নাটক শেষে ইস্তফা ইয়েদ্যুরাপ্পার, এবার তৃতীয় ফ্রন্টের দিকে ঝুঁকবেন মমতা

শপথের দু’দিনের মধ্যেই ইস্তফা দিতে হল দলের মুখ্যমন্ত্রীকে, এবার দল ভাঙাতে পারে বিজেপি

 |  4-minute read |   19-05-2018
  • Total Shares

কর্নাটকে ইয়েদ্যুরাপ্পার পরাজয়ে এ বার কি তৃতীয় ফ্রন্টের পালে হাওয়া লাগানোর চেষ্টা করবেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? ইয়েদ্যুরাপ্পার পদত্যাগের ফলে কংগ্রেসের সমর্থনে জনতা দল সেকুলারের এইচডি কুমারস্বামীর মুখ্যমন্ত্রী হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা। সম্ভবত এই সময়ের অপেক্ষাই করছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী।

২২৪ আসনের কর্নাটক বিধানসভায় মাত্র ৩৭টি আসন নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসছেন কুমারস্বামী। তাঁর বাবা এইচডি দেবগৌড়া যখন প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তখন তাঁর জনতা দলের (তখনও জেডিএস হয়নি) সাংসদ ছিল ৪৬ জন, যেখানে লোকসভার মোট সাংসদ ৫৪৫ জন। সেই সরকার টেঁকেনি। এবারেও প্রশ্ন উঠছে, সংখ্যালঘু এই সরকারকে কত দিন নিঃশর্ত সমর্থন করবে কংগ্রেস। মাত্র ৯টি আসন কম থাকায় একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে বিরোধী আসনে ইয়েদ্যুরাপ্পাকে কত দিন তাঁর দল বসিয়ে রাখবে, সেটাও প্রশ্ন। দল ভাঙানোর ব্যাপারে বিজেপির যে দক্ষতা রয়েছে, সেই দক্ষতা কর্নাটকে প্রয়োগ করবে না এমন গ্যারান্টি দেওয়া মুশকিল।

এই অবস্থায় তৃতীয় ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ কী? কর্নাটকে জেডিএসের যা ক্ষমতা তা দিয়ে কেউ প্রধানমন্ত্রী পদের দাবিদার হতে পারবে না। অন্ধ্রপ্রদেশে মোট লোকসভা আসন ২৫টি, তেলঙ্গানায় ১৭টি। তাই তেলুগুদেশম পার্টির এন চন্দ্রবাবু নায়ড়ু ও তেলঙ্গানা রাষ্ট্র সমিতির কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল তার চেয়ে বেশি আসন যে পাবে না তা ধরেই নেওয়া য়ায়। তামিলনাড়ু ও ওড়িশার চেয়েও রাজ্যে লোকসভা আসনের সংখ্যা বেশি। এ রাজ্য থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সবকটি আসন পাওয়ার লক্ষেই লড়বেন। পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা আসন ৪২টি। উত্তরপ্রদেশের অখিলেশ যাদবের জনতা দল ও মায়াবতীর বহুদন সমাজ পার্টির পক্ষেই মমতার থেকে বেশি আসন পাওয়া সম্ভব। তবে কেন্দ্রে মন্ত্রী থাকার অভিজ্ঞতা মমতাকে এগিয়ে রাখবে। যদি কংগ্রেস ও বিজেপিকে বাইরে রেখে আঞ্চলিক দলগুলি সরকার গড়ার অবস্থায় আসে, তবেই এই প্রশ্ন উঠবে।

পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে আরও এক-দু’দিন খবর হতেই পারত, যখন পুনঃপুন ভোট গ্রহণ, মানে রি পোলিং হওয়ার পরে আবার রিপোলিং হচ্ছে রাজ্যের দু’টি বুথে। কিন্তু কর্নাটক সে সব সুযোগ ছিনিয়ে নিয়েছে। গণতন্ত্র রক্ষার দায় আবার সেই আদালতেরই উপরে। পশ্চিমবঙ্গে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কলকাতা হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট যে ভাবে সব গুরুদায়িত্ব (নির্বাচন পরিচালনা ও নিরাপত্তা) রাজ্য নির্বাচন কমিশনের উপরে ন্যস্ত করেছিল, এ ক্ষেত্রেও সুপ্রিম কোর্টকে সেই পথই অবলম্বন করতে হল, আস্থা রাখতে হল গণতন্ত্রের রক্ষাকর্তাদের উপরে।

body1_051918052530.jpgকর্নাটক বিধানসভা

সাধারণ ভাবে রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দলকেই সরকার গড়তে ডাকেন রাজ্যপাল, দেশের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি। সেই নীতি মেনেই ১৯৯৬ সালে অটলবিহারী বাজপেয়ী ডাক পেয়েছিলেন সরকার গড়ার। এখন জোট সরকারের যুগে অনেক সময় নির্বাচন-পূর্ব বৃহত্তম জোট বা নির্বাচন-উত্তর বৃহত্তম জোটকে সরকার গড়তে ডাকা হয়। তবে এটা একেবারেই সাংবিধানির প্রধানের সিদ্ধান্ত, তিনি কাকে সরকার গড়তে ডাকবেন।

কর্নাটকের রাজ্যপাল বজুভাই বালা যখন ইয়েদুরাপ্পাকে সরকার গড়তে ডাকলেন, তখন সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হল কংগ্রেস-জনতা দল (সেকুলার) বা জেডিএস। আদালত তখনই কোনও স্থগিতাদেশ দেয়নি, কারণ রাজ্যপাল কোনও অসাংবিধানিক বা নিয়ম বহির্ভূত কাজ করেননি। এর পরে প্রোটেম স্পিকার নির্ধারণের সময় এল। প্রোটেম কথার অর্থ সাময়িক। সাধারণত প্রবীণতম বিধায়ককেই শপথবাক্য পাঠ করান রাজ্যপাল, তিনিই বিধানসভা পরিচালনা করেন এবং সব নির্বাচিত প্রতিনিধিকে শপথবাক্য পাঠ করান। নতুন অধ্যক্ষ নির্বাচন হয়ে গেলে তাঁর দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে রাজ্যপাল একজনকে মনোনীত করেছেন, তিনি প্রচলিত রীতি ভেঙেছেন ঠিকই, কিন্তু অসাংবিধানিক কাজ করেননি। ফের সর্বোচ্চ আদালতে কংগ্রেস-জেডিএস। এ বার সাময়িক অধ্যক্ষের উপরেই স্বচ্ছ ভাবে সভা পরিচালনার ভার দিল সর্বোচ্চ আদালত।

body2_051918052603.jpgকুমারস্বামী

এ ক্ষেত্রে একটা পুরোনো ঘটনার কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। বজুভাই বালা তখন গুজরাটের বিজেপি রাজ্য সভাপতি। দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন দেবগৌড়া। আস্থা ভোটে বিজেপির সুরেশ মেহতা জয়ী হলেও রাজ্যপাল কৃষ্ণপাল সিংয়ের পাঠানো রিপোর্টের ভিত্তিতে সুরেশ মেহতা সরকারকে বরখাস্ত করে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়া। এখন দেবগৌড়ার ছেলে কুমারস্বামীকে সরকার গড়ার আবেদন জানাতে হয়েছে সেই বজুভাই বালার কাছে। ১৯৯৬ সালে সংবিধানের পরিসরের মধ্যে থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করেছিলেন দেবগৌড়া, এ বার সেই একই পরিসরে থেকে ক্ষমতা প্রয়োগ করলেন বজুভাই বালা। তবে সেই মধুর প্রতিশোধ ধরে রাখতে পারল না তাঁর দল। সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের জন্য তিনি ১৫ দিন সময় দিয়েছিলন ইয়েদ্যুরাপ্পাকে, কিন্তু আদালতের রায়ে তা হয়ে যায় ২৪ ঘণ্টা।

body4_051918052648.jpgইয়েদ্যুরাপ্পা

কূলে ওঠার পরে আবার বিজেপির নদীতে ডুবে যাওয়া এখন কংগ্রেস ও তৃতীয় ফ্রন্টকে উল্লসিত করবে। তবে এই ব্যাপারে রাহুল ননয় কৃতিত্ব দাবি যিনি করতে পারেন তিনি সনিয়া গান্ধী।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment