প্রত্যাঘাতের পরেও নিন্দা, বাকস্বাধীনতার সীমা লঙ্ঘিত হচ্ছে না তো?

এর আগে ১৬টি সাধারণ নির্বাচন হয়েছে, তখন কেন এমন প্রত্যাঘাত হয়নি, সেই প্রশ্নও উঠছে।

 |  5-minute read |   27-02-2019
  • Total Shares

ধরে নেওয়া যাক পুলওয়ামার জঙ্গি আক্রমণ নরেন্দ্র মোদীর ঘৃণ্য চক্রান্ত এবং ষড়যন্ত্র। ধরে নেওয়া যাক ভারতীয় বায়ুসেনার মঙ্গলবারের পদক্ষেপ অতিরঞ্জিত। ধরে নেওয়া যাক, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার জন্য নরেন্দ্র মোদী যে কোনও রকমের হিংস্র অপরাধ করার মতো অপরাধী মানসিকতার ব্যক্তিত্ব।

এতকিছু ধরে নেওয়ার কারণ একটাই, যে দেশটার নাম ভারত এবং এখানে মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে যে কোনও স্তর পর্যন্ত নেমে যাওয়াটা মানুষ তাদের অধিকার বলে মনে করে।

inside-modi_5_022719015006.jpgপ্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। (ছবি: রয়টার্স)

যদিও বার বার প্রমাণিত হয়েছে যে এই মত প্রকাশের স্বাধীনতা নামক বিষয়টি ক্ষেত্রবিশেষে অদলবদল হয়। মঙ্গলবার ভারতে এমন একটা দিন গেছে যে দিন আপামর ভারতবাসী ঘণ্টার পর ঘণ্টা টেলিভিশনের পর্দায় চোখ রেখে অবদমিত ক্রোধ এবং আক্রোশ একটু হলেও মেটাবার চেষ্টা করেছেন।

কিন্তু তার মাঝেও প্রশ্ন উঠেছে, এটা কতটা বাস্তব আর কতটা মিথ্যা।

আমরা ছবিতে দেখেছি জায়গায় জায়গায় সুরক্ষাবাহিনীর জওয়ানরা আনন্দে উদ্বাহু নৃত্য করেছেন, আড্ডায় আড্ডায় মানুষ জোর গলায় আলোচনা করেছে, টেলিভিশনের পর্দায় বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সাধুবাদ জানিয়েছেন এবং সারা বিশ্ব ভারতের এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে।

ভারতে ১৬ বার সংসদে নির্বাচন হয়েছে, সপ্তদশ নির্বাচন আসন্ন। অর্থাৎ ষোলো বার সরকার পরিবর্তন হয়েছে আবার মাঝে  কয়েকবার নির্বাচন ছাড়াও সরকার পরিবর্তন হয়েছে। সবকিছুর শেষে দেশটা ভারতই রয়ে গেছে। বাকস্বাধীনতার অজুহাত দেখিয়ে যাঁরা সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লব ফলাচ্ছেন তাঁরা এর আগেও নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, এর পরেও নির্বাচনে ভোট দেবেন। তাঁদেরই ভোটে এর আগেও দেশটা ভারত ছিল এবং আগামী দিনেও দেশটা ভারতই থাকবে। নরেন্দ্র মোদী রইলেন কি রইলেন না সেটা বড় কথা নয়। ভারত আমাদের সকলের এবং সবার উপরে।

এবারে আবার ধরে নেওয়া যাক যে দেশবাসীকে মূর্খ বানালেন নরেন্দ্র মোদী। কিন্ত বাস্তবতা তা নয়। মোদী যদি দেশবাসীকে মূর্খ বানিয়ে থাকেন তা হলে তিনি একই সঙ্গে ভারতের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা বাহিনীকে মূর্খ বানিয়েছেন, সারা বিশ্ববাসীকে মূর্খ বানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক এবং প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মূর্খ বানিয়েছেন।

এটা কি আদৌ সম্ভব?

আগামিকাল যদি প্রমাণিত হয় যে এই প্রসঙ্গেও মোদী জুমলা, তা হলে আমার পক্ষ থেকে অন্তত আহ্বান, পুরো দেশে তথাকথিত যাঁরা মোদী-ভক্ত, তাঁদের সকলের ফাঁসির সাজা হওয়া উচিত। কারণ এই লড়াই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই। আর সেই লড়াইয়ের নামে যদি মোদী জুমলা হন, তা হলে আন্তর্জাতিক মহলের কাছে ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতার হত্যা হয়েছে, ভারতের সেনাবাহিনীর কাছে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের বিশ্বাসযোগ্যতার হত্যা হয়েছে, দেশবাসীর আবেগকে হত্যা করা হয়েছে, ভারতের গণতান্ত্রিক ঐতিহ্যকে হত্যা করা হয়েছে, ভারতের পাঁচ হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাসকে হত্যা করা হয়েছে – এতগুলো হত্যায় অন্তত সাতবার ফাঁসি ও একমাসের জেল হওয়া উচিত।

ভারত সরকারের যে পদক্ষেপের কারণে আজ সারা বিশ্বের সন্ত্রাসবাদ-বিরোধী ইতিবাচক শক্তিগুলো ভারতের পাশে দাঁড়িয়েছে, তারা আর কোনও দিন ভারতকে বিশ্বাস করবে?

আর সবকিছু জেনেশুনে নরেন্দ্র মোদী ও তাঁর সহযোগীরা এই জঘন্যতম অপরাধের অংশীদার হলেন? বাক স্বাধীনতার অধিকার অত্যন্ত ইতিবাচক এবং তা থাকা দরকার, কিন্তু প্রত্যেকটা অধিকারের একটা সীমাও থাকা দরকার।

সংবাদমাধ্যমে সংবাদ পরিবেশনের অধিকারের সীমা নিয়ে যেমন একটা প্রশ্ন আছে, বা জীবনের যে কোনও ক্ষেত্রে অধিকারের সীমা নিয়ে যেমন একটা প্রশ্ন আছে, এ ক্ষেত্রেও সেই সীমারেখাটা নির্ধারণ করার কোনও পদ্ধতি না থাকলেও, অন্তত একটা স্বনিয়োজিত পদ্ধতি থাকা উচিত।

মঙ্গলবার কী হয়েছে, কী ভাবে হয়েছে এ নিয়ে অনেক কাটাছেঁড়া চলছে এবং চলবে। কিন্তু একটা দেশের বিদেশসচিব যখন সারা পৃথিবীর সামনে ঘোষণা করছেন একটা ঘটনা ঘটেছে বলে, তখন বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার অত্যন্ত বেদনাদায়ক।

এর আগে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের প্রমাণ নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন তাঁদের মনে রাখা উচিত যে, ডিজিএমও-র (ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস) সাংবাদিক বৈঠক আর বিদেশ সচিবের সাংবাদিক বৈঠকের মধ্যে একটি গুণগত এবং ওজনগত পার্থক্য আছে।

সেদিন যেমন সার্জিক্যাল স্ট্রাইক নিয়ে প্রশ্ন তোলাটা অবান্তর ছিল, আজও তেমনি প্রশ্ন তোলাটা বাকস্বাধীনতার অপব্যবহার ছাড়া কিছু নয়। এটা ঠিক যে ভারতের জীবনের একটা বড় অংশ রাজনীতি দ্বারা কলুষিত। কিন্তু আমি আবার বলব, যে এখনও পর্যন্ত ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী এমন কোনও কাজ করেননি যার চূড়ান্ত নেতিবাচক প্রভাব অন্য কোনও প্রধানমন্ত্রীকে বহন করে নিয়ে চলতে হয়েছে।

download_2_022719015036.jpgহামলা হয়েছে আকাশপথে। (ছবি: রয়টার্স)

অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনেক বিতর্ক থাকতে পারে, কিন্তু আমি আবার বলছি, কোনও পদের প্রতি অসম্মান না দেখিয়েও বলছি – ডিজিএমওর সাংবাদিক বৈঠক ও বিদেশসচিবের সাংবদিক বৈঠক একটা গুণগত ও ওজনগত পার্থক্য রয়েছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment