পরিচ্ছন্নতায় রাষ্ট্রসঙ্ঘের নজর কাড়ল এ রাজ্যের গ্রামের স্কুলগুলিও
শিক্ষক-শিক্ষিকারারা গল্পের ছলে সচেতন করছেন, তাতে সঙ্কোচ কমেছে ছাত্রীদের
- Total Shares
ভারতের বেশিরভাগ স্কুলেই বেড়েছে পরিছন্নতা এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা। রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাম্প্রতিক একটি রিপোর্টে এ কথাই বলা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্তর্ভুক্ত শিশু তহবিল জয়েন্ট মনিটরিং প্রোগ্রাম (জেএমপি) রিপোর্টটি তৈরি করেছে ।
ঋতুর সময় বহু ছাত্রীর স্কুলে অনুপস্থিতি দেখা যেত,. স্কুল চলাকলীন কোনও সমস্যা হলে তারা বাড়ি ফিরে যেতে বাধ্য হত স্কুলে ন্যূনতম পরিষেবা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যবস্থা না থাকায়। আবার অনেক সময় সঙ্কোচ বা অস্বস্তিতে পড়ার ভয়ে তারা স্কুলে আসেতই চাইত না। রাষ্ট্রসঙ্ঘের রিপোর্টে উঠে এসেছে যে বিভিন্ন প্রতিকূলতা কাটিয়ে আমাদের দেশের স্কুলগুলো এখন উন্নতির পথে অনেকটাই অগ্রসর হয়েছে।
পরিছন্নতার প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং ঋতুর দিনগুলোতে ছাত্রীরা যাতে আর অস্বস্তিতে না পড়ে তাই নানা স্কুলে সারা বছর ব্যাপী চলে বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলতে থাকে। মানসিকতারও পরিবর্তন হয়েছে। আমাদের স্কুলটিও ব্যতিক্রম নয়।
ছাত্রীরা নিজেরা স্কুল পরিষ্কার করে (নিজস্ব চিত্র)
আমাদের স্কুলটা বেশ ছোট। স্কুলে পঞ্চম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত আছে।
দীর্ঘদিন শিক্ষকতার সঙ্গে যুক্ত থেকেছি আর একটা কথা বুঝেছি যে কোনও কিছু জোর করে কারও উপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না। ঠিক একই ভাবে পরিছন্নতার ব্যাপারটা কাউকে বলে করানো সম্ভব নয়। তাই আমি ছাত্রীদের নানা সময় কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে বা তাদের সঙ্গে কথা গল্প করার ছলে তাঁদের পরিছন্নতার মূল্য বোঝাবার চেষ্টা করি। আমাদের স্কুলের সব শিক্ষক-শিক্ষিকাই ছাত্রীদের সচেতন করেন।
আমাদের স্কুলে একটি শিশু সংসদ আছে, ঠিক যেমন দেশের শাসনব্যবস্থায় বিভিন্ন মন্ত্রীরা থাকেন ঠিক একই ভাবে এই সংসদে এক এক জন ছাত্রীকে এক একটা দায়িত্ব দেওয়া হয়। সবাই নিজের দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করছে কি না সেটা দেখার জন্য একজন শিক্ষক থাকেন।
আমাদের স্কুল আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিছন্ন হয়েছে
আমাদের স্কুলে সারা বছর ধরেই পরিষ্কার-পরিচন্নতার বিভিন্ন দিক নিয়ে একটা সচেতনতা চলতেই থাকে। আমরা নিজেরা স্কুল পরিষ্কার করি। প্রয়োজনে কোনও লোককে দিয়েও পরিষ্কার করাই। তবে বিদ্যালয় ভবন পরিষ্কার রাখতে স্কুলের ছাত্রীরাই আমাদের সঙ্গে হাত লাগায়। কক্ষগুলি ঝাড়ু দেওয়া থেকে শুরু করে চারপাশের জঞ্জাল ডাস্টবিনে নিয়ে ফেলে আসা, সবকিছুই স্কুলের ছাত্রীরা করে, নিপুণভাবে।
এ বছর আমাদের স্কুলে স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন বসানো হয়েছে। ফলে ছাত্রীদের নিঃসন্দেহে অনেক সাহায্য হয়েছে। বিভিন্ন আর্থসামাজিক পরিবেশ থেকে ছাত্রীরা উঠে আসে বলে তাদের সচেতনতাও সমান নয়। স্থানীয় স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে চিকিৎসকরা নিয়মিত ভাবে ছাত্রীদের চেকআপ করে যান।
বাথরুমের ব্যবহার, নিজের চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখা এবং নিজেকে পরিছন্ন রাখার বিষয়টা নিয়ে এখন ছাত্রীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি সচেতন।
স্কুল বিল্ডিং পরিষ্কার রাখতে স্কুলের ছাত্রীরাই আমাদের সঙ্গে হাত লাগায়
পিরিয়ড নিয়ে ছাত্রীদের মধ্যে আগে একটা কুণ্ঠা বোধ ছিল তবে এখন টেলিভিশন, রেডিয়ো ও বিভিন্ন জায়গায় এই বিষয়ে নানা সচেতনতা মূলক অনুষ্ঠান হচ্ছে। তার সুফল হিসেবে ছাত্রীদের মধ্যে পিরিয়ড নিয়ে আগে যে একটা অস্বস্তি কাজ করত সেটা এখন অনেকটাই কেটে গেছে। তারা এখন বুঝতে পারে যে পিরিয়ড কোনও লজ্জার বিষয় নয়। তাই তারা স্কুলে এসে কখনও যদি কোনও রকম অসুবিধার সম্মুখীন হয় তা হলে তারা খুব সহজেই আমাদের সঙ্গে এসে কথা বলতে পারে।
আমাদের স্কুল আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি পরিষ্কার-পরিছন্ন হয়েছে। আগে স্কুল বিল্ডিংয়ের চারদিকে যত্রতত্র জঞ্জাল ও আবর্জনা পড়ে থাকত। বাথরুমগুলো এখন অনেক বেশি পরিছন্ন থাকে। তবুও আমার মনে হয় আমরা সম্পূর্ণ ভাবে এখনও ছাত্রীদের সচেতন করে উঠতে পারিনি, কাজ এখনও অনেকটাই বাকি।