আসন্ন নির্বাচনে খালেদা জিয়ার দল কেন ভারতের সমর্থন আশা করছে

খালেদা জিয়া কি ভারতের সমর্থন পাবে?

 |  3-minute read |   02-07-2018
  • Total Shares

বাংলাদেশের সংসদীয় নির্বাচনের সময় ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এ বছরের শেষ দিকে বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। এরই মধ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের হিড়িক পড়ে গিয়েছে সে দেশে, যদিও দুই যুযুধান দল আওয়ামি লিগ ও বিরোধী বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য রয়েছে।

বিএনপির তরফ থেকে এখনও অবধি সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি যে তারা এই নির্বাচনে লড়াই করবে কি না। নির্বাচন প্রসঙ্গে তাদের এই রহস্যজনক নীরবতা বেশ কিছু জল্পনার জন্ম দিয়েছে এবং দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্পষ্ট তুলেছে। এর ফলে, শাসক শিবিরেও উদ্বেগজনক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে সমর্থন আদায়ের জন্য বিএনপির তরফ থেকে ভারতীয় নীতি নির্ধারকদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে।

ভারত-বিরোধী হিসেবে পরিচিত এবং ভারত বিরোধী সংগঠনগুলোকে আশ্রয় দেওয়ার যে রেকর্ড বিএনপির রয়েছে তাতে ভারত ও বিএনপির মধ্যে বিশ্বাসযোগ্যতার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। দক্ষিণপন্থী ও একই সঙ্গে চরমপন্থী জামাত-এ-ইসলামির সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধায় ভারতীয় সংস্থাগুলোর ক্ষোভের মুখেও পড়তে হয়েছে বিএনপিকে। উদারপন্থীর বিরোধিতা করে ও পাকিস্তানের সমর্থনে সর্বদাই সুর চড়িয়েছে জামাত।

কিন্তু এখন নিজেদের বিশ্বাসযোগ্য হিসেবে প্রমাণ করতে বেশ কিছু রদবদল বিএনপি। এরই অঙ্গ হিসেবে বিএনপির এক উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল জুন মাসের শুরুতে ভারতে এসে এ দেশে যাঁরা বাংলাদেশ নিয়ে ওয়াকিবহাল তাদের সঙ্গে আলোচনা করে গেছেন।

body_070218024017.jpgজেল হেফাজতে রয়েছেন বিএনপি নেত্রী তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া

বিএনপির নেত্রী তথা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নাম বেশ কিছু দুর্নীতি ও অপরাধমূলক মামলায় জড়িয়ে পড়ায় বিএনপির জমি অনেকটাই আলগা হয়েছে। সেই জমি পুনরুদ্ধার করতে বিএনপি ভারতের নৈতিক সমর্থন পাওয়ার চেষ্টা করছে। খালেদা জিয়া বর্তমানে জেল হেফাজতে রয়েছেন আর তার পুত্র তারেক রাহমান লণ্ডনে নির্বাসনে রয়েছেন।

খালেদা জিয়ার মুক্তির কোনও আশা দেখতে পাচ্ছেন না বিএনপি তাই বিনেপি দলীয় নেত্রীর জামিন সুনিশ্চিত করবার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশে প্রতিনিধিদলও পাঠাচ্ছে।

এই লক্ষ্য পূরণের জন্যেই বিএনপির নেতৃত্ব এক মন্ত্রীর মাধ্যমে বিজেপি নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে ভারতের একটি শহরে আলোচনায় বসেন। দলের পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে ভারত সরকারেকে বুঝিয়ে বিএনপি সম্বন্ধে মনোভাব নরম করে তাদের সমর্থন আদায় করা যায়।

তা যদি শেষ পর্যন্ত সম্ভব হয় তা হলে বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারে। সহজ সরল ভাষায়, বিএনপি ভারতকে ব্যবহার করে আগামী নির্বাচনী লড়াইতে নামতে চাইছে। উল্টোদিকে, আওয়ামি লিগের তরফ থেকেও জোর চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে বিএনপির এই প্ৰচেষ্টা ফলপ্রসূ না হয়।

বাংলাদেশে এই মুহূর্তে নির্বাচন সংক্রান্ত সবচেয়ে বড় খবর হল যে ২৬ জুন গাজিপুরের পুর নির্বাচনে সবক'টি আসন দখল করেছে আওয়ামি লিগ। তাদের মেয়র পদপ্রার্থী মোহম্মদ জাহাঙ্গীর আলম তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থীকে বিপুল ভোটে পরাজিত করেছেন। যদিও বিএনপির তরফ থেকে ব্যালট বাক্স ছিনতাই ও অন্যান্য প্রহসনের অভিযোগ করা হয়েছে, এই ফলাফল নিঃসন্দেহে আওয়ামি লিগের মনোবল বাড়িয়েছে।

এর মধ্যে বিএনপিঘনিষ্ট বেশ কয়েকজন সমাজকর্মীকে মাদক পাচার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এর ফলে নির্বাচন কমিশনারকে পক্ষপাতিত্ব পূর্ণ আচরণের জন্য সমালোচনা করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে তা হলে দুই বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক সংষর্ষ বাধতে বাধ্য।

body1_070218024105.jpgপ্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা ভারত সফরে আসছেন

বাংলাদেশের সেনাবাহিনী সর্বদাই রাজনৈতিক। হালে অবশ্য সেনাবাহিনী অনেকটাই অরাজনৈতিক হয়ে উঠেছে। তার প্রধান কারণ সেনাবাহিনীর বেশ কিছু উচ্চপদস্থ অফিসার বর্তমানে ইউএন মিশনে রয়েছেন তাই তাদের ঘরোয়া রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই।

আজিজ আহমেদকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ করে কিছুটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলতে পারবে বাংলাদেশ। কারণ তিনি পেশাদার এবং নির্বাচনে কোনও দলের পক্ষ নেবে না বলেই আশা করা যায়।

এর আগে বিএনপি প্রহসন-মুক্ত নির্বাচনের জন্য সেনাবাহিনী নিয়োগের দাবি জানিয়েছিল। তাই আজিজের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ভূমিকা খুবই কী হয় তা খুবই গুরত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। নির্বাচনের আগের এই সময়টাও বেশ উল্লেখযোগ্য এবং এখানে ভারত কী ভূমিকা নেয় তা জানতেও সকলে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছে।

এই পরিস্থিতির মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সবচেয়ে বিশ্বাসভাজন রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম জুলাইয়ের শুরুতে ভারতে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। তাঁর চিন্তাধারার উপর ভবিষ্যতের পদক্ষেপ যে অনেকটাই নির্ভর করবে তা বলাই বাহুল্য।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SHANTANU MUKHARJI SHANTANU MUKHARJI @shantanu2818

The author is a retired IPS officer who has held key positions in the Government of India handling sensitive security issues within and outside India

Comment