ইউরিক অ্যাসিড কমানোর কয়েকটি সহজ উপায়
বিকল্প নেই, তাই দিনে অন্তত আট গ্লাস জল পান করুন
- Total Shares
আমার কাছে যে সমস্ত রোগী ওজন কমানোর জন্য আসেন তাঁদের অধিকাংশের রক্ত পরীক্ষায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পরিমাণে ইউরিক অ্যাসিড লক্ষ করা যায়। নিরামিষাশীদের ক্ষেত্রেও এই সমস্যা রয়েছে। এর থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার, খাদ্যতালিতায় কোনও সমস্যা আছে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড যদি নিয়ন্ত্রণ না করা যায় তা হলে বাতের সমস্যা দেখা দিতে পারে এবং কিডনিতে পাথর তৈরি হতে পারে। এমনকি, এ থেকে কিডনি চিরতরে বিকলও হয়ে যেতে পারে।
চিনি থেকে সাবধান
ইউরিক অ্যাসিড জিনিষটা কী?
ইউরিক অ্যাসিড এক ধরণের রাসায়নিক যা খাবার হজম করবার সময় শরীরে উৎপন্ন হয়। ইউরিক অ্যাসিডে 'পিউরিনস' নামে এক ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা কিছু কিছু খাবারের মধ্যে পাওয়া যায়।
ইউরিক অ্যাসিড রক্তের সঙ্গে মিশে গিয়ে কিডনিতে পরিশ্রুত হয়ে প্রস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে যায়। কিন্তু মাঝে মধ্যে শরীর এতটা বেশি পরিমাণের ইউরিক অ্যাসিড উৎপাদন করে ফেলে যে তা ঠিক মতো পরিশ্রুত হতে পারে না। পারিবারিক রোগভোগের ইতিহাস, কর্মঠ না হওয়া এবং প্রচুর পরিমাণ আমিষ খাওয়ার ফলে শরীরে অত্যধিক ইউরিক অ্যাসিড উৎপন্ন হতে পারে।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে ভিটামিন ই
কী ভাবে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে?
ওজনের দিকে নজর রাখুন। মেদযুক্ত কোষ এবং বাড়তি ওজনের সমস্যা থাকলে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে পারে।
যে সব খাবারে পিউরিনের পরিমাণ বেশি সেই খাবারগুলো কমিয়ে দিতে হবে। মাংস, ডিম বা মাছে পিউরিন বেশি মাত্রায় থাকে। এ ছাড়া মাশরুম, মসুরের ডাল ও পালংশাক খাওয়াও কমাতে হবে।
চিনি থেকে সাবধান। বিভিন্ন ধরণের পানীয় ও মিষ্টি খাবারে ফ্রুক্টোস নামের একটি জিনিস ব্যবহৃত হয়। এই ফ্রুক্টোস কিন্তু ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। সমীক্ষায় দেখা গেছে যে যাঁরা বেশি পরিমাণে মিষ্টি পানীয় খান তাঁরা বেশি বাতের সমস্যায় ভোগেন।
এছাড়া, মদও ইউরিক অ্যাসিড বাড়াতে পারে। অতিরিক্ত পরিমাণ বিয়ার পান করলে গাউটের সমস্যা হয়।
বেশি মাত্রায় পুষ্টিকর খাবার খেলেই শরীর সুস্থ রাখা যায় না। অবিলম্বে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি মাত্রায় পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ খাবার খাওয়া বন্ধ করুন। অতিরিক্ত পুষ্টি শরীর সঞ্চয় করে রাখতে পারে না। সে ক্ষেত্রে, এই পুষ্টিগুলো এক হয় মেদে পরিণত হয়, অন্যথায় শরীর থেকে বিভিন্ন উপায়ে বেরিয়ে যায়।
প্রোটিন হজমের পর শরীর কিন্তু অ্যামোনিয়া উৎপাদন করে। এর থেকেও ইউরিক অ্যাসিড সৃষ্টি হয়। তাই অতিরিক্ত প্রোটিন গ্রহণ বন্ধ করুন। একজন মানুষের ওজনের উপর নির্ভর করে তিনি কতটা প্রোটিন খাবেন - প্রতিদিন প্রতি ১ কেজি ওজনের জন্য ১ গ্রাম প্রোটিন খাওয়া উচিত (ওজন ৭২ কেজি হলে দিনে ৭২ গ্রাম)। যাঁরা নিয়মিত ব্যায়াম করেন বা পরিশ্রমসাধ্য কাজ করেন তাঁরা সামান্য বেশি প্রোটিন খেতে পারেন।
ইউরিক অ্যাসিডের জন্য পেয়ারা উপকারী
প্রসেস করা খাবারও কিন্তু চিন্তার কারণ। প্রথমত, এই খাবারগুলোতে বেশি পরিমাণের সোডিয়াম থাকে যা থেকে শরীরের ধাতুর ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, এই খাবারগুলোতে প্রচুর মেদযুক্ত উপকরণ ব্যবহার করা হয় যা থেকে ইউরিক অ্যাসিড বৃদ্ধি পায়। তৃতীয়ত, এই খাবারগুলোতে ফাইবার কম থাকে যা ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই তো ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে ফাইবার যুক্ত খাবার বেশি খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে ভিটামিন ই । মেটে, মুরগির মাংস, বাদাম, আপেল, বিট, রাঙালু ও ব্রকোলিতে ভিটামিন-ই পাওয়া যায়।
ভিটামিন সি-ও একই কাজ করে থাকে। পেয়ারা, কমলা লেবু, বেল পেপার, পাতিলেবুতে ভিটামিন সি থাকে। ম্যাগনেসিয়ামও গাউট সমস্যা মুক্তির জন্য খুব উপকারী।
পরিশেষে, একটা কথাই বলব, জলের কোনও বিকল্প নেই। প্রতিদিন অন্তত আট গ্লাস করে জল পান করুন।

