জম্মু-কাশ্মীর: মরসুমের প্রথম তুষারপাত আমার মনকে নাড়া দেয় কেন
শীতকাল কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য আদর্শ, এর অভিজ্ঞতা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না
- Total Shares
আমির খসরুর একটি শায়েরির কথা মনে পড়ছে:
"আগর ফিরদৌস বার-রু-এ-জামিনে/ হামিঁ অস্ত ও হামিঁ অস্ত ও হামিঁ অস্ত"
(পৃথিবীতে কোথাও যদি স্বর্গ থেকে থাকে সেই স্বর্গ এখানে, এখানে, এখানে)
কাশ্মীরের কথা বলতে ঠিক এই কথাটিই বলতেন তিনি।
ভারতীয় উপমহাদেশের একেবারে উত্তরে কাশ্মীর অবস্থিত। হিমালয় ও পিরপঞ্জাল পর্বতমালার মধ্যে একটি উপত্যকা। চারপাশে বরফে ঢাকা পর্বতশৃঙ্গ, ঘন বন, গাঢ় সবুজ গালিচা আর রুপোলি নদী। উপত্যকার প্রতিটি অংশ ছবির মতো সুন্দর। এক ঝলক দেখলে মনে হবে ঈশ্বর এখানেই বাস করেন।
বসন্তে নানান রঙের ফুলে ভরে ওঠে উপত্যকা [ছবি: রয়টার্স]
আর তার এই সৌন্দর্য্যের জন্য জম্মু-কাশ্মীর ভূস্বর্গ নামে বিখ্যাত।
কাশ্মীরি সৌন্দর্য্য অবশ্য ভিন্নধর্মী। এক একটি ঋতুর একেক রকমের আবেশ। শুধু একটা বিষয়েই প্রভূত মিল রয়েছে - প্রতিটি ঋতুতেই একই রকম সুন্দর থাকে কাশ্মীর। কাশ্মীরি সৌন্দর্য্য কখনই ম্লান হয় না।
বসন্তের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে উপত্যকা যেন জ্বলে ওঠে। উপত্যকা জুড়ে তখন শুধু গাছ আর নানান রঙের ফুলের সম্ভার। বসন্তের পর আসে গ্রীষ্ম, যা সত্যি সত্যিই বেশ স্বস্তিদায়ক। এর পর আসে শরৎ কাল। সেই সময় কাশ্মীর সবুজ থেকে সোনালি হয়ে ওঠে। গাছের পাতায় সবুজ রঙের পরিবর্তে সোনালি আভাস।
এর পর শীতের আগমন।
শীতকাল মানে ঘুম থেকে উঠতে রীতিমত কসরত করতে হয়। ঘরে ঘরে হিটার জ্বালাতে হয়। তা সত্ত্বেও হাড় কাঁপানো শীত থেকে নিস্তার নেই।
কিন্তু, তাও শীতকালের কাশ্মীর সুন্দর, কেন?
শীতকালে প্রকৃতি এক হয় ঘুমিয়ে পড়ে না হলে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে। আর সকলেই বসন্তের আগমনে দিন গোনে। কিন্তু এর সঙ্গে শীতকালে গোটা কাশ্মীর জুড়ে ঘনিয়ে আসে এক সুন্দর নীরবতা। কতকটা শান্তির বার্তা নিয়ে। আকাশে বাতাসে তখন প্রেম, ভালোবাসা আর শান্তির ছোঁয়া।
এরই মাঝে কাশ্মীর প্রত্যক্ষ করে মরসুমের প্রথম তুষারপাত। যা সত্যি সত্যিই নয়নাভিরাম।
রাতে ঘুমিয়ে পড়লেন। সকালে উঠে দেখলেন চারপাশের জগৎটা বদলে গেছে। প্রকৃতির এই জাদু যদি আপনাকে মুগ্ধ না করতে পারে, তাহলে আর কী সে মুগ্ধ হবেন আপনি?
গ্রীষ্মকালে সোনালি রূপে দেখা যায় কাশ্মীরকে [সৌজন্যে: কাশ্মীর পর্যটন মন্ত্রক]
কাশ্মীরের তুষারের মধ্যে কোথাও যেন একটা বিশুদ্ধতা লুকিয়ে রয়েছে। বাগিচাগুলো যেভাবে বরফে ঢেকে থাকে দেখে মনে হয় যেন আপনাকে বরফের উপর খেলে বেড়াতে স্বাগত জানানো হচ্ছে। সেই লোভ মোটেই সহজে সংবরণ করা যায় না।
কাশ্মীরে আবার সেই শীত এসেছে। গাছগুলোর পাতা ধীরে ধীরে ঝরে পড়েছে আর সূর্যের তেজও অনেকটাই কমে গেছে। উপত্যকা জুড়ে ঠান্ডা বাতাস বইছে আর সেই শুকনো হাওয়া অচিরেই সবকিছুকে হিমশীতল করে দিচ্ছে। এখন প্রকৃতিমাতার বুকে থাকতে হলে আমাদের বেশ কয়েকটা সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
শীতকালে আমি একটি বিশেষ আচার পালন করে থাকি -- জানলা খুলে ধ্যানে মগ্ন হয়ে যাই। চোখের সমানে নীল দিগন্ত আর দিগন্ত বিস্তৃত সাদায় মোড়া উপত্যকা। এক ঝটকা টাটকা বাতাস মুখে এসে লাগে, মনকে শান্ত করে দিয়ে যায়। প্রকৃতির সৌন্দর্য্য উপভোগের এর চেয়ে ভালো উপায় আর কীই বা হতে পারে?
শীতকাল মানেই বসন্তের অপেক্ষা [সৌজন্য: কাশ্মীর পর্যটন মন্ত্রক]
এই সময়ে কাশ্মীর ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না।
কাশ্মীরের তুষারপাত বিশুদ্ধতার পরিচয় বহন করে
অসম্ভব ঠান্ডার হাত থেকে রেহাই দিতে কাশ্মীরের বাড়িতে বাড়িতে একধরণের হিটার ব্যবহার করা হয় - যার পোশাকি নাম কাংড়ি। কাংড়ি আদতে একটি মাটির হাঁড়ি যার চারপাশে শরু কাঠি বাঁধা থাকে এবং ভিতরে কাঠকয়লা ভরতে হয়। কাংড়ি যখন শরীর গরম করতে সাহায্য করে তখন মনকে তরতাজা রাখতে কাশ্মীরিরা খেওয়া ও হরিস্সা সেবন করে থাকেন।
শীতকালে হিটারের বদলে কাশ্মীরিরা কাংড়ি ব্যবহার করেন [ছবি: রয়টার্স]
কাশ্মীর মানেই আমিষ খাবার। আর শীতকালের কাশ্মীরি খাদ্যসম্ভার নিঃসন্দেহে লোভনীয়।
তুষারপাতের সময়টাই কাশ্মীর ভ্রমণের জন্য আদর্শ। এই সময়তেই কাশ্মীরের বিশুদ্ধতা আপনি সবচাইতে বেশি উপভোগ করতে পারবেন। আল্লাহর দোয়ায় আপনি বসন্তের আগমনের প্রতীক্ষা করতে পারবেন।
অ্যাডভেঞ্চারের প্রেমীদের জন্য শীতকালের কাশ্মীর একদম আদর্শ।
যাঁরা শান্তির খোঁজ করেন তাঁদের জন্যও।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে