পদত্যাগ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর, বিতর্ক আর সিনেমাজগতে আবদ্ধ নেই

রাজনৈতিক চমক নাকি চাপা থাকা সত্যের বহিঃপ্রকাশ

 |  3-minute read |   21-10-2018
  • Total Shares

মিটু (#MeToo)। আধুনিক ভারতে নারী শক্তির বিকাশ নাকি পুরুষ সমাজের অসুরায়ন নাকি একটি রাজনৈতিক চমক নাকি বিভিন্ন পেশায় দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা একটি লুকানো সত্যির বহিঃপ্রকাশ।

ভারতের সোশ্যাল মিডিয়া এখন #মিটু ঝড়ে আক্রান্ত। আমি এই কারণেই অত্যন্ত সচেতন ভাবেই সোশ্যাল মিডিয়া শব্দটি ব্যবহার করছি, তার কারণ হল, বিষয়টি শুধু অ্যান্ড্রয়েড ফোনের মধ্যেই আবদ্ধ, কিছুটা টেলিভিশনের পর্দায় এবং আরও সামান্য কিছুটা সংবাদপত্রের পাতায়।

ভারতে শুরুটা সিনেমা জগৎকে কেন্দ্র করে, কিন্তু প্রচার অতিরিক্ত মাত্রায় এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে কেন্দ্র করে। যে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এক সময়ের স্বনামধন্য সাংবাদিক। আমার ব্যক্তিগত ভাবে তাঁর সঙ্গে কাজ করার কোনও সুযোগ ঘটেনি, কিন্তু তাঁর বহু পুরুষ সহকর্মী একটা বিষয়ে নিশ্চিত যে তিনি সাংবাদিক হিসাবে যতটা পটু ব্যক্তি হিসাবে ততটাই ঘৃণ্য। এই ঘৃণার বিষয়টি আলোচনার ক্ষেত্রে পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে একই।

embed-tanushree_102118024732.jpgতনুশ্রী দত্ত সরাসরি নাম করে নানা পাটেকরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরে মিটু আন্দোলন অন্য মাত্রা পায়

মহিলাদের ক্ষেত্রে আজ মিটু হয়েছে, কিন্তু তাঁর অনেক পুরুষ সহকর্মী তাঁদের পেশাগত যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশের কোনও জায়গা খুঁজে পাচ্ছেন না, কারণ পুরুষদের কোনও মিটু হ্যাসট্যাগ তৈরি হয়নি।

একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, আজকে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে সমাজের একটা নির্দিষ্ট অংশে মিটু নিয়ে প্রবল আলোচনা। কিন্তু আজ থেকে বহু বছর আগে একটি জাতীয় হিন্দি খবরের চ্যানেল সিনেমা জগতে কাস্টিং কাউচ বিষয়টিকে ব্যবহার করে তাদের গোপন ক্যামেরায় যা তোলপাড় করেছিল সংবাদজগৎ।

তারও পরে আজকের পণ্ডিত ব্যক্তিরা ভুলেই গেছেন তরুণ তেজপাল নামটি। আমি আমার লেখার শুরুতেই নারী সমাজের প্রতি কোনও রকম অসম্মান ও অশ্রদ্ধা না রেখেই বলছি, কোথাও যেন মনে হচ্ছে যে কাস্টিং কাউচের সময়ে ভুক্তভোগী নারীসমাজ কেন সামনে এগিয়ে আসেনি? অথবা তরুণ তেজপালের ঘটনার সময়ে কেনই বা তাঁরা নিশ্চুপ ছিলেন?

আমি মহিলা নই, তাই ভুক্তভোগী মহিলাদের যন্ত্রণা অনুভব করা আমার পক্ষে সম্ভব নয় কিন্তু কোথাও যেন একটু খটকা লাগছে যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশের সময়টা নিয়ে এবং একটা অদ্ভুত কারণে প্রচারটা সিনেমাজগৎ থেকে ঘুরে প্রাক্তন মন্ত্রীর উপরে কেন্দ্রীভূত হয়ে গেল।

বিরোধীপক্ষকে আমরা সিনেমাজগতের অভিযোগগুলি নিয়ে যতটা সোচ্চার হতে দেখলাম তার চেয়ে অনেক বেশি যেন প্রাক্তন মন্ত্রীকে কেন্দ্র করে। প্রাক্তন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ সেগুলি কোনওটিই ইদানীংকালের নয়। তিনি যদি এই ধরনের কাণ্ড ঘটিয়ে তাকেন তার সবকিছুই হয়েছিল (অন্তত অভিযোগ অনুসারে) তিনি কংগ্রেসের সাংসদ হওয়ার আগে।

embed_0_102118024931.jpegএমজে আকবর: রাজনীতি শুরু কংগ্রেস মুখপাত্র হিসাবে, তারপ কংগ্রেস সাংসদ। ২০১৪য় বিজেপিতে যোগ দেন মুখপাত্র হিসাবে, পরে সাংসদ ও বিদেশ প্রতিমন্ত্রী

এই তথাকথিত ঘৃণ্য এমজে আকবরকে রাজনীতির ময়দানে এনেছিলেন রাহুল গান্ধীর প্রয়াত পিতা রাজীব গান্ধী। আবার কাস্টিং কাউচে বিদ্ধ স্বনামধন্য অভিনেতা গোবিন্দাও ছিলেন কংগ্রেসের সাংসদ।

এটা খুবই বেদনার যে, যে নারীসমাজ আজকে তাদের লড়াইটা লড়ছেন তার রাজনীতিকরণ করে গুরুত্বটাই কমিয়ে দেওয়া হল।

প্রশ্ন আরেকটাও আছে। পৌরাণিক যুগ থেকে মুনি-ঋষিরা বলে গেছেন, ‘লজ্জা নারীর ভূষণ’। আলোচনাটি যখন এখন সংবাদমাধ্যমকে কেন্দ্র করেই ঘণীভূত হয়েছে, সেখানে প্রশ্ন: সংবাদমাধ্যমের নানা রকম জটিল আবর্তে বিদ্ধ পুরুষ সমাজ তার প্রতিবাদ জানাবে কোথা থেকে বা কী ভাবে?

এর পরেও প্রশ্ন থাকছে, যে ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে একের পর এক সংবাদ মাধ্যমের এবং অবশ্যই অভিনয় জগতের প্রতিষ্ঠিতদের বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমছে, তার সামাজিক নিরাপত্তার দিকটি কে নিশ্চিত করবে?

embed_1_102118025048.jpegআকবর একাই, নাকি সংবাদমাধ্যমে আরও অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে?

আদালত এ বিষয়ে কী ভূমি পালন করবে? তরুণ তেজপালের গ্রেপ্তারি ঘটেছিল পাঁচ বছর আগে। এখনও তার আইনি লড়াইয়ের নিষ্পত্তি হয়নি। অভিযোগকারিণী বিচার পাওয়ার অপেক্ষায়। তরুণ তেজপাল তাঁর সামাজিক সম্মান ফিরে পাওয়ার অপেক্ষায়।

তা হলে এই মিটু-র শেষ কোথায়? এই মিটু কি শুধুমাত্র অভিনয় ও সংবাদজগতের মধ্যেই সীমাবদ্ধ? সংবাদমাধ্যমে এমজে আকবর-ই কি একমাত্র তথাকথিত অসুর? একদল পুরুষের এই অভিযোগও আছে যে পৌরাণিক যুগে অসুর শুধুমাত্র পুরুষ কেন, তার মহিলা শুধুমাত্র দেবী কেন? 

embed_meetoo_102118025221.jpgমিটু নিয়ে ক্রমেই বাড়ছে অভিযোগ

যুগটা এখন সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ, তা সে যতই সীমিত হোক না কেন। নামে-বেনামে অভিযোগ হয়েই চলেছে, যার খুব সামান্যই আইনের দরজায় কড়া নেড়েছে। কিন্তু যে ভাবে এই বিতর্ক অভিনয় এবং সংবাদমাধ্যম জগতে পুরুষ ও মহিলার মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করছে তার ভবিষ্যৎ খুব একটা সুখকর হবে বলে মনে হয় না।

নির্ভয়া কাণ্ডের পরে কোনও ধর্ষণের অভিযোগের দ্রুত বিচার শেষ করবার পদক্ষেপ করেছে আইনসভা এবং আদালত। এ ক্ষেত্রেও তেমন কোনও পদক্ষেপ করা যায় কিনা সেই বিষয়টাও বিতর্কে আসা জরুরি।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment