সব শরিককে নিয়ে চলতে পারতেন, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নেতৃত্ব দিতেন বাজপেয়ী

তাঁর কথাতেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কয়লামন্ত্রকের দায়িত্ব নিতে রাজি হন

 |  2-minute read |   17-08-2018
  • Total Shares

ভারতে জাতীয় স্তরের জোট রাজনীতিতে সবচেয়ে সফল ব্যক্তি হলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। তিনি সফল হয়েছিলেন তাঁর উদারতা, তাঁর সহিষ্ণুতা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষমতা—মূলত এই তিন গুণের জন্য।

ভারতীয় রাজনীতির আজকের যে ধারা তাতে আঞ্চলিক দলগুলো অনেক শক্তিশালী হয়েছে। সেই দলগুলোর শক্তি যাই হোক, তাদের নানারকম দাবি-আব্দার মানতে পারুন বা না পারুন, তাঁদেরকে নিয়ে চলার বরিষ্ঠ মানসিকতা অটলবিহারী বাজপেয়ীর মধ্যে দেখেছি। একটি কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, বাজপেয়ীর যে মানসিকতা ছিল, ভারতের রাজনীতিতে বিজেপি তো নয়ই, অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের কোনও নেতার সেই মানসিকতা আমরা দেখতে পাইনি।

vajpayee_mamata_pti_081718024041.jpgমমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অটলবিহারী বাজপেয়ী ও লালকৃষ্ণ আডবাণী (পিটিআই)

নরসিমহা রাও সমর্থন নিয়ে সরকার চালিয়েছেন, মনমোহন সিংও জোট সরকার চালিয়েছেন। তাঁদের নেপথ্যে তাঁদের দল ছিল, দলের অন্য নেতারা ছিলেন। তবে বাজপেয়ী সক্রিয় ভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এবং তা তাঁর দলের ঊর্ধ্বে উঠেই। আমার মনে হয়, দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে নেতৃত্ব দেওয়াই তাঁর সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য।

অটলবিহারী বাজপেয়ী এমন একটি রাজনৈতিক দলের নেতা ছিলেন যে রাজনৈতিক দলের অনেক গোঁড়ামিই সেই সময় মেনে নিতে পারতেন না সেই সময়ে এনডিএ-র অনেক শরিক দলই। তা সত্ত্বেও তারা শরিক হিসাবে ছিল। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই।

এক সময় লালকৃষ্ণ আডবাণীর সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাক্যালাপ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বাজপেয়ীজির কাছে ওঁর ছিল অবারিত দ্বার। যখনই কোনও সঙ্কট হয়েছে, বাজপেয়ীজিই ওঁকে সামলে নিয়েছেন। বাজপেয়ী যত দিন প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, তখন উনিও এনডিএ-তে ছিলেন, এমনকি মন্ত্রিত্ব ছেড়ে দেওয়ার পরেও। পরে উনি আবার যোগ দেন। তখন কয়লামন্ত্রক উনি কিছুতেই নিতে রাজি হচ্ছিলেন না। ভোটের আগে সেই মন্ত্রক নিলে ওই মন্ত্রকের কলঙ্ক তাঁর গায়ে লাগার আশঙ্কা ছিল, তাই উনি রাজি হচ্ছিলেন না। কিন্তু তাঁর জেদ ভাঙিয়ে তাঁকে কয়লামন্ত্রকে রাজি করান অটলবিহারী বাজপেয়ীই।

এখন যে এনডিএ সরকার চলছে সেখানে তো আমরা দেখছি যে শিবসেনা ও তেলুগু দেশম পার্টির মতো বিভিন্ন দল এনডিএ-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলছে। তবে অটলবিহারী বাজপেয়ীর মতো নেতা থাকলে এখন এনডিএ অনেক শক্তিশালী হতে পারত। বিজেপি এখন বাজপেয়ী আমলের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। মাত্র দু’টি আসন থেকে আজকের এই অবস্থায় নিয়ে আসার নেপথ্যেও তো বাজপেয়ীর উদারপন্থী মানসিকতা ও নেতৃত্বের বলিষ্ঠতা রয়েছে। বিজেপির ভিত শক্ত করেছেন তাঁর নেতৃত্বই।

রাজনীতির গোঁড়ামি তাঁর একেবারেই ছিল না। কলকাতায় এলে উনি ঘনশ্যাম বেরিয়ালের বাড়িতে উঠতেন। সন্ধ্যায় প্রিন্সেপ ঘাটের কাছে যেতেন ফুচকা খেতে। এটা নব্বইয়ের দশকের কথা।

body_vajpayee_pti_081718024136.jpgতিনি ছিলেন অন্য মেজাজের মানুষ (পিটিআই)

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতেও তিনি এসেছেন, এইরকম একটা ছোট বাড়িতে, ছোট ঘরে তিনি দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। একবারের জন্যও বিরক্ত হননি। ঘরে ছোটরা খেলা করেছে। সকলের সব ভাষা হয়তো বুঝতে পারছিলেন না, তবে বিরক্ত হচ্ছিলেন না। কংগ্রেস ঘরানার রাজনীতি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যেমন মানিয়ে চলতে সমস্যা হয়নি, তেমনি কালিঘাটের ওই ঘুপচি ঘরে সময়ও কাটিয়েছিলেন সাবলীল ভাবেই। ঘুপচি ঘরে ঘামছিলেন, তবু হাসি মুখেই ছিলেন।

রাজীব গান্ধীর স্নেহের পাত্রী ছিলেন মমতা। সেই মমতাকে উনি নিজে থেকে বলেছিলেন তাঁর বাড়িতে যাবেন রত্নগর্ভা মাকে দেখতে। এটাই তাঁর উদারতার উদাহরণ।

সাংবাদিক হিসাবে বিজেপির একটি ন্যাশনাল এগজিকিউটিভ কমিটির বৈঠকে বাজপেয়ীকে আবার দেখলাম অন্য ভাবে। গোয়ার পাঞ্জিমে সেই বৈঠক হয়। সেখানে রাতে বিচ পার্টি হচ্ছিল। উনি এলেন ট্রাউজার্স ও টি-শার্ট পরে। সেখানে কবিতা পাঠ করলেন। সকলের সঙ্গে গল্প করলেন। আমাদের সঙ্গেও আলাদা করে কথা বললেন। তখন তিনি আর রাজনীতিক নন। বিজেপি ঘরানার বৈঠক, তাই সকলে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবি পরে সেখানে ছিলেন, বাজপেয়ী ছিলেন অন্য মেজাজে, একেবারে খেলোয়াড়ের মতো।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRABIR GHOSAL PRABIR GHOSAL

TMC MLA & former Sr. Journalist

Comment