ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের প্রিয় মিষ্টির সন্ধানে ক্ষীরপাইয়ে
সব মিষ্টান্নই হয় মিষ্টি দিয়ে তৈরি, না হলে রসে চোবানো, ব্যতিক্রম এই একটিই
- Total Shares
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের (১৮২০-১৮৯১) প্রিয় মিষ্টি কী ছিল বলতে পারেন?
উত্তরটা আমার জানা আছে এমন নয়, তবে আন্দাজ করতে পারি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর মনে করতেন, সন্দেশ খেয়ে কেউ যদি বুঝতে না পারেন সেটি নকুড় নন্দীর নাকি ভীমনাগের, তা হলে তিনি বাঙালি নন। বাঙালি মানে নিশ্চয়ই তিনি কলকাতার বাঙালির কথাই বলেছেন। কারণ বিদ্যাসাগরের ক্ষেত্রে এই কথা খাটে না। বিদ্যাসাগরের চেয়ে বয়সে ভীমচন্দ্র নাগের (প্রতিষ্ঠা ১৯২৬) দোকানও ছোট, আবার নকুড় নন্দীর (প্রতিষ্ঠা ১৮৪৪) দোকানও ছোট।
বানিয়ে রাখা আছে বাবরশা। (ছবি: ডেইলিও বাংলা)
তা হলে তাঁর প্রিয় মিষ্টি কী ছিল? সম্ভবত বাবরশা। ঘাটাল মহকুমার ক্ষীরপাইযের বাবরশা।
বিদ্যাসাগর মশাইয়ের জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রাম থেকে বড়জোর পাঁচ কিলোমিটার দূরেই ক্ষীরপাই, বিদ্যাসাগরের শ্বশুরবাড়িও এখানেই। এই ক্ষীরপাইযের নিজস্ব মিষ্টি হল বাবরশা। তবে এই নামের সঙ্গে খুব সম্ভবত প্রথম মোগল বাবরের কোনও সম্পর্ক নেই বলে ধরেই নেওয়া যায়। বাঙালির মিষ্টান্ন: ‘বাবরশা’ – নামে রচনায শ্যামল বেরা সম্ভাব্য যে উৎসের কথা বলেছেন, সেই অনুযায়ী, বর্গি আক্রমণের সময় এডওয়ার্ড বাবর নামে এক ব্রিটিশ সাহেব স্থানীয় লোকজনকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁকে সম্মান জানিয়েই এই মিষ্টির নাম হয় বাবরশা। তবে এই মিষ্টির উদ্ভাবক হিসাবে আশু ময়রা, পরাণ ময়রা বা পরাণ আটার নাম পাওয়া যায়। বাবু সাহা নামে একজনের নামও পাওয়া যায়। অনেকে মনে করেন বাবু সাহার নাম থেকেই বাবরশা। এই লেখাটির জন্য লোকসংস্কৃতি গবেষণার একটি সংখ্যা থেকে বেশ কয়েকটি তথ্য ব্যবহার করেছি, মূলত তাঁদের লেখা পড়েই ক্ষীরপাই যাওয়ার পরিকল্পনা।
বাবরশা তৈরি করছেন এক কারিগর। (ছবি: ডেইলিও বাংলা)
যিনিই এই মিষ্টির উদ্ভাবক হ’ন না কেন প্রশ্ন হল, বাবরশা নিয়ে লিখছি কেন? আমরা যত রকম মিষ্টি খাই, খেয়েছি বা শুনেছি সবই হয় মিষ্টি দিয়ে তৈরি করা হয়, না হলে রসে চুবিয়ে মিষ্টি করা হয়। ব্যতিক্রম শুধু বাবরশা।
ময়দা ও ঘি (১০:৬ অনুপাতে) মিশিয়ে ভালো ভাবে মাখতে হয়। তারপরে জল দিয়ে মিশিয়ে পাতলা করে নেওয়া হয়। এ বার একটি ছোট কড়াইয়ে নির্দিষ্ট ছাঁচের মধ্যে ফোঁটা ফোঁটা করে ফেলে নির্দিষ্ট আকৃতি দেওযা হয়। আজকাল অবশ্য ঘিয়ের বদলে সবই বনস্পতি।
এখনও মিষ্টি দেওয়া হয়নি। পাতে গরম বাবরশা দেওয়ার পরে ঠান্ডা করা মোটা রস তার উপরে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। তবে আগে এটি পরিবেশন করার সময় রসে চুবিয়ে দেওয়া হত। আমাদের ক্ষীরপাই যাওয়ার কারণটাই ছিল বাবরশা চেখে দেখা। সত্যিই, বেশ অন্যরকম খেতে।
বাঙালির স্বভাব হল কাঁকড়ার মতো, স্বজাতির খ্যাতি সহ্য করতে পারে না। সন্দেশের ব্যাপারে কৃতিত্ব দেয় পর্তুগিজদের... জাতভাইদের খাটো করার জন্য আর কী! রাজস্থানের ঘেওরের সঙ্গে নাকি বাবরশার প্রভূত সাদৃশ্য রয়েছে এবং তাদের দেখেই নাকি এটি বানানো শুরু হয় বলে অনেকে মনে করেন। কী মুশকিল, উল্টোটাও তো হতে পারে!