, রাজস্থান, তেলঙ্গনা এবং মিজোরামের নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ – মোটামুটি ভাবে ২০১৯ সালের আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের সেমি ফাইনাল হিসাবেই এই নির্বাচনগুলিকে লোকে দেখছে।

মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানে কংগ্রেস বনাম বিজেপির দ্বৈরথ মোটামুটি ভাবে নিয়ম হয়ে গেছে। তবে এবারে ছত্তিশগড়ে বহুজন সমাজ পার্টি এবং জন কংগ্রেস (যোগী) জোট এবং মধ্যপ্রদেশে বহুজন সমাজ পার্টির উপস্থিতি এবারের ভোটযুদ্ধে অন্য মাত্রা যোগ করেছে।

chhattisgarh-inside__112718075537.jpg ছত্তিশগড়ে ভোটগ্রহণ হয়ে গেছে, অন্য রাজ্যগুলিতে ভোটগ্রহণ হয়ে যাবে আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে (ছবি: পিটিআই)

তেলঙ্গনায় টিআরএস (তেলঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতি) এবং কংগ্রেস পরিচিলক জোটের সরাসরি লড়াই হচ্ছে, কংগ্রেসের জোটে রয়েছে তেলুগু দেশম পার্টি এবং বামেরা।

মিজোরামে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই কংগ্রেস, মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্ট এবং মিজো ন্যাশনাল কনফারেন্সের মধ্যে।

রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন যে প্রতিটি দলই কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়েছে। মধ্যপ্রদেশ এবং ছত্তিশগড়ে সূচ্যাগ্র মেদিনী না ছেড়ে লড়াই করছে কংগ্রেস। উল্টোদিকে বিজেপি চেষ্টা করছে টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকায় যে প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলা করতে।

রাজস্থানে বসুন্ধরা রাজের নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে এখন প্রবল প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া। তাঁর জনপ্রিয়তা এখন একেবারেই তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই অবস্থায় চেষ্টার কোনও ত্রুটি রাখছে না কংগ্রেস।

মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থানে কংগ্রেসের সুবিধা হল এই দুই রাজ্যে তাঁদের বেশ কয়েকজন করে জনপ্রিয় ও একই সঙ্গে প্রভাবশালী নেতা আছেন – যে সুবিধাটি কংগ্রেস ছত্তিশগড়ে পাচ্ছে না। তাই এই রাজ্যে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী নিজেই ভোটারদের মন গলানোর চেষ্টা করেছেন।

leaders_112518054500_112718075617.jpgরাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশের সুবিধা হল, রাজ্যে জনপ্রিয় নেতানেত্রীরা আছেন (ছবি: পিটিআই)

মধ্যপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহ্বান নিজেই একজন ব্র্যান্ড হয়ে উঠেছেন। ১৫ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার পরেও এতদিনের প্রতিষ্ঠানবিরোধী হাওয়া থাকা সত্ত্বেও তিনি এখনও জনপ্রিয় নেতা। তাঁর নিজের আবেদনের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আবেদন তাঁকে জিততে সাহায্য করতে পারে।

মধ্যপ্রদেশে এখন অবশ্য নরেন্দ্র মোদীর জনসভায় যে লোক কমে গেছে তা চোখে দেখেই বোঝা যাচ্ছে। তাই এই ভোটে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্যক্তিগত মোহিনী ক্ষমতাও এখন চ্যালেঞ্জের মুখে।

অন্য দিকে রাহুল গান্ধীর গ্রহণযোগ্যতা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে। অন্য বিষয়ের সঙ্গে গণমাধ্যমের একাংশের জন্য রাহুল গান্ধীর যে নেতিবাচক ভাবমূর্তি গড়ে উঠেছিল সেই নেতিবাচক ভাবমূর্তি ভেঙে দ্রুত বেরিয়ে আসছেন রাহুল গান্ধী।

এই পরিস্থিতিতে কোনও রাজনৈতিক দলই আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে দাবি করতে পারবে না যে তারাই জিতছে। অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষকই মনে করছেন যে নির্বাচনে মিশ্র ফলাফল হতে চলেছে।

এই ধরনের ফলাফলের প্রভাব কেমন হবে?

দুই জাতীয় দলের কাছে তেলঙ্গানা ও মিজোরামের থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ হল মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় এবং রাজস্থানের ফলাফল। এই ফলাফল শুধু যে তাদের ভবিষ্যতের উপরে প্রভাব ফেলবে তা নয়, এর উপরে নির্ভর করছে মহাজোটের ব্যাপারটিও।

এমনকি যদি কংগ্রেস এই পাঁচ রাজ্যে ভালো ফল নাও করতে পারে তা হলেও রাহুল গান্ধীর নেতৃত্ব নিয়ে কোনও সমস্যা হবে না, কারণ দলে তাঁর কোনও বিকল্প নেই। তবে একটি প্রতিষ্ঠান হিসাবে কংগ্রেস অবশ্যই আরও দুর্বল হয়ে পড়বে এবং দলের মধ্যে গোষ্ঠীকোন্দল ও দলত্যাগের প্রবণতাও বাড়তে পারে।

তবে বিজেপি যদি ভালো ফল করতে না পারে তা হলে নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহের নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে দেবে।

modi-inside_11251805_112718075643.jpgএই সব ভোটে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত আবেদনেও কোনও কাজ হবে বলে মনে হয় না (ছবি: এএনআই)

বিজেপি কর্মীদের উজ্জীবিত থাকার একটি কারণ হল নরেন্দ্র মোদীর মোহিনী ক্ষমতার উপরে তাঁদের অগাধ আস্থা। পরাজয় ঘটলে সেই বিশ্বাসেও ঘা পড়বে। একই সঙ্গে আরও একটা বিশ্বাস ভেঙে যাবে, তা হল বিজেপির ‘ভোট মেশিনারি’ – একের পর এক নির্বাচনে জয়ী হওয়ার জেরে যার উপরে আস্থা তৈরি হয়েছে।

যে মহাজোটের সলতে পাকানো চলছে, এই দুই জাতীয় দলের ফলাফল সেই মহাজোটের উপরে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। কে কার সঙ্গে জোট বাঁধবে তা র উপরেও এই ফলাফলের প্রভাব পড়বে।

যদি এই বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে বিজেপি ভালো ফল করতে না পারে তা হলে বিরোধী দলগুলি উজ্জীবিত হবে এবং সেই ফল মহাজোট গড়ার ক্ষেত্রে অনুঘটকের কাজ করবে। যদি কংগ্রেস ভালো ফল করতে পারে তা হলে জাতীয় স্তরে তারাই জোটের নেতৃত্ব দাবি করবে।

যদি কংগ্রেস ভালো ফল না করতে পারে তা হলে জোটের আলোচনায় জোট সঙ্গীদের সঙ্গে তারা সে ভাবে দর কষাকষি করতে পারবে না।

এই মুহূর্তে যা রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে অনেক গুলি সম্ভাবনা ও আশঙ্কা রয়েছে আর সেই কারণেই রাজনৈতিক পরিস্থিতিও এখন কুয়াশাচ্ছন্ন। এই পাঁচ রাজ্যের ফলাফল উপরে অনেক কিছুই নির্ভর করছে এবং এই ফলাফল প্রকাশের পরে বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক অবস্থা ও সমীকরণ নতুন আকার ধারণ করবে এবং বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতারও ভাগ্য নির্ধারণ করবে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

BADRI NARAYAN BADRI NARAYAN

Author is director, GB Pant Social Science Institute, a constituent institute of Central University of Allahabad

Comment