ভোট কোথায় যাচ্ছে তা জানে সিপিএম, তবে তা ধরে রাখার ওষুধ জানে না

গৌরব পুনরুদ্ধারে সিপিএম কেন সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না?

 |  3-minute read |   20-01-2019
  • Total Shares

আবার একবার নীতি আর কৌশলের জটে জট পাকিয়ে গেছে ভারতের বামপন্থীরা। আলোচনাটা সামগ্রিক ভাবে বামপন্থীদের মধ্যে ছড়িয়ে না দিয়ে নির্দিষ্ট ভাবে সিপিএম নিয়ে আলোচনা করাটাই বাঞ্ছনীয়, কারণ দল হিসাবে তারাই বৃহত্তম এবং সবচেয়ে বেশি প্রকট।

শনিবার কলকাতা ব্রিগেড ময়দান সাম্প্রতিক বিরোধী রাজনীতিতে একটা দিশা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। তার সমস্ত নেতিবাচক দিকগুলোকে বাদ দিলেও একটা উপসংহারে পৌঁছানো যায়, যে একের বিরুদ্ধে একের লড়াই – এটাই এখন বিরোধীদের মূল প্রতিপাদ্য বিষয়। এই আলোচনাটা হয়েছে মঞ্চে কংগ্রেস প্রতিনিধিদের বসিয়ে রেখেই।

bakshismall1_012019051424.jpgত্রিপুরায় সিপিএমের সভা। (ছবি: সুবীর হালদার)

অতএব ধরে নেওয়াই যেতে পারে যে, গুটি গুটি পায়ে কংগ্রেসও এই মতের সহযোগী হওয়ার চেষ্টাটা অন্তত কোথাও একটা করবে বা করার চেষ্টা করবে। তাতে নানারকম আঞ্চলিক বাধ্যবাধকতার অজুহাত হয়তো দেওয়া হবে, কিন্তু কংগ্রেস ভাবতে অন্তত বাধ্য হচ্ছে।

মানুষ ভাবছে সিপিএম কোথায়। সিপিএমের কট্টর সমর্থকরাও ভাবছেন তাঁরা কোথায়।

লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে কেরল, পশ্চিমবঙ্গ এবং ত্রিপুরা ছাড়া অন্য কোথাও  সিপিএম ধর্তব্যের মধ্যে আসে না। এদিক-ওদিক কয়েকটি আসনে সিপিআই হয়তো বা। তা হলে সিপিএম কী করবে? তারা কি এই একের বিরুদ্ধে একের লড়াইয়ের তত্ত্বে সামিল হবে? যদি হয় তা হলে পশ্চিমবঙ্গে লড়ার জন্য তাদের ক’টা আসন ছাড়া হবে? আর না হলে ক’টা আসন তাদের জুটবে?

তাত্ত্বিক ভাবে যদি বিচার করা যায় তা হলে ১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট থেকে ভারতের রাজনীতির জাতীয় স্তরে বামপন্থীদের ভেসে থাকার অনেকটাই অথবা পুরোটাই কংগ্রেসের বদান্যতায়।

প্রাথমিক স্তরে যখন আরএসএ –বিজেপির এতটা দাপাদাপি ভারেতে ছিল না, তখন কংগ্রেসকে পুঁজিবাদী দল হিসাবে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে আদর্শগত লড়াইয়ের জায়গায় ছিলেন সে কালের বামপন্থীরা। কিন্তু সংসদীয় রাজনীতিতে সময়ের সঙ্গে কেন্দ্রের কংগ্রেস সরকারের যাবতীয় সুবিধা এবং সম্মান যথেচ্ছ ভাবে উপভোগ করেছে সিপিএম। এবং বামপন্থী পরিচয়ে পরিচিত বুদ্ধিজীবীমহল।

পরবর্তী কালে আরএসএস ও বিজেপির প্রকট উপস্থিতির কারণে এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ছিল যে সিপিএম তাদের আদর্শগত লড়াইকে আরএসএস এবং বিজেপির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীভূত করবে। কিন্তু বিচিত্র ভাবে কংগ্রেস ও বিজেপির থেকে সমদূরত্ব নামক নীতিটিকে সামনে রেখে না নীতির দিক থেকে তাঁরা তাঁদের বিবেকের কাছে স্বচ্ছ থাকতে পারছেন, না কৌকশলের দিক থেকে তাঁরা কোনও দিক-দর্শন করতে পারছেন।

pbbody1_012019051533.jpgব্রিগেডের মঞ্চে অনুপস্থিত সিপিএম। (ছবি: সুবীর হালদার)

ব্রিগেডের মঞ্চে তাঁদের অনুপস্থিতি হয়তো সিপিএম নেতৃত্বের কাছে সাময়িক ভাবে আত্মতৃপ্তি, কিন্তু ব্রিগেডের সভার কৌশলবার্তা যদি শেষ পর্যন্ত কোনও আকার নেয় তা হলে সিপিএমের অবস্থা চতুস্পদের তৃতীয় সন্তান ছাড়া আর কিছুই হবে না। যদি তাদের দখলে কিছু আসনও থাকে, তা হলে সেই আসন নিয়ে তারা কোন দিকে যাবেন তার কোনও যুক্তিসঙ্গত ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারবেন না।

এই ব্রিগেড জনসভায় কোনও একদিন অটলবিহারী বাজপেয়ী ও জ্যোতি বসুকে একই মঞ্চে দেখেছিল। তা হলে কি আদর্শগত ভাবে অথবা কৌশলগত ভাবে আজকের আরএসএস বা বিজেপি বিরোধিতা সেদিনের কংগ্রেস বিরোধিতার থেকে লঘু বলে মনে করছে সিপিএম নেতৃত্ব? তা হলে সিপিএমের আদর্শগত লড়াই কিসের বিরুদ্ধে, কার বিরুদ্ধে?

ভরতের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে এ দেশে সিপিএম এবং বিজেপি – এই দুটোই আদর্শভিত্তিক ও ক্যাডারভিত্তিক দল। ১৯৭৭ সালে কিন্তু বিজেপির পূর্বসূরি ভারতীয় জনসঙ্ঘ নিজেদের আদর্শগত লড়াইকে জনমানসে তীব্র করে তোলার জন্য কৌশলগত কারণে দলকে বিলীন করে জনতা পার্টিতে মিশে গিয়ে বামপন্থীদের সঙ্গে একাসনে বসতে দ্বিধা করেনি।

তারপর ভারতীয় জনতা পার্টির উত্থান একটা ইতিহাস।

সিপিএম না আদর্শগত ভাবে, না কৌশলগত ভাবে এমন কোনও জেদি এবং সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়ে উঠতে পারছে না যার পরিণতিতে তাদের পুনরুত্থান অথবা বিস্তার ঘটে। তারা জ্যোতি বসুকে বাস থেকে টেনে নামিয়েছে, তারা অবোধ্য পরমাণু চুক্তিকে সামনে রেখে দ্বিতীয়বার বাস মিস করেছে, এখন দেখার বিষয় এবারের বাস তাদের দলীয় দফতরের দোরগোড়ায় পৌঁছায়, নাকি তাঁরা দৌড়ে গিয়ে বাসে ওঠেন নাকি তাঁরা চোখের সামনে দিয়ে বাসটি বেরিয়ে যাওয়ার দৃশ্য অবলোকন করবেন?

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment