গরমে বাইরের খাবার নিশ্চয়ই খাবেন, তবে সঙ্গে জেনে রাখুন সুস্থ থাকার খুঁটিনাটিও

কোল্ড ড্রিঙ্কে চিনির আধিক্য থাকে বলে আমাদের আরও বেশি তেষ্টা পায়

 |  7-minute read |   15-05-2018
  • Total Shares

এই প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরমে আমরা প্রায় সবাই অস্থির হয় যাচ্ছি। গ্রীষ্মের এই প্রচণ্ড দহন মে ও জুন মাসে আরও বেশি করে অনুভূত হয়। গরমের ফলে আমাদের শরীর থেকে বেরিয়ে যায় ঘাম, মানে শরীর থেকে বেরিয়ে যায় অনেকখানি জল ও নুন। এ ছাড়াও ঘামের সঙ্গে ঝরে বিভিন্ন ইলেক্ট্রোলাইট যেমন সোডিয়াম ও পটাশিয়াম, তাই আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়ি ও কাজ করার কোনও রকম শক্তিই পাই না।

গরমকালে সুস্থ ও সতেজ থাকতে সব সময় শরীরকে সম্পৃক্ত রাখতে হবে, তাই যে কোনও ধরণের পানীয় খাওয়া যেতে পারে, যেমন ডাবের জল, লস্যি, ফলের রস প্রভৃতি। আর এ সবেই কিছুই যদি হাতের কাছে না থাকে তাহলে সাদামাঠা নুন-চিনির জল কিংবা স্বাধারণ পরিষ্কার পানীয় জল খান।

summer_body2_051518014848.jpgনিজেকে সুস্থ রাখা জন্য সামান্য খরচ করে বোতলজাত জল কিনে খান

কাজের সূত্রে যাঁদের রোজ বাইরে বেরতে হয়, তাঁদের আমি বলব, সঙ্গে বাড়ির খাবার জল রাখতে। যদি সেটা একেবারেই সম্ভব না হয়, তাহলে নিজেকে সুস্থ রাখা জন্য সামান্য খরচ করে বোতলজাত জল কিনে খান। খোলা জায়গার রাখা জল না খাওয়াই ভালো। তবে আমি কখনওই সফট-ড্রিঙ্ক খাওয়ার পরামর্শ দিই না কারণ, এতে চিনির মাত্রা অনেক বেশি থাকে বলে আপাতত শরীর ঠান্ডা হলেও তৃষ্ণা কিছুতেই মিটতে চায় না।

এই মরসুমে যে সব ফলমূল পাওয়া যায় সেগুলো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খান-- যেমন তরমুজ, শশা বা তালশাঁস। কারণ এইসব ফলে অনেক জল থেকে। তবে মাথায় রাখতে হবে যে রাস্তার কাটা ফল বা রাস্তার আখের রস খাওয়া চলবে না। তাজা ফল ও সবজি বাজার থেকে এনে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে খান। একটা কলা বা পেয়ারা কিংবা একটা আপেল কিনে খেতে পারেন কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট থাকে বলে পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে।

যতদূর সম্ভব বাড়িতে বানানো খাবারদাবার খান। একটু হালকা মসলা দিয়ে বাড়ির রান্না করে বিভিন্ন মুখরোচক খাবার খাওয়া উচিৎ এই মরসুমে। অবশ্য যদি মাঝে মধ্যে বাড়িয়ে খাওয়ার ইচ্ছে হয় তা হলে মন খুলে খান একদিন। আবার কোনও অনুষ্ঠানে গেলে চেষ্টা করুন ঝোল থেকে মাঝ ও মাংসের টুকরোটা তুলে নিয়ে খেতে।

summer_body1_051518014919.jpgগরমে বাইরের খাবার কেন খাবেন না

কাজের জন্য যাঁদের বাইরের বেশি থাকতে হয় তাঁরা সব সময় পানীয় জল সঙ্গে রাখুন। একেবারেই সম্ভব না হলে শরীরের কথা ভেবে একটু খরচ বেশি হলেও করে বোতলজাত জল খান। যদি সম্ভব হয় ঠিক দুপুরের যে সময়টায় সূর্যের তাপ সব চেয়ে বেশি থাকে, সেই সময়টুকু এড়িয়ে তারপর বাইরে বেরোন। আর যদি তা সম্ভব না হয় তাহলে অবশ্যই একটা ছাতা সঙ্গে রাখুন আর জলও রাখুন সঙ্গে। যদি সুতির জামাকাপড় পরার দিকে নজর দিন, যাতে ঘাম কম হয় সেই দিকে লক্ষ্য রাখুন। শরীর থেকে ঘাম কম বেরোলে শরীর ভালো ও সতেজ থাকবে। তবে আমি কিন্তু কখনোই কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়ার পরামর্শ দেব না কারণ, এই জাতীয় পানীয়তে চিনির আধিক্য থাকে বলে আমরাদের আরও বেশি তেষ্টা পায়। ওই পানীয়গুলো সাময়িক ভাবে শরীরকে শীতল করে আরাম দিলেও আসলে আমাদের শরীরে কোনও কাজে দেয় না।

আমার অনেকেই বাইরের কাটা ফল খেয়ে থাকি। ফল খাওয়ার সময় একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যে রাস্তার কাটা ফল যেমন খাওয়া চলবে না ঠিক তেমনই বাইরের আখের রষও খাবেন না। তাজা ফল ও সবজি বাজার থেকে এনে ভালো করে ধুয়ে নিয়ে খান। তাজা ফল ও সবজিতে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে। পেট ভরানোর জন্য একটা কলা বা পেয়ারা কিংবা একটা আপেল কিনে খেতে পারেন। এতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেড থাকে বলে অনেক্ষন পেট ভরা থাকে।

খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে আমি সব সময় পরামর্শ দেব - যতদূর সম্ভব বাড়িতে বানানো খাবারদাবার খান। কারণ বাড়িতে তৈরি হালকা খাবার খুব সহজেই হজম হয়ে যায়। যদিও আমাদের কোনও না কোনও অনুষ্ঠান এসেই পড়ে যেটা এড়ানো সম্ভব হয় না তাই আমি বলব মাংসের বা চিকেনের টুকরোটা ঝোল থেকে তুলে নিয়ে খান। তা হলে ঝোলের মসলা বা তেলটা বাদ চলে যায়।

summer_body5_051518015021.jpgএকজন সুস্থ ব্যক্তি দিনে একটা ডিম খেতেই পারেন

যদিও গরম কালের জল খাওয়ার উপকারিতা সম্বন্ধে আগেই বলেছি তবুও বলি গরম কালে জল খাওয়া যেমন উচিৎ তেমনই জল খেতে হবে বলে একবারে অনেকটা জল খেয়ে ফেললাম সেটা কিন্তু কাজের কথা নয়। যাঁদের জল খাওয়ায় কোনও রকম ডাক্তারি বিধি-নিষেধ নেই, তাঁরা সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে মোট তিন থেকে সাড়ে তিন লিটার জল খান। একবারে অনেকটা জলও কিন্তু খাবেন না, তাহলে প্রস্রাবের সঙ্গে শরীর থেকে অনেকটা খনিজ বেরিয়ে যায় আর এর ফলে শরীরের পর্যাপ্ত জল পায় না। যদিও আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন যে জল ও অন্যান্য পানীয় মিলিয়ে ঠিক কতটা জল শরীরে দরকার। এখানে আমি বলব যে এটার কোনও সঠিক মাপকাঠি হয় না, কারণ বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন পরিস্থিতিতে থাকেন। যেমন যাঁরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে থাকেন তাঁদের ক্ষেত্রে জলের চাহিদাটা অনেকটা কম কিন্তু যাঁরা রোদে ঘুরে ঘুরে কাজ করেন তাঁদের অনেক জল লাগবে।

গরমে নানারকম শারীরিক সমস্যা দেখা দেয়। এই সময় আমাদের পাচনতন্ত্র দুর্বল হয় পড়ে বলে আমরা বদহজমে ভুগি। তাই এই মরসুমে খাবার খেতে হবে একটু ভেবেচিন্তে। এই সময় একটু হালকা খাবার খাওয়া উচিত। যে সব খাবারে বেশি মাত্রায় প্রোটিন থাকে সেইসব খাবারদাবার রোজ না খাওয়াই ভালো যদিও মাছ রোজ খেলে কোনও অসুবিধা নেই। ঠিক একই ভাবে চিকেনও রোজ খেতে পারেন। অনেককের বাড়িতেই যখন পাঁঠার মাংস রান্না করা হয়, তখন সেটা বেশ মশলা ও তেল দিয়ে বানানো হয়ে থাকে। আমি বলব এই মরসুমে অবশই মাংস খান কিন্তু অতিরিক্ত মেদ বা চর্বি বাদ দিয়ে মাংসটাকে হালকা করে রান্না করে খান। অনেকে মনে করেন গরমে রোজ ডিম খেলে শরীরের ক্ষতি হতে পারে কিন্তু সেটা ভুল ধারণা। রোজ একটা করে ডিম খাওয়া যেতেই পারে। ডিমের ক্ষেত্রে অনেকেই ডিমের হলুদ অংশটা ফেলে দিয়ে শুধু সাদা অংশটা খান, তবে তার কোনও প্রয়োজন নেই। একজন সুস্থ ব্যক্তি একটা গোটা ডিম খেতেই পারেন।

summer_body4_051518015207.jpgগরমের সময় আম আর লিচু বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়, আর এই দুটো ফলের লোভ সম্বরণ করা খুব কঠিন

শরীরে সঙ্গে পেটকেও সব সময় ঠান্ডা রাখতে হবে তাই বাড়িতে পাতা টক দই খান এতে পেট যেমন ঠান্ডা থাকবে তেমন হজমও হবে ভালো। গরম কালে পেঁয়াজ খাওয়া খুব ভালো। যে সব জায়গায় খুব লু বয় সেই সব এলাকার মানুষ যদি কাঁচা পেঁয়াজ খান তাহলে তাঁদের গরমটা কম লাগবে। খাবারের সঙ্গেও পেঁয়াজ খেতে পারেন বা স্যালাডে দিয়েও খেতে পারেন। আমরা হয়ত অনেকেই এই খাওয়ারটার কথা শুনলে প্রথমটায় খেতে হয়ত চাইব না কিন্তু গরমকে এড়াতে পান্তাভাতের জুড়ি মেলা ভার। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে যদি একটুখানি পান্তাভাত খাওয়া যায় তাহলে সেটা খুব ভালো। ঠিক একই ভাবে দক্ষিণের মানুষ কার্ডরাইস বা সোজা বাংলায় বলতে গেলে দই-ভাত খান ঠিক একই ভাবে আমরাও কিন্তু দইভাত খেতে পারি।

গরমের সময় আম আর লিচু বাজারে প্রচুর পাওয়া যায়, আর এই দুটো ফলের লোভ সম্বরণ করা খুব কঠিন। আমি বলব আম-লিচু দুটোই খান, তবে সঙ্গে এটাও মনে রাখুন যে কোনও খাবারই কিন্তু অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া ঠিক নয়। এই সময় তরমুজ, তালশাঁস জাতীয় ফল বেশি খান কারণ এতে জলের পরিমাণে থাকে অনেকটা।

রাতের খাবারটা হালকা রাখতে হবে এবং অল্প খেতে হবে।

summer_body6_051518015245.jpgদক্ষিণের মানুষ কার্ডরাইস বা সরল বাংলায় বলতে গেলে দইভাত খান

এবার একটু বাচ্চাদের কথায় আসি। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে যে এই নিয়মগুলোর খুব একটা নড়চড় হবে তেমনটা কিন্তু নয়। আমি অভিভাবকদের পরামর্শ দিয়ে থাকি যে বাচ্চাদের খুব একটা বাইরের খাবার কিনে না দেওয়াই ভালো। তারা বাইরের যে সব খাবার খাওয়ার জন্য বায়না করে সেগুলো চেষ্টা করুন বাড়িতেই তাদের বানিয়ে দিতে। রোদ থেকে বাচ্চারা যখন খেলে আসবে তখন তাদের নুনচিনির জল বানিয়ে দিন।

*প্রাতঃরাশে স্বাধারণত কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন ও ফাইবার জাতীয় খাবার খাওয়া প্রয়োজন। তাই যাঁর বাড়িতে যা হয় তাই খান, যেমন চিঁরে, মুড়ি, পাঁউরুটি, রুটি বা ইডলি। যাঁরা নিরামিষ খান তাঁরা দই বা ছানা খান আর যাঁরা আমিষ খান তাঁদের ক্ষেত্রে আমি বলব একটা গোটা ডিম। সঙ্গে অবশই একটা ফল যোগ খাবারে।

*যাঁরা বাড়িতে থাকেন তাঁরা বাড়িতে যা রান্না হয় সেটাই দুপুরে খেতে পারেন যেমন ভাত, ডাল, মাছ, তরকারি সঙ্গে একটু বাড়িতে পাতা টক দই। আর যাঁরা কাজে বেরোন তাঁরা যদি ভাত না খেতে চান তাহলে একটু চিকেনের হালকা স্টু সঙ্গে একটা স্যান্ডউইচ ও একটা ফল খান ও সঙ্গে একটু দই।

*আবার বিকেলের দিকে একটু মিল্কশেক আর যদি মিল্কশেক বানানো সম্ভব না হয় তাহলে একটা ফল খান।

*রাতের খাবার খুব হালকা হলেই ভালো যেমন রুটি বা ভাত (পরিমাণে অল্প) সঙ্গে একটু ডাল, একটা হালকা সবজি বা মুরগির মাংস অথবা মাছ। আর শেষ পাতে আবার একটু দই।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment