নির্মলা সীতারমণ কেন ভারতীয় রাজনীতির অ্যাংরি উওম্যান

রাফাল বিতর্ক নিয়ে তাঁর বক্তব্য রাহুল গান্ধীকেও বিপাকে ফেলে দিয়েছিল

 |  3-minute read |   07-01-2019
  • Total Shares

লাইট, ক্যামেরা অ্যাকশন! সংসদ ভবনের সেন্টার স্টেজে এবার রাফাল বিতর্ক। ইতিমধ্যেই, এই বিতর্ক দেশের কঠিনতম ধাঁধার স্বীকৃতি পেয়েছে এবং এর সমাধান সূত্র কারুরই জানা নেই। এই বিতর্ক সম্পর্কিত প্রশ্নগুলোর উত্তরের আর প্রয়োজন নেই। এই বিতর্কে, কেউ জয়ীও হবে না, আবার কেউই পরাজিতও হবে না।

এই বাকযুদ্ধ ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে উঠছে। দেখে শুনে মনে হচ্ছে ডারউইনের যোগ্যতমের উদ্বর্তন (সারভাইভাল অফ দ্য ফিটেস্ট)  তত্ত্ব এ ক্ষেত্রে একেবারে প্রযোজ্য।

তাহলে এই লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত কে জয়ী হবে? এর উত্তর আমাদের জানা নেই। কিন্তু একটি কথা আমাদের স্বীকার করে নিতেই হবে - এই বিতর্ক ভারতীয় রাজনীতির ময়দানে একজন 'অ্যাংরি উওম্যান'-এর জন্ম দিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ সাহসী, জেদি এবং যে কোনও নেতাকে আক্রমণ করার মতো ক্ষমতা তাঁর রয়েছে। তাই তো তিনি যখন সংসদে নিজের পক্ষে বলছিলেন তখন বিরোধীরা পালাবার পথ পাচ্ছিলেন না। সংসদে তাঁর বক্তৃতা রাহুল গান্ধীকেও বিপাকে ফেলে দিয়েছিল। রাহুল অবশ্য এবারও দু'বার চোখ টিপলেন। কিন্তু রাহুলের শরীরের ভাষায় স্পষ্টতই আত্মবিশ্বাসের অভাব লক্ষ করা গেল।

body_010719030124.jpgনির্মলা সীতারমণের বক্তৃতা বিপাকে ফেলে দিয়েছিল রাহুল গান্ধীকে [ছবি: ডেইলিও]

সীতারমণ ঠিক কী বলেছিলেন? গত বৃহস্পতিবার সংসদে রাফাল প্রসঙ্গ তুলে ধরেন রাহুল গান্ধী। প্রত্যুত্তরে বেশ ধারালো জবাব দিলেন সীতারমণ। নিজেদের মেয়াদকালে রাফাল চুক্তি সম্পন্ন না করার জন্যতিনি কংগ্রেসকে দায়ী করলেন। তাঁর অভিযোগ নিজেদের ভুল এখন অন্যদের উপর চাপাতে চাইছে কংগ্রেস।

তাঁর কথায়: "আপনারা এই চুক্তি মাঝপথেই বন্ধ করে দিলেন একবারের জন্যও বায়ুসেনার সমস্যার কথা না ভেবে। এই চুক্তি আপনারা সম্পন্ন করলেন না কারণ তা আপনাদের পছন্দসই হয়নি। এই চুক্তি থেকে আপনারা কোনও পয়সা পাননি।" এর পর তীর লক্ষভেদ করে সে ভাবেই রাহুল গান্ধীর উদ্দেশ্যে তিনি বললেন, "প্রধানমন্ত্রীকে চোখ টিপে বা জড়িয়ে ধরে আপনি কি ক্ষমাপ্রার্থনা করেছেন? সংসদ এ ভাবে চলে না।" শেষ কথাগুলো রীতিমত গর্জে উঠেই বললেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী।

body1_010719030229.jpgসকলকে আক্রমণ করার মতোই ক্ষমতা রয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর [সৌজন্যে: লোকসভা টিভি]

প্রতিরক্ষামন্ত্রীর বক্তৃতায় গান্ধী পরিবারও রেহাই পাননি। তিনি বললেন, "আমি এমন কোনও পরিবার থেকে আসিনি যা নিয়ে আমি গর্ব করতে পারি। প্রধানমন্ত্রী নিজেও খুব দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে এসেছেন। নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেই তিনি আজ এই জায়গায় পৌঁছেছেন। আমার সম্মানহানি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীরও সম্মানহানি হয়নি। আমরা খুব সাধারণ মানের জীবন কাটিয়েছি।"

উত্তরে রাহুল গান্ধী শুধু এইটুকুই বলতে পেরেছিলেন, "আপনি আড়াই ঘণ্টা ধরে বক্তৃতা দিলেন। কিন্তু একবারও জানালেন না কী ভাবে অনিল আম্বানি এই বরাতটা পেলেন।" যাই হোক এই বিতর্ক যে আরও কিছুকাল চলবে তা বলাইবাহুল্য। আসলে রাহুল গান্ধী এই পরিস্থিতির জন্য ঠিক তৈরি ছিলেন না। 'অ্যাংরি উওম্যান'-এর এই মূর্তি দেখে তিনি খানিকটা হতচকিতও হয়ে পড়েছিলেন।

প্রতিরক্ষান্ত্রীর এই বক্তৃতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ তাঁর সহকর্মীরা। প্ৰধানমন্ত্ৰী মোদী থেকে অরুণ জেটলি সকলেই তাঁকে অভিবাদন জানিয়েছেন।

বিরোধীদের চ্যালেঞ্জটা সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করেছেন তিনি। ক্ষুধার্থ সিংহীর মতো ঠিক সময় শিকারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। পুরুষদের দুনিয়ায় তিনি সত্যিকারের অ্যাংরি উওম্যান রূপে অবতীর্ণ হলেন।

বিরোধীরা এবার তাঁকে আক্রমণ করার আগে দু'বার ভাববেন।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUCHARITA SEN SUCHARITA SEN @twittswitch

Associate Editor, ITGD

Comment