ভারতীয় ক্রিকেটের শেষ কলঙ্কিত অধ্যায়ে শুধু খলনায়করাই আছে, নায়ক নেই

নাটক ছাড়া যেন ভারতীয় ক্রিকেট চিন্তাই করা যায় না

 |  4-minute read |   01-12-2018
  • Total Shares

২০১৭ সালের সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন দিনগুলিতে ভারতীয় ক্রিকেট যখন ক্রমেই এক ভয়াবহ নিকষ ভয়াল গহ্বরের মধ্যে দিয়ে চলেছে তখন তারা আলোর একটা বিন্দু দেখতে চাইছিল।

কিন্তু ভারত যখন সব ধরনের ফর্ম্যাটে ক্রিকেটবিশ্বকে শাসন করতে শুরু করল তখন কোনটা কতটা অন্ধকার ছিল?

বিরাট কোহলির মধ্যে ভারত নতুন এক নেতাকে দেখতে পেল আর তিনি নিজের এবং দলের নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে নিলেন। সীমিত ওভারের ক্রিকেটের অধিনায়কত্ব ছাড়ার যে নাটকীয় সিদ্ধান্ত মহেন্দ্র সিং ধোনি নিলেন তখন এই দলের দায়িত্ব নিলেন বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ব্যাটসম্যান। অনিল কুম্বলের মধ্যে ভারত সেই কোচকেই পেয়েছিল যিনি এই খেলাটি তো বোঝেনই, তিনি অভিজাত ড্রেসিং রুমের ভিতরের মতিগতিও খুব ভালো ভাবে জানেন।

anil-kumble-reuters__120118052159.jpg কাগজে কলমে কোনও ভুলই করেনি কুম্বলে, আরও তাৎপর্যপূর্ণ হল, তিনি সবেমাত্র এক বছর পূর্ণ করেছিলেন। (ছবি: রয়টার্স)

অধিনায়ক হলেন কোহলি এবং কোচ হলেন কুম্বলে। এ যেন স্বর্গীয় ব্যাপার। কোনও ভুল হওয়ার কোনও উপায়ই নেই। তাঁরা যা কিছু করার তা করলেনও।

ইংল্যান্ডে ভারতের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলার শেষ পর্যায়ে অধিনায়ক ও কোচের মধ্যে ফাটল চওড়া হতে লাগল, সেই ফাটল এতটাই চওড়া হয়ে গেল যে তার মধ্যে ছোটখাট আস্ত একটা দেশই ঢুকে যাবে, তার পরেও হয়তো খানিকটা জায়গা থাকবে। কোচ হিসাবে তাঁর স্টাইল কোহলির পছন্দ নয় এবং তাঁকে নিয়ে কোহলির কিছু সমস্যা রয়েছে বলে জানানোর পরের দিনই কুম্বলে পদত্যাগ করলেন।

ভারতীয় ক্রিকেটের দুনিয়ায় যেন ঝটকা লাগল। কাগজে-কলমে কুম্বলে কোনও ভুলই করেননি। তাঁর সময়ে ১৭টি টেস্টের মধ্যে ভারত ১২টি জিতেছে, ১৩টি ওয়ানডে-র মধ্যে জিতেছে ৮টি এবং ৫টি টি-২০ ম্যাচের মধ্যে জিতেছে ২টি। আরও তাৎপর্যের ব্যাপার হল, কুম্বলে মাত্র এক বছর পূর্ণ করেছিলেন।

13virat-ravi_1129180_120118052226.jpg ভারত ঘরের মাঠে টেস্টে জয় ও বিদেশের মাটিতে পরাজয়ের ধারা বজায় রেখেই চলছে। (ছবি: রয়টার্স)

আবার সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে গেল যখন কোহলি তাঁর ইচ্ছার কথা জানালেন এবং আবার ড্রেসিং রুমে রবি শাস্ত্রীর প্রত্যাবর্তন ঘটল – এই প্রথম বার কোচ হিসাবে। একটি নতুন জুটি তৈরি হল এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ভারত আবার যথারীতি দেশের মাঠে টেস্ট জিততে এবং বিদেশের মাঠে টেস্ট হারতে শুরু করে দিল।

জাতীয় দলের অধিনায়কের সঙ্গে ফাটল চওড়া হওয়ার ১৭ মাসের মধ্যে ভারতীয় ক্রিকেট দলে আবার নতুন একটি বিতর্ক তৈরি হয়েছে।

এ বার অবশ্য সমস্যায় পড়েছেন একজন খেলোয়াড়। মিতালি রাজ, বিশ্বে যে মাত্র সাতজন মহিলা ক্রিকেটার আন্তর্জাতিক স্তরে টি-২০তে ২,০০০-এর উপরে রান করেছেন এবং দু’টি বিশ্ব টি-২০ ম্যাচে সেরা প্লেয়ার ঘোষিত হয়েছেন তাঁকেই ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সেমি-ফাইনালে বাদ দিয়ে দেওয়া হল। ভারত ম্যাচ হেরে যাওয়ার পরেও অধিনায়ক হরমনপ্রীত কাউর তাঁর সিদ্ধান্তের পক্ষেই সওয়াল করলেন এবং কোনও পরিস্থিতিতেই তিনি দুঃখ প্রকাশ করলেন না।

সব তছনছ হয়ে গেল। খেলা শেষ হওয়ার পরে হরমনপ্রীতকে মিথ্যাবাদী বললেন মিতালির ম্যানেজার, একই সঙ্গে তিনি বললেন যে ভারতের টি-২০ দলের অধিনায়ক ধান্দাবাজ। তার পরে যে টানটান উত্তেজনা তৈরি হল এবং গল্প যে দিকে মোড় নিল তা কোনও ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমী দেখতে চাইবেন না।

mithali_raj-reuters__120118052314.jpgভারতীয় ক্রিকেটে এখন আবার নতুন এক বিতর্ক (ছবি: রয়টার্স)

ভারতে ফিরে প্রথম কামানটি দাগলেন মিতালি – কোচ রমেশ পওয়ারের বিরুদ্ধে তাঁকে হেনস্থা করার কথা বলে বিসিসিআই-কে তিনি চিঠি দিলেন এবং বললেন সিওএ সদস্য ডায়ানা এডুলজি হলেন পক্ষপাতদুষ্ট। বিস্ফোরক ওই চিঠিতেই স্পষ্ট হয়ে গেল যে মিতালি ভয়ঙ্কর ক্ষুব্ধ, তিনি চূড়ান্ত অপমানিত এবং বিচার চান।

আর তার পরে বিসিসিআইয়ে চিঠি দিলেন পওয়ার এবং তাঁকে ব্ল্যাকমেল করছেন বলে মিতালির দিকে অভিযোগের আঙুল তুললেন।

সবচেয়ে অভিজ্ঞ প্লেয়ারের বিরুদ্ধে বাছা বাছা শব্দ প্রয়োগ করলেন কোচ এবং বললেন: “”মিতালি রাজ দলের বরিষ্ঠ সদস্য। টিম মিটিংয়ে তাঁর অবদান তাকে ছিটেফোঁটা এবং তালিকায় শীর্ষে থেকে দল শেষ করার পরেও তিনি উৎসাহব্যঞ্জক একটি শব্দও উচ্চারণ করেননি।”

এবার ভারতীয় ক্রিকেটদল দেশে ফিরল।

powar_112918070359_120118052349.jpg তাঁর রিপোর্টে মিতালিকে ছেড়ে কথা বলেননি পওয়ার (ছবি: রয়টার্স)

ইংল্যান্ডে ২০১৭ সালে বিশ্বকাপে যখন মিতালির অধিনায়কত্বে ভারতীয় দল ফাইনালে পৌঁছে গেল তখন ভারতের সমর্থকরা বুঝেছিল যে আনন্দ-উল্লাস করার মতো আরও একটি দল তাদের হাতে রয়েছে। তবে খ্যাতির সঙ্গে দায়িত্বও বর্তায়। আর তরুণ সমাজের কাছে ভারতীয় ক্রিকেটাররাই তো আদর্শস্থানীয়।

হ্যাঁ, অনেক সমর্থকই মিতালির পক্ষে বলেছেন, যে কথা তাঁরা বলেছিলেন কুম্বলকে ফেরাতে চেয়ে। ২০১৭ সালে অনেক বিশেষজ্ঞই বলেছিলেন যে ভুল কুম্বলেরই, কারণ ড্রেসিংরুম তাঁর আর এক মুহূর্তের জন্যও চাইছিল না। একজন গর্বিত ক্রিকেটার এবং চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বেরিয়ে এসেছিলেন অনিল কুম্বলে। তিনি নিজের কাজ করে গিয়েছিলেন, কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতানোর কোনও অভিপ্রায় তাঁর ছিল না।

তবে এবারের ব্যাপারটা আরও অনেক বেশি জটিল। কোচের বিরুদ্ধে মিতালির চিঠিটি বেদনাদায়ক। তা ভারতীয় ক্রিকেটের অত্যন্ত দুর্বল দিকটিকে দেখিয়ে দিল। আমরা কি এমন কাউকে কিংবদন্তীর আসনে বসাতে পারি?

আরও পওয়ারও তাঁর রিপোর্টে মিতালিকে বিন্দুমাত্র ছেড়ে কথা বলেননি।

কোচ কী লিখেছেন তার একটা উদাহরণ:

“তাঁর মনোভাব আমাদের পীড়া দিয়েছে এবং আমি হতবাক হয়ে গিয়েছি। তাঁর আচরণ দেখে আমার মনে হয়েছে আগে মিতালি রাজ এবং তার পরে টিম ইন্ডিয়া।”

আমরা এখনও হরমনপ্রীতের কথা শুনিনি, তবে এটা নিশ্চিত যে এই নাটকে কোনও নায়ক নেই। হয় কোনও পক্ষই পুরো সত্য উন্মোচন করছেন না অথবা উভয় পক্ষই ঘটনার বিশ্লেষণ নিয়ে নিজের কাছে সৎ। আপনি যে ভাবেই বিষয়টিকে দেখুন না কেন, ভারতীয় ক্রিকেট কখনোই নাটক ছাড়া হতে পারে না।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment