ক্যান্সারের কারণ আবিষ্কৃত হল, এবার হয়তো ওষুধও বার হবে

রোগনির্ণয় সহজ হয়েছে, এ বার জাপানে গবেষণা করতে গেলেন বাঙালি বিজ্ঞানী

 |  2-minute read |   26-11-2018
  • Total Shares

চিকিৎসা নেই এ কথা ঠিক নয়, তবে তা খরচসাপেক্ষ তো বটেই। রোগটার ঠিক কারণ যে কী, তা জানা নেই কারও। আগুনে হাত দিলে হাত পোড়ে, স্কার্ভি মানে ভিটামিন সি-এর অভাব... কিন্তু ক্যান্সারের কারণ কী? কী ভাবে বুঝবেন ক্যান্সার হয়েছে?

ক্যান্সারের কোষ নিয়ে গবেষণা করে রোগনির্ণয় পদ্ধতি আবিষ্কার করে ফেলেছেন বিশ্বভারতীর রসায়ন বিভাগের তরুণ গবেষক হিমাদ্রিশেখর সরকার। খুব শীঘ্রই তাঁর গবেষণাপত্র প্রকাশিত হতে চলেছে রয়্যাল সোসাইটি অফ কেমিস্ট্রির জার্নালে। তাঁর আগের গবেষণাগুলি প্রকাশিত হয়েছে বায়োঅর্গ্যানিক কেমিস্ট্রি, কেমিক্যাল কমিউনিকেশন, সায়েন্টিফিক রিপোর্টস, অ্যানালিটিক্যাল কেমিস্ট্রি, এশিয়ান জার্নাল অফ অর্গ্যানিক কেমিস্ট্রি প্রভৃতি জার্নালে।

himadri-body-1_112618012311.jpgগবেষণাপত্রের ফ্লেক্সের সামনে হিমাদ্রিশেখর সরকার (ছবি: ফেসবুক)

হিমাদ্রিশেখর এখন জাপানের অন্যতম জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় তোহোকু ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার জন্য গিয়ে পৌঁছেছেন। এটি জাপানের সেরা বিশ্ববিদ্যালয় বলে পরিচিত। তিনি জাপান সোসাইটি ফর প্রোমোশন অব সায়েন্স (জেএসপিএস)-এ পোস্ট ডক্টরাল ফেলোশিপ পেয়েছেন, যা একা তাঁর কাছে নয় পুরো দেশের কাছেই গর্ব ও মর্যাদার। তিনি গবেষণা করছেন ডেভেলপমেন্ট অব মোলেকুলার সেনসরস্ ফর ডিফারেন্ট ডিজিজেস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অব ফোটোওভারভিবল মোলেকুলার ফর স্মল মোলেকুল-প্রোটিন ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে। সহজ কথায় আমাদের শরীরে যে সব কোষ রয়েছে সেই সব কোষের মধ্যে কোনও পরিবর্তন ঘটলে তা থেকে রোগ নির্ণয় করা। হাইপক্সিয়া নিয়ে যাঁরা গবেষণা করে সাফল্য পেয়েছেন, সেই গবেষকদলের সদস্য ছিলেন হিমাদ্রিশেখরও।

তাঁর সাম্প্রতিকতম গবেষণা ছিল ক্যান্সারের কোষ নিয়ে, গবেষকদের ভাষায় ৫-হাইড্রক্সিমিথাইলসাইটোসাইন। স্তন্যপায়ীদের প্রতিটি কোষেই এই যৌগটি থাকে, তবে মাত্রা সমান হয় না। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কোষে এই যৌগটির ঘনত্বও বাড়তে থাকে। নাইট্রোজেন সমৃদ্ধ এই যৌগটির পুরো কার্যকলাপ এখনও জানেন না বিজ্ঞানীরা। তবে হিমাদ্রিশেখর ও তাঁর সহ-গবেষকরা আবিষ্কার করেছেন, এই যৌগের ভারসাম্য থেকে কী ভাবে ক্যান্সার শনাক্ত যাবে।

himadri_112618012413.jpgবিশ্ববারতীতে সহ-গবেষকদের সঙ্গে হিমাদ্রিশেখর (ফেসবুক)

রক্তের কোষ নিয়েও তাঁরা গবেষণাটি করেছেন, তবে এ দেশে মানবশরীরে কোনও ওষুধ প্রয়োগ করার লাইসেন্স নেই বলে এখানে থেকে এই গবেষণা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। জাপানের বিশ্ববিদ্যালয়ের বৃত্তি পেয়ে সেখানে তিনি গবেষণা শুরু করায়, সাফল্য পেলে ওষুধও তৈরি করে ফেলা সম্ভব হবে। তবে সেই পর্যায়ের গবেষণা তখনই সম্ভব হবে যদি সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় তা চায়। ধরে নেওয়া যায়, হিমাদ্রিশেখর সফল হলে আর্থিক কারণে জাপান অন্তত গবেষণা বন্ধ করে দেবে না।

হিমাদ্রিশেখর বলেন, “আমরা যে কাজটি এখনও পর্যন্ত করেছি তাতে রোগ নির্ণয় করা যাবে, তবে এখনও তা মানবশরীরে এই পরীক্ষাপদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। তবে এই গবেষণা স্বীকৃতি পেয়েছে। আমার ধারনা, এই পদ্ধতি হবে সরল এবং রোগনির্ণয় তো বটেই, এর ফলে ক্যান্সারের চিকিৎসার খরচও কমতে পারে।”

হিমাদ্রিশেখররা যে পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাতে একটি ইঞ্জেকশন দেওয়ার পরে ওই বিশেষ যৌগটির রঙের পরিবর্তন হতে পারে, সেই পরিবর্তন দেখেই ক্যান্সার আছে কিনা তা নির্ণয় করে ফেলা সম্ভব হবে। যদি পুরোপুরি তাঁরা সফল হন, তা হলে হয়তো ভবিষ্যতে কেমো থেরাপিরও কোনও প্রয়োজন হবে না।

ভারতে গবেষণার জন্য অর্থ খুব একটা বরাদ্দ হয় না। তাই এ দেশে থেকে যে গবেষণা বেশি দূর এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়, তার সর্বশেষ উদাহরণ হলেন হিমাদ্রিশেখর সরকার। মেক ইন ইন্ডিয়া যদি ওষুধের পেটেন্টের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করতে হয় তা হলে তরুণ গবেষকদের কথা ভেবে উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরি করতে হবে। ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থাগুলিও এ নিয়ে ভাবতে পারে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment