দশেরা বক্তৃতা: ২০১৯ নির্বাচনের আগে রামমন্দিরে কেন ফিরলেন ভাগবত

আরএসএস প্রধান স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে হিন্দুত্ব ও ভোট মেরুকরণই ইস্যু

 |  4-minute read |   20-10-2018
  • Total Shares

দীর্ঘ প্রতিক্ষিত সেই বক্তৃতা। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগে শেষ বক্তৃতা। দেশের সাধারণ নির্বাচন আগে নাগপুরে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সঙ্ঘের (আরএসএস) সদর দফতরে প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোহন ভাগবত দিক নির্দেশ করলেন গৈরিক রাজনৈতিক দলের।

অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের পথ তৈরি করে দিতে এ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে আইন তৈরি করতে বলে সেই ইস্যুটিকে আবার আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এলেন আরএসএস প্রধান।

গত মাসেই তাদের তিন দিনের অধিবেশনে ‘ইনক্লুসিভ ইন্ডিয়া’র পক্ষে ব্যাট ধরেছিলেন আরএসএস প্রধান। তখন মনে হয়েছিল শরসঙ্ঘচালক হিসাবে তিনি প্রগতিশীল মুখ হয়ে উঠছেন এবং আরএসএস-কে কট্টরপন্থী ভাবনা-চিন্তা থেকে বার করে আনছেন। কিন্তু এক সপ্তাহের মধ্যেই সেই পুরোনো সুরেই গাইতে শুরু করে দিলেন ভাগবত। আরএসএস মনে করে যে অন্তর্দৃষ্টির দিয়ে বিচার করলে রামমন্দির নির্মাণ করা প্রয়োজনীয়তা রয়েছে যা শুভভাবনা ও অভিন্ন ভাবের দিকে সকলকে চালিত করবে। আরএসএস বদলাচ্ছে বলে যে ভাবনা শুরু হয়েছিল দেখা গেল তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন। আরএসএস আর রামমন্দির ইস্যু থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না।

এই হিসাবে বলতে গেলে ভাগবতের বক্তৃতায় কোনও চমক ছিল না। তিনি খুব ভালো ভাবেই জানেন যে অযোধ্যা জমি বিতর্ক নিয়ে সম্ভবত এই মাসের শেষেই শুনানি শুরু করতে চলেছে সুপ্রিম কোর্ট। তবে এই অবস্থায় দাঁড়িয়েও ভাগবত চাইছেন, রামমন্দির নিয়ে অধ্যাদেশ (অর্ডিন্যান্স) জারি করুক মোদী সরকার।

বিজেপির মন্ত্রীদের হাতে এখনও সময় আছে এবং তারা সর্বোচ্চ আদালতের বিচার মেনে বিষয়টি নিস্পত্তি করে নিতে রাজি রয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। তবে ভগবত কী বলতে চাইছেন তা স্পষ্ট।

mohan-bhagwat-1_102018064937.jpgমোহন ভাগবত

যেখানে আরএসএসের রাজনৈতিক শাখা বিজেপির নেতারা ক্রমাগতই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নমূলক কাজকর্ম নিয়ে প্রচার করে চলেছেন সেখানে আরএসএস স্পষ্ট ভাবে জানিয়ে দিয়েছে যে হিন্দুত্ব ও ধর্মীর রাজনীতি দিয়ে ভোটের মেরুকরণই তাদের আবার ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে পারে।

ওই বিতর্কিত জমি সংক্রান্ত মামলায় সর্বোচ্চ আদালত যখন বিচার করে সিদ্ধান্ত জানানোর জন্য প্রক্রিয়া শুরু করছে ঠিক সেই সময়েই আবার রামমন্দিরের দাবি তোলা হল।

গত মাসেই সব বাধা দূরে ঠেলে ওই জমি বিবাদ সংক্রান্ত মামলা চূড়ান্ত শুনানির জন্য প্রস্তুত হয়েছে। ১৯৯৪ সালের যে মামলার রায়ে বলা হয়েছিল যে মসজিদ ইসলামের অবিচ্ছেদ্য অংশ নয়, নতুন করে সেই মামলা শুনানির আর্জি খারিজ করে দিয়েছে তিন বিচারপতির বেঞ্চ। একই সঙ্গে তাঁরা এই ইঙ্গিতও দিয়েছেন যে খুব শীঘ্রই ওই জমি বিবাকদ সংক্রান্ত মামলা নিয়ে শুনবে সর্বোচ্চ আদালত। সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর মতো নেতারা মনে করছেন, ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনের আগেই রামমন্দির বাস্তবায়িত হতে পারে। সঙ্ঘ মনে করছে যে আদালতের রায়ের জন্য অপেক্ষা করে থাকলে ভোটের বাক্সে তার প্রতিফলন নাও ঘটতে পারে।

তিন বিজেপিশাসিত রাজ্যে যখন বিধানসভা নির্বাচন হতে চলেছে ঠিক সেই সময় এমন একটি মন্তব্য করলেন মোহন ভাগবত। যখন তাদের দুর্গ রাজস্থান ও মধ্যপ্রদেশে কঠিন লড়াইয়ের মুখে পড়েছে বিজেপি, মনে হচ্ছে তখন দেওয়াললিখন পড়ে ফেলেছেন মোহন ভাগবত। মধ্যপ্রদেশের মতো রাজ্যে, যেখানে দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি, বিশেষ করে সেই রাজ্যে উন্নয়ন নিয়ে প্রচারে কোনও কাজ হবে না। আরএসএস এবং বিজেপি জানে যে আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে নানা ধরনের দায়ভার নিয়ে ময়দানে নামতে হতে পারে বিজেপিকে, সেখানে নরেন্দ্র মোদীর উন্নয়নের অগ্নিপরীক্ষা হয়েই যাবে।

বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে ইতিমধ্যেই বিজেপির উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিকে কটাক্ষ করে প্রচার শুরু করে দিয়েছে কংগ্রেস, তাতে ক্রমেই একটা ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে মুখ্যমন্ত্রীরা নন, প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীই তাদের মূল লক্ষ্য।

যে তিন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন সেই তিন রাজ্যেই বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া এবং একই সঙ্গে সাড়ে চার বছর কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদীর শাসনের কথা বিবেচনা করলে বিজেপির লড়াই ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে।

আরএসএস খুব ভালো ভাবে জানে যে ২০১৪ সালের জাদু ২০১৯ সালে আর দেখা যাবে না কারণ সেই সময় লড়াইটা ছিল একদিকে ইউপিএ সরকারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির পাহাড়প্রমাণ অভিযোগ উল্টোদিকে নরেন্দ্র মোদীর উজ্জ্বল গুজরাট ভাবমূর্তি।

ব্যর্থ প্রতিশ্রুতির ভার বহন করতে গিয়ে দলের কর্মীরা যখন ক্লান্ত ঠছিক তখন মোহন ভাগবতেই এই বক্তৃতা নতুন করে তাদের প্রাণশক্তি জোগাবে ও উপযুক্ত দিশার সন্ধান দেবে।

রামমন্দির চিরকালই বিজেপির কাছে মুখ্য বিষয়, তাই এই দলের ধ্বজাধারীরা এখন গৈরিক অ্যাজেন্ডা আরও ভালো ভাবে প্রচার করতে পারবেন।

সঙ্ঘ ভালোভাবেই জানে যে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী যতই মন্দিরে মন্দিরে ঘুরে বেড়ান না কেন, রামমন্দির নিয়ে প্রশ্নে দেশের এই সুপ্রাচীন রাজনৈতিক দলটি কোণঠাসা হবেই।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment