১৩০ বছরের ভালোবাসা: গঙ্গারাম নামে কুমিরের মৃত্যু
কেউ স্নান করতে এলে সরে যেত, কখনও কাউকে আক্রমণ করেনি এই কুমির
- Total Shares
৮ জানুয়ারি ১৩০ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছে গঙ্গারাম।
গঙ্গারাম হল একটি কুমির যে আজীবন কাটিয়েছে ভাত আর ডাল খেয়ে, তার মৃত্যুতে সারা গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
ছত্তিশগড়ের বেমেত্রা জেলার বাওয়ামোহাত্রা গ্রামের মানুষজনের কাছে গঙ্গারাম ছিল ভালোবাসা আর শ্রদ্ধার পাত্র, গঙ্গারামও গ্রামের প্রত্যেককে ভালোবাসত এবং সম্মান করত।
শোনা যাচ্ছে গ্রামের লোকজন যখনই বুঝতে পারলেন যে গঙ্গারাম আর নেই তখনই তাঁরা কাঁদতে শুরু করে দিলেন। প্রাকৃতিক নিয়মেই বৃদ্ধ এই কুমিরের মৃত্যু হয়েছে।
People from Village Bawamohatra (Bemetra District, Chhattisgarh) gathered near community pond & started weeping after they saw a crocodile, called Gangaram, had died. Over 100 yrs old, 3-metre long reptile buried after his last rites performed by villagers https://t.co/1ZvKPeDF7k pic.twitter.com/RKyAD5iLyi
— Native Narratives (@indianarratives) 10 January 2019
সামান্য একটা সরিসৃপ, তবে তার অন্ত্যেষ্টিতে কমপক্ষে পাঁচশো মানুষ যোগ দিয়েছিলেন – যখন মাঝেমধ্যেই মানুষের আচরণে ও অত্যাচারে একের পর এক পশুর হত্যার কথা জানা যাচ্ছে এমন একটা সময় এই ঘটনা।
হিন্দুস্তান টাইমসের রিপোর্ট অনুযায়ী গ্রামবাসীদের উপস্থিতিতেই তার দেহের ময়নাতদন্ত হয় এবং তারপরে তার দেহ গ্রামবাসীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। গঙ্গারামের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক ছিল গ্রামবাসীদের। তাঁরা একটি লরিকে ফুল-মালায় সাজিয়ে তাতে ওই কুমিরটিকে নিয়ে শেষযাত্রা করেন।
গঙ্গারামের প্রতি তাঁদের গভীর ভালোবাসাও ছিল।
শেষযাত্রায় গঙ্গারাম (ছবি: টুইটার)
শুধুমাত্র বাওয়ামোহাত্রা গ্রামের বাসিন্দারাই গঙ্গারামকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে তার শেষযাত্রায় উপস্থিত ছিল, তা নয়। আশপাশের গ্রামের বাসিন্দারাও এসেছিলেন গঙ্গারামকে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে।
কিন্তু গঙ্গারামের সঙ্গে তাঁদের বন্ধন এত গভীর কী ভাবে -- কুমির মানে তো ভয়ঙ্কর এক প্রাণী যে সুযোগ পেলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভয়ঙ্কর ভাবে হামলা করে মানুষ ও অন্য প্রাণীদের উপরে – তার প্রতি কেন এক ভালোবাসা?
কুমির মানেই ‘ভয়ঙ্কর’ প্রাণী, এই ধারনাটাই বদলে দিয়েছিল গঙ্গারাম। তার গ্রামের মানুষও ‘ভয়ঙ্কর’ তকমাটা মুছে ফেলেছিল।
বাওয়ামোহত্রা গ্রামটিও একটা অনন্য পরিচয় বহন করতে শুরু করে। গ্রামের পুকুরে কুমিরের শান্তিপূর্ণ বসবাসের জন্য গ্রামটির নাম হয়ে যায় ‘কুমিরের গ্রাম’ (মগরমচ্ছ-ওয়ালা গাঁও)।
Villagers mourn death of Gangaram the crocodile ???? aged around 130 years in a village in Chhattisgarh,more than 500 people attend his last rites..Humanity still exist. pic.twitter.com/YkHkA6XE4t
— Dilawar Khan (@khan_dilawar89) 11 January 2019
গ্রামের কেউ যখন পুকুরের কোনও দিকে স্নান করতে নামতেন তখন অন্য দিকে চলে যেত গঙ্গারাম, পারষ্পরিক বোঝাপড়া ছিল এমনই।
বাসাওয়ান নামে এক গ্রামবাসীকে উদ্ধৃত করে হিন্দুস্তান টাইমস লিখছে, “যখন গ্রামের বাচ্চারা গঙ্গারামকে ঘিরে সাঁতার কাটত তখনও কোনও দিন ও কাউকে আক্রমণ করেনি বা কোনও ভাবে কারও কোনও ক্ষতি করেনি। গঙ্গারাম আসলে কমির ছিল না, ও ছিল আমাদের বন্ধু, ও ছিল ঈশ্বরের দান, তাই গ্রামবাসীরা ওর পুজো করত।” গ্রামবাসীরা নিয়মিত ভাবে গঙ্গারামকে খেতে দিত, সে জন্য কোনও দিনও শিকার করার প্রয়োজন হয়নি গঙ্গারামের।
যে পুকুরে গঙ্গারাম বাস করত সেই পুকুরের পাড়েই চোখের জলে তাকে সমাধিস্থ করে গ্রামবাসীরা। ১৩০টা স্মরণীর বছর। তার পুরো জীবনটাই ছিল ভালোবাসায় পরিপূর্ণ।
মানুষ ও বন্যপ্রাণীর দ্বন্দ্ব এবং নৃশংস ভাবে বন্যপ্রাণীর মৃত্যুর খবর যখন যখন পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন জায়গা থেকে তখন এই ঘটনা অন্য বার্তা বহন করছে, অন্তত কোনও কোনও মানুষের তো পশুপ্রেম রয়েছে।
হয়তো আরও অনেক গঙ্গারামই রয়েছে যাদের কথা আমরা জানি না, যারা এখও রয়েছে ভালোবাসার অপেক্ষায়।
আমরাও অপেক্ষা করছি আমাদের ভিতরে থাকা মনুষ্যত্বের প্রকাশের অপেক্ষায়।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে