১৯ জানুয়ারি ব্রিগেডে বিরোধী ঐক্য, নরম হিন্দুত্বে মমতা

বিজেপিকে তালিবান হিন্দু বলে কটাক্ষ মমতার, কত লোক হয়েছিল?

 |  4-minute read |   21-07-2018
  • Total Shares

বিজেপির হিন্দু ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে নরম হিন্দুত্বের লাইন নিল তৃণমূল কংগ্রেস। একই সঙ্গে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দেগে শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাদের তালিবান হিন্দু, বন্দুকধারী হিন্দু বলে কটাক্ষ করেছেন।

আগের রাতে বিরোধীরা তাদের ঐক্যের ছবি তুলে ধরতে ব্যর্থ হয়েছে সংসদে। ২১ জুলাই শহিদ দিবসের মঞ্চে তৃণমূলনেত্রী তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করে দিলেন, আগামী ১৯ জানুয়ারী ২০১৯ এই ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডেই সব বিরোধী নেতাকে এক মঞ্চে তুলে ডাক দেবেন কেন্দ্র থেকে বিজেপি সরকারকে হঠানোর।

দল বদল, পঞ্চায়েত দখল

তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যাওয়ার জন্য নাম না করে শহিদ দিবসের মঞ্চ থেকে মুকুল রায়কে গদ্দার বা বিশ্বাসঘাতক বলেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে একই মঞ্চে এ দিন ঝাড়গ্রামের ৫৬ জন জনপ্রতিনিধিকে তৃণমূলে তিনি যোগ দিইয়েছেন। ২০১৩ সালের পঞ্চায়েত ভোটে যেগুলি তৃণমূল দখল করতে পারেনি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তৃণমূলে যোগ দিইয়ে সেই সব পঞ্চায়েত দখল করেছিল তৃণমূল। এ বার নির্ধারিত সময়ের অনেক আগে ভোট করানোর পরে দেখা গেল ঝাড়গ্রাম জেলায় দারুণ ফল করেছে বিজেপি। এবারেও নির্বাচিতদের দলে টেনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত দখলের অভ্যাস বজায় রাখল রাজ্যের শাসক দল।

body2_072118055934.jpgশহিদ দিবসের জনসভায় বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (সুবীর হালদার)

বিরোধী দলের অভিযোগ, শহিদ দিবসের মঞ্চকে এখন দলবদলের রাজনৈতিক মঞ্চ হিসাবে ব্যবহার করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এ বারও তাতে ব্যতিক্রম হয়নি। বেশ কয়েকজন কংগ্রেস বিধায়ক ছাড়াও মঞ্চে ছিলেন সিপিএমের বহিষ্কৃত সাংসদ ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে তৃণমূলের তালিকায় সবচেয়ে বড় যে নামটি যোগ হল, তিনি চন্দন মিত্র। পাইয়োনিয়ার সংবাদপত্রের প্রধান সম্পাদক ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং দু’বার বিজেপির হয়ে রাজ্যসভায় প্রতিনিধিত্ব করা চন্দন মিত্র যে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন, তা নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরেই শোনা যাচ্ছিল।

লালকৃষ্ণ আডবাণীর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত চন্দন মিত্র ২০০৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সাংসদ ছিলেন। তিনি বাংলায় বিজেপির হয়ে রাজনীতি করতে আগ্রহী ছিলেন। বিজেপি এ রাজ্যে ক্ষমতায় এলে তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, এমন কথাও শোনা যাচ্ছিল ২০১৬ সালে। তাঁর নিজের জেলা হুগলির কোনও একটি কেন্দ্র থেকে তিনি ভোটে লড়তে পারেন বলেও শোনা যাচ্ছিল। কিন্তু নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহের জমানায় তিনি দলে কোনও কাজ পাচ্ছিলেন না বলে শোনা যাচ্ছিল। কয়েক দিন আগে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন বিজেপি থেকে। তারপরেই শোনা যাচ্ছিল তিনি তৃণমূলে যোগ দেবেন।

মইনুল হোসেন, আবু তাহেরের মতো বিধায়করা এ দিন তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

রাজনৈতিক কর্মসূচি

আগামী বছর লোকসভা ভোটে বিরোধীদের এক মঞ্চে তুলবেন বলে ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে সিপিএম প্রসঙ্গে তিনি দ্বিধাবিভক্ত। রাজ্যে কোনও ভাবেই তৃণমূল যে সিপিএমের সঙ্গে জোট বাঁধবে না, সে কথা তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে কেরলে কী হবে সে কথা তিনি বলতে পারবেন না বলে, সম্ভাব্য ফ্রন্ট থেকে সিপিএমকে বাদ দেননি।

ফেডেরাল ফ্রন্ট গঠনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশাপাশি যাঁর উদ্যোগ সবচেয়ে বেশি, সেই কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের দল তেলাঙ্গনা রাষ্ট্র সমিতি (টিআরএস) বুধবার রাতে সেই টিআরএস সরকারের বিরুদ্ধে ভোটদানে বিরত ছিল। ভোট দেয়নি নবীন পট্টনায়কের বিজু জনতা দলও (বিজেডি)। তবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশা, তাঁর ১৯ জানুয়ারির মঞ্চে এই দুই দলের নেতারা থাকবেন। পাশাপাশি থাকবেন মুলায়ম-মায়াবতীও। আগামী মাসেই চেন্নাইয়ে ডিএমকে-র সভায় যাওয়ার কথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। এমকে স্ট্যালিনও তাঁর মঞ্চে থাকবেন বলে ধরে নেওয়া যায়। কংগ্রেস সেই মঞ্চে থাকবে কিনা তা এখনও স্পষ্ট নয়।

তবে এখনও বিরোধীরা কোনও সর্বসম্মত নেতা পায়নি। সংসদেও তাদের অনেকটা ছন্নছাড়াই দেখিয়েছে। আগামী কয়েক মাসে বিরোধীরা কতটা ঘর গোছাতে পারল, তা দেখা যাবে ১৯ জানুয়ারির মঞ্চে।

body1_072118060007.jpgচন্দন মিত্র

নরেন্দ্র মোদী মেদিনীপুরের যে মাঠে কয়েক দিন আগে বক্তৃতা করেছেন, এ মাসের ২৮ তারিখ সেই একই মাঠে সভা করবে তৃণমূল। ১ থেকে ১৫ অগস্ট তিনি রাজ্যজুড়ে বিজেপি হঠাও, দেশ বাঁচাও স্লোগান তুলতে বলেছেন। তিনি নিজে ঝাড়গ্রামে সভা করবেন। এই ঝাড়গ্রামেই পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসকে টেক্কা দিয়েছে বিজেপি। যদিও অনেক জনপ্রতিনিধি এখন সেই তৃণমূলেই! ৯ অগস্ট সেখানে সভা করবেন মমতা নিজে।

হিন্দু লাইন, বাঙালি লাইন

রাজ্যে ভোটের মেরুকরণ হচ্ছে। এতদিন মুসলমান ভোট ব্যাঙ্ক ধরে রাখতেই সব রাজনৈতিক দল ব্যস্ত ছিল। এখন বিজেপির উত্থানে হিন্দু ভোটের একাংশ ধরে রাখতে তৎপর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে হিন্দু তালিবান, বন্দুকধারী হিন্দু প্রভৃতি বলে তীব্র ভাবে আক্রমণ করেন। বিজেপি হিন্দু ধর্মকে অপমান করছে বলে দুর্গা, শিব, গণেশ, বৈষ্ণোদেবী থেকে লৌকিক সন্তোষীমাতার নাম পর্যন্ত কার্যত এক নিঃশ্বাসে করে যান রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।

রাজ্যের মহাপুরুষদের নাম প্রায়ই বিজেপি নেতাদের মুখে শোনা যাচ্ছে। এই অবস্থায় অসমে যে বাঙালি খেদাও চলছে, সেই প্রসঙ্গ ছুঁয়ে সেই রাজ্যের বাঙালিদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন তৃণমূলনেত্রী। মণিপুরও একই সমস্যা হচ্ছে বলে তিনি সভামঞ্চে জানান। অর্থাৎ বাঙালি আবেগকেও এ দিন পুঁজি করার চেষ্টা করেন তিনি। আদিবাসীদের কাছে টানতে বিশ্ব আদিবাসী দিবসে ঝাড়গ্রামে সভা করবেন মমতা।

তবে দিনের শেষে একটি প্রশ্ন সকলের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে। লোক কত হয়েছিল শহিদ দিবসের রজত জয়ন্তী বর্ষে? উপস্থিত লোকজন জানাচ্ছেন, আগের মতো নয়। কয়েক বছর আগেও তৃণমূল থেকে দাবি করা হয়েছিল দশ লক্ষ লোক এসেছে বলে। এ দিন সেই ভিড় চোখে পড়েনি বলে জানাচ্ছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment