পঞ্চায়েত নির্বাচনের জন্যে কতটা প্রস্তুর জম্মু ও কাশ্মীর

বর্তমান পরিস্থিতিতে শান্তিতে নির্বাচন সম্পন্ন করাটা সত্যিই একটা বড় চ্যালেঞ্জ

 |  3-minute read |   06-09-2018
  • Total Shares

জম্মু ও কাশ্মীর সরকার রাজ্যে পৌর নির্বাচন ও পঞ্চায়েত নির্বাচন করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সম্প্রতি, এক প্রশাসনিক বৈঠকে রাজ্যের নতুন রাজ্যপাল সত্য পাল মালিক এই মর্মে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

এবছরের অক্টোবর মাস থেকেই নির্বাচনগুলো শুরু হওয়ার কথা। এই সিদ্ধান্ত অবশ্য নতুন নয়। বহুদিন ধরেই এ নিয়ে চিন্তাভাবনা চলছিল। স্বাধীনতা দিবসের বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি স্বয়ং এই নির্বাচনগুলোর কথা উল্লেখ করে ছিলেন।রাজ্যের ৪,২০০টি মতো গ্রাম পঞ্চায়েতে ও ৩০,০০০ মতো গ্রাম সংসদে শেষ বার নির্বাচন হয়ে চাইল ২০১১ সালে। তাও নয় নয় করে সাবহার দশক পরে। সেই নির্বাচনে প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটার ভোটদান করেছিলেন। এই অভূতপূর্ব সাড়া দেখে অনেকেই মনে করেছিলেন যে রাজ্যের নির্বাচনী প্রক্রিয়া সম্পূর্ণভাবে সফল এবং তৃণমূল স্তরের রাজনীতি জয়ী হয়েছে। এই নির্বাচনে জয়ী প্রার্থীরা কিন্তু মূলস্রোত রাজনীতির থেকে অনেকটাই দূরে ছিলেন।

কিন্তু পরিস্থিতি একইরকম রইল না।

২০১২ সাল থেকে উপত্যকা জুড়ে পঞ্চায়েত প্রধানরা জঙ্গিদের শিকার হতে শুরু হল। জম্মু কাশ্মীরের পঞ্চায়েত কনফারেন্সের হিসেব অনুযায়ী ১৬জন পঞ্চায়েত সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল এবং আরও তিরিশজন সদস্য জঙ্গি আক্রমণে জখম হন।

body_090618063919.jpg২০১১ সালে সাফল্যের সঙ্গে নির্বাচন হয়েছিল জম্মু ও কাশ্মীরে [ছবি: রয়টার্স]

এর পরেই গ্রামীণ এলাকাজুড়ে পোস্টার টাঙিয়ে পঞ্চায়েত প্রধান ও সদস্যদের ইস্তফা দেওয়ার জন্যে আহ্বান করা হয়। এদের অনেকেই স্থানীয় মসজিদে গিয়ে রীতিমতো মাইকে ঘোষণা করে পদত্যাগ করেছিলেন। অনেকে আবার স্থানীয় সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিয়ে ইস্তফার খবর প্রকাশ করেন। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ হয়ে ওঠে যে ২০১৬ সালে যে পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল তা পিছিয়ে দেওয়া হয়।

২০১৬ সালেই জঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির হত্যার পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে। ২০১৭ সালের ৯ই এপ্রিল শ্রীনগর বিধাসভার আসনের উপনির্বাচনে মাত্র সাত শতাংশ ভোটার ভোটদান করেন। অনন্তনাগ আসনটিতে তো নির্বাচন প্রক্রিয়া বাতিল করে দিতে বাধ্য হয় নির্বাচন কমিশন।

পরিস্থিতি এখনও সঙ্কটজনক।

প্রতিদিনই কাশ্মীরে তরুণদের নিখোঁজ হওয়া ও জঙ্গি সংগঠনে যোগদানের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছর তো বিদেশী জঙ্গিদের থেকে স্থানীয় জঙ্গিদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রায় ১০ বছর বাদে আবার এ ধরণের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

দক্ষিণ কাশ্মীরের সবকটি অঞ্চলের পরিস্থিতি এখন অশান্ত। গত সপ্তাহে দক্ষিণ কাশ্মীরে পুলিশের ১২ জন আত্মীয়কে অপহরণ করা হয়েছে। পরে তাদের মুক্তি দেওয়া হলেও অনেকেই মনে করছেন যে কাশ্মীরের খারাপ সময় আবার শুরু হল বলে।

body1_090618064010.jpgজঙ্গি নেতা বুরহান ওয়ানির হত্যার পর কাশ্মীরের পরিস্থিতি আরও অশান্ত হয়ে ওঠে [ছবি: পিটিআই]

এর উপর হুরিয়াত কনফারেন্স কাশ্মীরের ভোটারদের নির্বাচনী প্রক্রিয়া থেকে দূরে থাকার জন্যে আহ্বান জানিয়েছে। সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোর দাবি এই নির্বাচনে কাশ্মীরের পরিস্থিতি কোনও দিনও বদলাবে না।

২০১১ সালের নির্বাচন অনেকটাই সফল হয়েছে। কিন্তু এই সাফল্য বেশিদিন টেকেনি। এর জন্যে অনেকেই রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়ী করছে। সারা জম্মু ও কাশ্মীর পঞ্চায়েত কনফারেন্সের চেয়ারম্যান শফিক মীর জানাচ্ছেন, "রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সাফল্যের কৃতিত্ব নিতে চাইল। আর এখান থেকেই সমস্যার সূত্রপাত।"

পঞ্চায়েতগুলোর তরফ থেকে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোকে পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানানো হচ্ছে। যদিও ২০১১ শাল থেকে এখন পরিস্থিতিটা অনেকটাই ভিন্ন।

আগের বারের থেকে এবার প্রার্থীদের মধ্যে উৎসাহ উদ্দীপনাও অনেকটাই কম। তাঁদের দোষ দেওয়াও যায় না। রাজ্যের গ্রামাঞ্চলগুলোতে সন্ত্রাসের পরিস্থিতি অব্যাহত এবং তৃনমুল স্তরের রাজনীতির জন্যে একেবারেই উপযোগী নয়। এবারের নির্বাচন শান্তিতে সম্পন্ন করতে পারটা কিন্তু প্রশাসনের কাছে একটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHUJA-UL-HAQ SHUJA-UL-HAQ @shujauh

Senior Special Correspondent, India Today TV. In spare time I volunteer for Read Room Circle. Setup libraries for underprivileged.

Comment