প্রার্থী পছন্দ না হওয়ার কী প্রভাব বিজেপির ভোটবাক্সে পড়তে পারে?

চতুর্মুখী ভোটে বিজেপির বড় ভরসা ভোটের মেরুকরণ ও মুকুল রায়

 |  3-minute read |   24-03-2019
  • Total Shares

রাজ্যে ভোটের প্রচারে আসছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। একই দিনে ব্রিগেড এবং শিলিগুড়িতে সভা করবেন। ব্রিগেডে সভা করার পরে অন্য কোনও জায়গায় সাধারণ ভাবে কেউ সভা করেন না, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তা করছেন বলে বারে বারে উল্লেখ করেছেন এ রাজ্যে বিজেপির প্রচারকমিটির প্রধান মুকুল রায়।

ক্ষমতায় ফেরায় জন্য শরিক দলগুলির আব্দার (ন্যায্য নাকি অন্যায্য সে অন্য প্রসঙ্গ) মেনে নিয়েছে বিজেপি। এই মেনে নেওয়ার ক্ষেত্রে খুব একটা দড়ি টানাটানি তারা করেনি। তা সত্ত্বেও এ বার তাদের শক্ত ঘাঁটিগুলি থেকে আসন কমতে পারে এমন আশঙ্কা করে পশ্চিমবঙ্গের মতো যে সব রাজ্যগুলিতে তাদের আসন নামমাত্র আছে বা নেই, তার উপরেই বিজেপি জোর দিচ্ছে। আসন সংখ্যার বিচারে দেশে উত্তরপ্রদেশ (৮০) ও মহারাষ্ট্রের (৪৮) পরেই পশ্চিমবঙ্গ (৪২)। তাই বিজেপির কাছে পশ্চিমবঙ্গ থেকে যথাসম্ভব আসন পাওয়া যে এখন পাখির চোখ, তা সকলেই জানে। তবে প্রথম দফা প্রার্থীতালিকা প্রকাশের পরে দেখা গেল প্রার্থী নিয়ে খুশি নন দলের একাংশ। এমনকি প্রতিবাদ জানিয়ে তাঁরা পোস্টার-ফ্লেক্সও টাঙিয়েছেন দলীয় কার্যালয়ে।

বড় একটি রাজনৈতিক দলে অনেকেই নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার প্রত্যাশা করেন। তাই গান্ধীনগরে অমিত শাহের প্রার্থী হওয়া বা বারাণসীতে নরেন্দ্র মোদীর প্রার্থী হওয়া কিংবা রায়বরেলীতে সনিয়া গান্ধীর প্রার্থী হওয়া বা আমেঠিতে রাহুল গান্ধীর প্রার্থী হওয়ার মতো সর্বসম্মতি থাকে না অনেক জায়গাতেই। বিজেপির ক্ষেত্রেও তাই-ই হয়েছে।

dudhkm_032419085415.jpgনিজের জন্য দেওয়াল লিখছেন দুধকুমার মণ্ডল। (নিজস্ব চিত্র)

তবে যাঁরা ভাবছেন যে লোকে প্রার্থীকে নয়, জাতীয় দলের ক্ষেত্রে প্রতীকে ভোট দেবেন, তাঁরা পুরোপুরি ঠিক ভাবছেন না। অন্তত এ রাজ্যের ক্ষেত্রে সেই যুক্তি মোটেই ধোপে টেঁকে না।

ধরা যাক রূপা গঙ্গোপাধ্যায়ের কথা। হাওড়ার একটি কেন্দ্র থেকে তিনি বিজেপির হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তাঁর জয় মোটামুটি ভাবে নিশ্চিত জেনেই বিজেপি তাঁকে প্রার্থী করেছিল। কিন্তু সেই কেন্দ্র থেকে নিজে লড়বেন বলে দীর্ঘ দিন যিনি মাটি কামড়ে পড়েছিলেন তিনি হতাশ হয়ে পড়লেন। রূপা গঙ্গোপাধ্যায় সর্বশক্তি দিয়ে জনসংযোগ করলেন বটে, কিন্তু তাঁকে পরাজিত হতে হয়েছিল। মুর্শিদাবাদে চলুন, সেখানে পার্থী পছন্দ না হলে অধীন চৌধুরী তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকে নির্দল হিসাবে জয়ী করে এনে কংগ্রেসে যোগ দেওয়াতেন। অর্থাৎ প্রতীক কোনও কাজে আসত না।

তবে এই যুক্তি কি মেরুকরণের ভোটে থাকবে, প্রশ্ন এটাই। উত্তর আপাতত পাওয়া যাবে না। কিন্তু উত্তর যাতে তাদের পক্ষে যায় সে জন্য সর্বশক্তি দিয়ে বিজেপি যে ঝাঁপাচ্ছে তা রাজ্যে একই দিনে নরেন্দ্র মোদীর মতো ব্যক্তির ব্রিগেড-সহ দু’টি জনসভা করার উদ্যোগ থেকেই স্পষ্ট। এখানে বিজেপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল মাঠ ভরানো, তা না হলে মানসিক ভাবে পিছিয়ে পড়বেন দলের কর্মী-সমর্থকরা।

locket_032419085503.jpgভোটের প্রচারে লকেট চট্টোপাধ্যায়। (নিজস্ব চিত্র)

বিজেপির প্রার্থী তালিকায় চমক নেই, তবে এ বার তারা দুধকুমার মণ্ডলের মতো দলের একনিষ্ঠ কর্মীকে প্রার্থী না করার মতো ভুল করেনি। রাজ্য জুড়ে ছুটে বেড়ানো মহিলা নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায়কেও প্রার্থী করেছে। চমক ছাড়াই প্রার্থী করেছে দিলীপ ঘোষ-রাহুল সিনহাদের। অর্থাৎ চেষ্টা করেছে প্রার্থী নিয়ে যাতে ক্ষোভ খুব একটা না থাকে, বা থাকলেও নামের আড়ালে সেটি যেন ঢেকে যায়।

উত্তরবঙ্গ থেকে আসন পাওয়ার ব্যাপারে তারা আশাবাদী, প্রথম ক্ষোভের আঁচ সেখান থেকেই পাওয়া গেছে। তবে এ ব্যাপারে তাদের আশা-ভরসা এখন মুকুল রায়। কারণ তৃণমূলের হয়ে তিনি যে কাজটি করেছিলেন সেই একই কাজ তিনি এ বার করছেন বিজেপির হয়ে। প্রার্থী নিয়ে ক্ষোভ মেটাতে তিনি যে উদ্যোগী হবেন সে ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই। হয়তো পরবর্তী বিধানসভায় প্রার্থী করার মুলো ঝুলিয়ে লোকসভা ভোটের বৈতরণী তিনি পার করার চেষ্টা করবেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment