অসমের বাসিন্দারা কেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য মানছেন না?

বন্ধ ছিল না সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, রয়েছে পঞ্জীকরণের সুযোগ

 |  3-minute read |   31-07-2018
  • Total Shares

প্রতিবেশী রাজ্য অসমের চোখে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখন ভিলেন। ৩০ জুলাইয়ের সাংবাদিক বৈঠক অসমবাসীকে বিস্মিত করেছে, ক্রুদ্ধ করেছে। কিসের ভিত্তিতে এবং কী উদ্দেশ্যে অসমের নাগরিক পঞ্জীকরণ (এনআরসি) নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করলেন। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে অসমবাসীর কাছে সেটাই স্পষ্ট নয়। অসমে কোনও সোশ্যাল মিডিয়া না ছিল বন্ধ, না কোনও মোবাইল পরিষেবায় কোনও ব্যাঘাত ঘটেছে। সারা বিশ্বের সঙ্গে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভাবেই তারা যোগাযোগ রক্ষা করেছে।

অসমবাসী এতটাই ক্রুদ্ধ যে অসমের প্রায় কোনও সংবাদমাধ্যমেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাংবাদিক বৈঠকের কোনও খবর প্রচার করা হয়নি। অসমবাসী বিস্মিত যে কেন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সহকর্মী ফিরহাদ হাকিমকে সঙ্গে নিয়ে তিনি এই সাংবাদিক বৈঠক করেছেন। ফিরহাদ হাকিমের সঙ্গে অসম বা তার নাগরিকত্ব পঞ্জীকরণের কোনও সম্পর্ক নেই এবং আদৌ যদি পশ্চিমবঙ্গে কোনও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটে তা হলে ফিরহাদ হাকিমেরই ভূমিকা কী হবে, কারণ তিনি কোনও ভাবেই স্বরাষ্ট্র দপ্তরের সঙ্গে যুক্ত নন।

এটি ঠিক যে ৪০,০৭,৭০৭ নাগরিকত্ব পঞ্জীকরণ তালিকার বাইরে রয়েছেন এবং এটাও ঠিক যে আগামী এক মাস এই ৪০ লক্ষ মানুষের নিজের তথ্যপ্রমাণ দাখিল করার সম্পূর্ণ সুযোগ আছে। যে প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করেছেন তা একেবারেই ভুল। তা ছাড়া এটা চূড়ান্ত তালিকা নয়। নাম নথিভুক্ত করার জন্য ও আপত্তি জানানোর জন্য সময় থাকছে ৩০ অগস্ট থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। দরকারে তা ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বাড়ানো হতে পারে।

bakbody_073118040505.jpgএটা চূড়ান্ত তালিকা নয়

সুপ্রিম কোর্টের নির্দিষ্ট আদেশ আছে যে কোনও মানুষ যদি ভারতবাসী হন অথচ তিনি যদি অসমের অধিবাসী হন তা হলে তাঁকে কী ভাবে নিজের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হবে। এই নির্দেশর কোথাও কোনও ধোঁয়াশা নেই। এই নির্দেশের কারণে অসমের প্রতিটি ভারতবাসী, তিনি বাঙালি হোন বা যে কোনও প্রান্তের হোন না কেন, তাঁর নিশ্চিন্ত তাঁদের মধ্যে কোনও ক্ষোভ নেই। উল্টে তাঁরা মনে করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই উস্কানিমূলক সাংবাদিক বৈঠক তাঁদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারে।

যেখানে বদরুদ্দিন আজমলের মতো কট্টরপন্থী নেতাও ঘোষণা করে দিয়েছেন যে এই নাগরিকত্ব পঞ্জীকরণ পদ্ধতির সঙ্গে একমত এবং জাতিধর্ম নির্বিশেষে মানুষ যদি ভারতবাসী হন, পঞ্জীকরণে সহায়তা করবে তাঁর দল। সেখানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই সাংবাদিক বৈঠক অসমবাসীর কাছে একেবারেই অনভিপ্রেত।

শিলচরের সুস্মিতা দেব মমতার সুরে সুর মিলিয়েছেন। তাঁর পিছনেও অসমের ভারতীয়রা রাজনীতির গন্ধ পাচ্ছেন।

এই তালিকায় নেই এমন কোনও মানুষ যদি মুসলমান হন এবং তাঁর তিনি যদি ভারতীয় হন তা হলে তাঁর নাগরিকত্ব প্রমাণে সম্পূর্ণ ভাবে সুযোগ দেওয়া আছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামায়।

যেহেতু রেশনকার্ড বা আধার কার্ড বা ভোটার পরিচয়পত্র এই সবকিছুই এক ধরনের রাজনৈতিক দল দায়িত্ব নিয়ে বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের পাইয়ে দেওয়ার কাজ অত্যন্ত সুচারু ভাবে সম্পন্ন করেছেন, সেই জন্য সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশনামায় নাগরিকত্ব প্রমাণের বিস্তারিত বিবরণ আছে।

একদলের প্রান্তিক মানুষ অবশ্য তাঁর সামাজিক ও আর্থিক অবস্থার কারণে ভারতবাসী হওয়া সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় নথিপত্র পেশ করতে পারছেন না, কিন্তু সেই সংখ্যাটি একবারেই নগণ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টিকে যে ভাবে উপস্থাপিত করেছেন এবং যে ভাবে তাঁর প্রতিনিধি দল অসমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাতে অসমের ভারতীয় নাগরিকরা আতঙ্কিত।

নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে অসমের ভারতবাসীদের দীর্ঘদিনের লড়াইয়ের প্রতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবমাননা বলে মনে করছেন। অসমের মানুষ মনে করছেন মুসলমান তোষণের রাজনীতি করতে গিয়ে মমতা নিজেকে দেশবিরোধী কাজর সঙ্গে সম্পৃক্ত করছেন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PRASENJIT BAKSI PRASENJIT BAKSI @baksister

The writer is a veteran journalist.

Comment