যোগীই প্রথম নন, কী ভাবে হিন্দুত্ববাদীরা রামায়ণ ব্যবহার করেছেন প্রান্তিকদের কাছে টানতে

কেউ বলছেন হনুমান মন্দিরের পূজারী হন দলিত, এর পর কী?

 |  3-minute read |   04-12-2018
  • Total Shares

ভোট এলেই নিত্য নতুন বিতর্ক শুরু হয়ে যায়, এখন জনপ্রিয় এবং অত্যন্ত জাগ্রহ দেবতা হনুমান রয়েছেন সেই বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে – বিতর্ক তাঁর ‘জাত’ নিয়ে। এটাকে ইস্যু করে এখন টেলিভিশন চ্যানেল, বিভিন্ন সংবাদপত্র-পত্রিকা, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, বিভিন্ন সাধুসন্ত, রাজনীতিক, দলিত এবং দলিতদের নিয়ে বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনে যুক্ত কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে জোর তরজা চলছে।

উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর একটি মন্তব্যের জেরে এই হইচই শুরু হয়। রাজস্থানে একটি নির্বাচনী সভায় যোগী আদিত্যনাথ মন্তব্য করেন যে হনুমান হলেন আমাদের সমাজের বনবাসী, বঞ্চিত ও দলিত।

yogi-reuters-inside__120418062218.jpgউত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্যে এখন ঝড় বইছে (ছবি: রয়টার্স/ফাইল)

এই মন্তব্য করে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির মধ্যে দলিতদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছেন যোগী আদিত্যনাথ। তবে ঘটনা হল এই দাবি যে সব নেতা করছেন আাদিত্যনাথ মোটেই তাঁদের মধ্যে প্রথম নন। এখন অনেকেই বলছেন যে আরএসএস পরিচালিত সাপ্তাহিক পাঞ্চজন্য-তে গুরুত্বপূর্ণ বহু বিজেপি এবং আরএসএস নেতা আগেই লিখেছেন যে রামায়ণ এবং রামচরিত মানসে বর্ণিত হনুমান, সুগ্রীব ও জাম্বুবান ছিলেন বনবাসী ও বঞ্চিত।

আমরা জানি যে রামায়ণে হনুমানকে বাতাসের দেবতা পবনের পুত্র বলে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে যে তাঁর মায়ের নাম অঞ্জনি। রামায়ণ কথায় কোথাও তাঁকে দলিত-বংশীয় বলে উল্লেখ করা হয়নি। বিজেপি নেতাদের এ হেন বক্তব্যের একটামাত্র যুক্তি থাকতে পারে, তা হল এই বানর-নায়ক, যাঁদের আমরা দেবতাজ্ঞান করি তাঁরা সকলেই বনে থাকতেন, মানে বনবাসী ছিলেন।

গোস্বামী তুলসীদাসের লেখা রামচরিতমানস এবং হনুমান চালিশার (যেখানে হনুমানের জীবনকথা বর্ণনা করা হয়েছে) মাধ্যমে হনুমান ভীষণ ভাবে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। এই দুই রচনারও কোনও অংশেই হনুমানকে দলিত বা বঞ্চিত বলে বর্ণনা করা হয়নি।

নির্বাচনের মুখে যে ভাবে ঠাকুরদেবতা ও ঈশ্বরের জাতপান নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। তবে এ কথাও বলতে হবে যে এই সব আলোচনাই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তবে এই ধরনের ব্যাখার মধ্য দিয়ে গেরুয়া মতবাদে বিশ্বাসীরা একটা বার্তা দিতে চাইছেন যে রাবনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বনবাসী বানররা শ্রীরামচন্দ্রকে সমর্থন করেছিলেন, আসলে এই মন্তব্যের মাধ্যমে তাঁরা প্রান্তিক দলিত ও আদিবাসীদের যে বার্তা দিতে চাইছেন তা হল তাঁরা যেন হিন্দুত্বের দিকে যোগ দেন, যাঁরা রামরাজ্য উদ্ধারে ব্রতী হয়েছেন। হিন্দুত্ববাদীরা এ কথাও বলছেন যে তাঁরাই রামজন্মভূমিতে মন্দিরের জন্য লড়াই করছেন তাই এই লড়াইয়ে সংস্কৃতিগত ভাবে ও রাজনৈতিক ভাবে দলিত ও আদিবাসীদের একযোগে তাঁদের পাশে থাকা উচিত।

hanuman-inside_12021_120418062251.jpg তাঁর মন্তব্যের অর্থ ছিল, বানররা যে ভাবে শ্রীরামচন্দ্রকে সমর্থন করেছিলেন, দলিত ও আদিবাসীদেরও উচিত সেই ভাবে রামরাজ্য গড়তে সাহায্য করা (ছবি: উইকিমিডিয়া কমন্স)

পাঞ্চজন্যে যে সব নেতা এই ধরনের লেখা লিখেছেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গারু  লক্ষ্মণ – একমাত্র দলিত নেতা যিনি বিজেপি সভাপতি হয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি বার্তা দিতে চেয়েছেন যে বানর-দেবতারা ছিলেন রামের ভক্ত, অর্থাৎ সমাজের প্রান্তজনরা রামেরই ভক্ত ছিলেন এবং এই কারণে এখন রামজন্মভূমিতে মন্দিরের জন্য লড়াইয়ে তাঁদেরও পাশে থাকা উচিত।

এর ফলে সামগ্রিক ভাবে ধর্মীয় স্মৃতিকে নতুন করে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে এবং দলিত ও আদিবাসীদের মতো প্রান্তজনদের হিন্দুত্ব রাজনীতির ধারার সঙ্গে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।এর মাধ্যমে রাম নামের মধ্যে যে দ্যোতনা, বিশ্বাস ও স্মৃতি রয়েছে তার মধ্যে নিহিত শক্তিকে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে।

এই ধরনের প্রচারের কী প্রভাব নির্বাচনের ক্ষেত্রে পড়বে সে কথা অনুমান করা খুবই কঠিন, তবে যোগী আদিত্যনাথের মন্তব্য সমাজ-রাজনীতিকে অন্য দিকে ঘুরিয়ে দেবে।

দলিত উত্তরণ সমিতির ব্যানারে গত ১ ডিসেম্বর দলিতদের অধিকার নিয়ে লড়াইয়ের কর্মীরা লখনউতে বিভিন্ন হনুমান মন্দিরে জড়ো হন এবং নিজেদের ‘দাবি জানাতে’ থাকেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, যেহেতু “হনুমান আমাদেরই জাতের তাই সব হনুমান মন্দিরই আমাদের।” ওই আন্দোলনকারীরা কোথাও মন্দিরের ফটকে ধর্না দেন, কোথাও তাঁরা হনুমান চালিশা জপ করতে করতে মন্দিরে প্রবেশ করেন।

bhim-army-inside_120_120418062337.jpgচন্দ্রশেখর বলেছেন হনুমান মন্দিরগুলিতে দলিত পূজারী থাকা উচিত (ছবি: এএনআই/ফাইল)

তরুণ দলিত নেতা এবং ভিম আর্মির প্রধান চন্দ্রশেখরও সম্প্রতি পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে একটি সমাবেশ করেন এবং সমস্ত হনুমান মন্দির ‘নিয়ে নিয়ে’ সেখানে দলিত পূজারী নিয়োগ করার কথা বলেন।

অর্থাৎ উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর দাবি ব্যুমেরাং হয়েছে এবং সমাজে উদ্বেগজনক ও দ্বন্দ্বের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই কৌশলের নির্বাচনী প্রভাব তর্কসাপেক্ষ, তবে রাজনৈতিক নেতানেত্রীদের উচিত তাঁরা কোনও মন্তব্য করার আগে তার সম্ভাব্য সামাজিক প্রভাবের কথা যেন বিবেচনা করেন।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

BADRI NARAYAN BADRI NARAYAN

Author is director, GB Pant Social Science Institute, a constituent institute of Central University of Allahabad

Comment