দু্র্গাপুজোয় নেই বিজেপি, পুজোকমিটিগুলিতে রমরমা তৃণমূলের
মণ্ডপে ঘুরছেন মমতা, রাজ্যে আসছেন রাহল। বাঙা লির সেরা উৎসবে নেই বিজেপি
- Total Shares
কলকাতার বিভিন্ন বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হয়ে যাঁরা এ রাজ্যের মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁদের অধিকাংশই কোনও না কোনও পুজো কমিটির প্রধান। মন্ত্রী নন এমন অনেক ডাকসাইটে নেতাও পুজো কমিটির প্রধান। তাই বাঙালির সেরা উৎসব দুর্গাপুজোয় দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি।
দেবীপক্ষে বাঙালি এখন উৎসবের মোজাজে (পিটিআই)
ফোটাতে পারেনি, নাকি ফোটাতে চায়নি? কোথাও বিজেপির কোনও নেতা-নেত্রী পুজো উদ্বোধান বা মণ্ডপের ফিতে কাটার ডাক পাননি এমন নয়, তবে তাঁরা অন্তত এ বছর সে সব এড়িয়ে গেছেন।
কলকাতার সব বড় পুজোগুলো তৃণমূলের দখলে, বলা যেতে পারে মেজ-সেজ পুজোগুলোও তাই। বাকি যেগুলো রইল তেমন জৌলুসহীন পুজো উদ্বোধন করে রাজনৈতিক অস্ত্র রাজ্যের শাসকদলের হাতে তুলে দিতে চান না বলেই সম্ভবত পুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণ ফিরিয়ে দিয়েছেন বিজেপির নেতানেত্রীরা।
কংগ্রেস নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন পুজো কমিটির শীর্ষে। অনেক ছোট পুজোও তাঁদের হাতে পড়ে বিরাট বড় হয়েছে। সেই সব প্রতিমা দেখতে প্রত্যেক দিন বেশ কয়েক লক্ষ করে লোকসমাগম হয় প্রতি বছর। এখন আবার মণ্ডপে ঘোরা শুরু হয়ে যায় পিতৃপক্ষ শেষ হতে না হতেই। তা নিয়ে সমালোচনা যতই হোক, এই ব্যবস্থা বা অবস্থা যে তাঁরই হাত ধরে, সে কথা সগর্বে ঘোষণা করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার প্রায় সব বড়পুজোই তিনি উদ্বোধন করেন, কোথাও প্রতিমার চোখ আঁকেন।
বিজেপি বলছে রামের সঙ্গে দুর্গাপুজোর যোগ রয়েছ, বসন্তকালের বদলে এই সময়ে দুর্গাপুজো, মানে অকালবোধন তো করেছিলেন শ্রীরামচন্দ্রই। তা হোক, বাঙালি অবশ্য এই উৎসবে রামকে খোঁজে না। ধর্মনির্বিশেষে বাঙালি মণ্ডপে মণ্ডপে ঘোরে। আর দীর্ঘদিন ধরেই জনসংযোগের জন্য বাঙালির সেরা এই উৎসবকে কাজে লাগিয়ে এসেছে কংগ্রেস, পরে তৃণমূল।
তবে কলকাতায় কলেজ স্কোয়ারের পুজো এখনও কংগ্রেস নেতা, সম্প্রতি নতুন করে প্রদেশ কংগ্রেস সবাপতির দায়িত্ব পাওয়া সোমেন মিত্রের একচ্ছত্র অধিকারে, যদিও এই পুজো কমিটিতে তৃণমূলের নেতা তথা অধ্যাপক সৌগত রায়ও রয়েছেন। সব ঠিকঠাক চললে এই পুজোমণ্ডপেই আসতে চলেছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এ রাজ্যের নাড়ির স্পন্দনের সঙ্গে নিজেকে মেলানোর জন্য তিনি দুর্গাপুজোকেই বেছে নিয়েছেন। গান্ধী পরিবারের কেউ এর আগে দুর্গাপুজোয় যোগ দেননি।
এখন মণ্ডপে মণ্ডপে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (ফাইল চিত্র: পিটিআই )
মধ্যপ্রদেশে ভোটের আগে মন্দিরে মন্দিরে ঘুরছেন রাহুল গান্ধী, সেই রাজ্যে প্রদেশকংগ্রেস সভাপতি কমল নাথ এখন হিন্দু ভোট টানতে যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তাতে তিনি বিজেপিকেও ছাড়িয়ে গিয়েছেন। আর মেরেকেটে মাস ছয়েক পরে ভোট, তাই ভোটের আগে বাঙালি মন জয় করতে দুর্গাপুজোকেই বেছে নিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি।
বিজেপি এই রাজ্য থেকে ২২-২৪টি আসনেপ স্বপ্ন দেখলেও বাঙালির সেরা উৎসবে নিজেদের ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ফেলতে পারছে না বিজেপি। রামনবমী নিয়ে, তারপরে মহাবীর জয়ন্তী নিয়ে বিজেপির মধ্যে যে উন্মাদনা দেখা গেছে এখন দেবীপক্ষ পড়ে গেলেও তাদের খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
এ রাজ্যে এসে মহাপুরুষদের স্মরণ করছেন বিজেপির শীর্ষনেতা নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহরা, ব্যাপারটা অনেকটা মহাপুরুষ দখলের মতো হয়ে গিয়েছে। বিজেপি বার বার প্রমাণ করতে চাইছে তারা আসলে বাঙালি মহাপুরুষদের চিন্তার ফসল, তবে দুর্গাপুজোয় তাদের দূরে সরে থাকায় আবার প্রশ্ন উঠতে পারে বিজেপি কি বাঙালিদের দল হয়ে উঠতে পেরেছে নাকি এখনও অবাঙালি ভোটব্যাঙ্কই তাদের মূল ভরসার জায়গা?
রাজ্যের জেলাগুলোতেও প্রায় সব পুজোকমিটির শীর্ষে এখন রয়েছেন তৃণমূলের বিভিন্ন স্তরের নেতা-মন্ত্রীরা। কলকাতার পুজো তাদের, রাজ্যে আসছেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। তার পরেও যদি ভোটে মেরুকরণ ঘটে তা হলে হিন্দু ভোটের বড় অংশ বিজেপিই যে পাবে সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। তবে ভোট ব্যাঙ্ক বলতে যা বোঝায়, বিজেপির সেই ভোট ব্যাঙ্ক এ রাজ্যে এখনও অবাঙালি হিন্দুরাই। দুর্গাপুজোর সঙ্গে বিজেপির একাত্ম না হতে পারা হয়তো তারই একটা ফল।
আরও এক ভাবে ভাবা যেতে পারে। কোন পুজো কমিটির নেপথ্যে কোন রাজনৈতিক দলের কোন নেতা রয়েছেন, সে কথা ভাবেন না দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে ঘুরে বেড়ানো দর্শনার্থীরা, তাই পুজো কমিটির শীর্ষে যিনিই থাকুন না কেন, এ থেকে রাজনৈতিক সুবিধা পাওয়ায় সুযোগ খুবই কম যে কোনও দলের।