জঙ্গলমহলে সরকারি প্রকল্প পৌঁছালেও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের দুর্নীতিতে বাড়ছে বিজেপি
মমতা জানেন সিন্ডিকেট ও বেআইনি খাদানের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের ভালো ভাবে নিচ্ছে না মানুষ
- Total Shares
২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে গিয়েছেই বলা যায়। তবে রাজ্যে শব্দটা এখনও তেমন জোরালো হয়নি। বাম-কংগ্রেসের দল থেকে মুখ ফেরানো কর্মী সমর্থকদের ভোটে পুষ্ট হয়েছে বিজেপি। আরও ভোট পেতে তাদের এখন ধর্মরাজই ভরসা। শুরু হয়েছে রথযাত্রার প্রস্তুতি।
আটের দশকের শেষ দিকে এলকে আডবাণীর এই রথ দাওয়াই দলের স্বাস্থ্য ফিরিয়ে ছিল। তবে তা হয়েছিল উত্তর ভারতে ও হিন্দি বলয়ে। পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির স্বাস্থ্য তেমন বদলায়নি। এবার সেই টোটকা কতটা কাজ করবে তা সঠিক সময়ে ইভিএম বলবে। তবে বিজেপির মোকাবিলায় রাজনীতির প্রচারে স্বভাবসিদ্ধ রীতিতে জেলা সফর শুরু করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর দিক থেকে পরিস্থিতিটা অনেকটাই অনুকূল।
এই মুহূর্তে তাঁর হারানোর কিছু নেই। ১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে রেকর্ড ভিড় জমানো নিয়ে তাঁর চিন্তা নেই। রাজ্যে বিয়াল্লিশটি আসনের সিংহভাগ ঝুলিতে পোরা নিয়েও সমস্যা নেই। ঝোলায় যত বেশি আসন আসবে জাতীয় রাজনীতিতে ততই তাঁর ওজন বাড়বে।
আডবাণীর রথ যাত্রা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির স্বাস্থ্য ফেরাতে পারেনি [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]
২৬ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর ঝাড়গ্রাম, পুরুলিয়া, বাঁকুড়া হয়ে পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমানে তৃণমূল নেত্রী জনসভা করেছেন। প্রশাসনিক বৈঠক করেছেন। মমতার এই যাত্রা পথে সেই জায়গাগুলোই ছিল যেখানে যেখানে পঞ্চায়েত ভোটে পায়ের তলায় জমি পেয়েছে বিজেপি।
উত্তর ভারতের রাজনৈতিক কৌশল আমদানি করে সেই জমি আরও উর্বর করার চেষ্টায় রয়েছে গেরুয়া শিবির।তাই প্রতিটি জনসভাতেই তৃণমূলনেত্রী যে বিজেপিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন তাতে ব্যতিক্রম কিছু নেই। এই আক্রমণে স্বাভাবিক ভাবে তৃণমূল নেত্রীর তুন থেকে যে তীরগুলো বেরিয়েছে তার নিশানা ছিল বিজেপির ধর্মরাজ ভজনা।
এই আক্রমণের পাশাপাশি এবার মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে যা প্রাধান্য পেয়েছেতা হল রাজ্য জুড়ে বেআইনি খাদানের প্রসঙ্গ। এর আগে যখন বেআইনি ইমারতি ব্যবসার সিন্ডিকেটের সঙ্গে দলের একাংশের মাখামাখি মাত্রাছাড়া হয়েছিল তখন নিজেই হস্তক্ষেপ করে তা নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। এবার তাঁর নিশানা রাজ্যের বেআইনি খাদান।
শুধু জনসভাতেই নয় প্রশাসনিক বৈঠকেও জেলার বেআইনি খাদান প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী [ছবি: পিটিআই]
ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া ও আসানসোলে বেআইনি বালি খাদান, পাথর খাদান ও খনি ব্যবসার বাড়াবাড়ি নিয়ে শাসক দলের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ জমেছে। তাই শুধু জনসভাতেই নয় প্রশাসনিক বৈঠকেও জেলার বেআইনি খাদান প্রসঙ্গ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, "ব্যক্তিগত ভাবে কেউ কেউ করে খায়। এই টাকা সরকারের ঘরেও যায় না। পার্টির ঘরেও যায় না। বিপদে পড়ে প্রশাসন আর মানুষ।"
তৃণমূলের শাসনের দ্বিতীয় দফাতেও যে গ্রামের মানুষ সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন তা খালি চোখেই ধরা পড়ে। তার পরেও কী করে পদ্ম চিহ্নে ভোট যাচ্ছে তার উত্তর খুঁজতে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রীর মুখে এই দুর্নীতির প্রসঙ্গ উঠে আসে। একের পর এক সরকারি প্রকল্পের তালিকা বলতে বলতে মুখ্যমন্ত্রী যে কথা বলেননি তা হল এত কিছু দিয়েও বোধহয় এই কারণেই কোথাও কোথাও মন পাওয়া যাচ্ছে না মানুষের।
আর, এই রোগের উৎস হিসেবেই দলের স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীদের পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসনের একাংশের বিরুদ্ধেও ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন তিনি। বুঝিয়ে দিয়েছেন এদের জন্যেই জনমুখী প্রকল্পের সুফল মাঠে মারা যাচ্ছে কোথাও কোথাও।