যখন শশী থারুর প্রমাণ করেছেন তিনি উদারমনষ্ক নন

শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশের বিরোধী এই দু'মুখো কংগ্রেস সাংসদ

 |  3-minute read |   07-01-2019
  • Total Shares

শবরীমালা মন্দিরে মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে কংগ্রেস নেতা শশী থারুরের সাম্প্রতিক মন্তব্য সকলকে অবাক করেছে। এই মন্তব্য তাঁর 'উদারমনষ্ক' ভাবমূর্তিতেও আঘাত করেছে।

সামান্য একটু কেঁচো খুঁড়লে অবশ্য কেউটে বেরিয়ে পড়বে। দেখা যাবে সত্যি সত্যিই থারুর কতটা উদারমনষ্ক।

১) শবরীমালা মন্দির

থারুর মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী। কিন্তু পাশাপাশি থারুর মনে করেন যে দু'জন মহিলার শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করে অহেতুক উস্কানি দেওয়ার চেষ্টা করেছেন।

এই দুই মহিলার মন্দিরে প্রবেশকে কটাক্ষ করে সম্প্রতি কংগ্রেস নেতা জানিয়েছেন যে তিনি মহিলাদের ক্ষমতায়নে বিশ্বাসী, কিন্তু মন্দিরে প্রবেশ করে ওই দু'জন মহিলা মন্দির চত্বরকে অপবিত্র করে দিয়েছেন। এই উদারমনষ্ক নেতার মতে, রজঃস্বলা হওয়ার মতো বয়স রয়েছে এমন কোনও মহিলা শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করা মানে তাঁরা আয়াপ্পা ভগবানে বিশ্বাসী নন।

ধর্মীয় রীতিনীতি কতটা মহিলা বিরোধী এ নিয়ে একেবারেই চিন্তিত নন তিনি। ধর্মীয় শাস্ত্র পুরুষতান্ত্রিক হবে এই কথাটিও যেন তিনিও বিশ্বাস করেন।

যে পুরুষ (এমনকি মহিলাও) মহিলাদের 'পবিত্রতা' ও ধর্মের নামে আলাদা চোখে দেখে তাদের থেকে তিনি কী ভাবে আলাদা তা কি এই কংগ্রেস নেতা এবার আমাদের জানাতে সচেষ্ট হবেন?

থারুরের মন্তব্যই কি অশুচি নয়?

২) সাংসদদের রোজগার

২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সাংসদদের মাইনে দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্তে নরেন্দ্র মোদী সরকারকে সমর্থন করেছিলেন থারুর।

একমাত্র এই প্রসঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেসকেই বিরোধিতা করতে দেখা গিয়েছিল। তৃণমূলের দাবি ছিল, সাংসদরা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি আয় করেন।

body_010719034521.jpgশবরীমালা মন্দিরে দুই মহিলার প্রবেশকে ধর্মীয় উস্কানি মনে করেন থারুর [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]

কিন্তু তিরুবন্তপুরমের সাংসদের বক্তব্য ছিল, "সাংসদদের বেতন হাস্যকর ভাবে অত্যন্ত কম। তাই বেতন বৃদ্ধি নিয়ে প্রতিবাদ করা মানে দ্বিচারিতা করা হবে।"

অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস ২০১৪ সালে একটি তথ্য প্রকাশ করেছিল। সেই তথ্যে বলা হয়েছে দেশের তিনজন ধনী শহুরে প্রার্থীর মধ্যে থারুরও রয়েছেন। তাঁর সম্পত্তির পরিমাণ ২৩.০২ কোটি টাকা। থারুরের মতো একজন অভিজ্ঞ ও সুশিক্ষিত লোকের রাজনীতিতে প্রবেশের মানে লোকে বিশ্বাস করতে বাধ্য যে সমাজ সেবা করতেই তিনি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু একজন কোটিপতিও যখন সাংসদদের মাইনে বৃদ্ধি নিয়ে মাতামাতি শুরু করে দেন তখন তো অন্যরকম সন্দেহ জাগতে বাধ্য।

৩) 'গবাদি পশু' মন্তব্য

উদারমনষ্ক থারুর ২০০৯ সালে আরও একটি মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৯ সালে তিনি দেশের মধ্যবিত্তদের খোঁচা দিয়ে বলেছিলেন, তিনি পবিত্র গোমাতার সমর্থনে কেটল-ক্লাসে যাত্রা করবেন। 

শুধু বিরোধী দলগুলো নয়, তাঁর নিয়ে দলের সহকর্মীরাও এই মন্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন। কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্তী নটরাজন বলেছিলেন, কংগ্রেস এই মন্তব্যকে সমর্থন করে না।

একটা কথা অবশ্য বেশ পরিষ্কার, যাতে বিজনেস ক্লাসে যাত্রা করতে পারেন তার জন্যই থারুরের বেতন বৃদ্ধির প্রয়োজন।

body1_010719034602.jpgকতটা উদারমনষ্ক তিনি? [ছবি: পিটিআই]

৪) মোদী নাকি শিবলিঙ্গের বিছা

সম্প্রতি থারুরের মতো একজন উদারমনষ্ক নেতা এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি তাঁর ব্যক্তিগত বিরূপতা প্রকাশ্যে আনতে পিছপা হননি।

থারুর বলেছিলেন, "নরেন্দ্র মোদী আসলে শিবলিঙ্গের উপর বসে থাকা একজন বিছে। তাঁকে আপনি হাত দিয়ে সরিয়ে দিতে পারবেন না। আবার চপ্পল দিয়ে মারতেও পারবেন না।"

এই মন্তব্যের পর তাঁর কোনও অনুশোচনা নেই বরঞ্চ অজুহাত রয়েছে। তিনি বলেছিলেন তিনি শুধু একজন আরএসএস নেতাকে উদ্ধৃত করছেন।

সত্যি, রাজনৈতিক নেতা না হলে সাংবাদিক হতে পারতেন থারুর।

৫) আমি হিন্দু কেন?

আমাদের মতো ধর্মনিরপেক্ষ সমাজে ধর্ম একটি ব্যক্তিগত বিষয়। তবে কেউ কেউ ভোটের তাগিদে ধর্ম ব্যবহার করে থাকেন।

কংগ্রেসের মুসিলমপন্থী ভাবমূর্তি থেকে 'হিন্দুত্বপন্থী' করে তোলার উদ্যোগী হয়েছিলেন শশী থারুর। থারুরের মতো একজন শিক্ষিত উদারমনষ্ক রাজনৈতিক নেতার কাছে ধর্ম নিয়ে রাজনীতি মোটেই শোভা পায় না।

কিন্তু তিনি যে আর পাঁচটা রাজনৈতিক নেতার মতো ভোটব্যাঙ্কে বিশ্বাসী।

এরকম দু'মুখো হলে চলবে কেন?

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

VANDANA VANDANA @vandana5

Author is a Delhi-based journalist.

Comment