কলাইনারের সঙ্গে ক্যাডারদের সম্পর্ক ডিএমকের সাফল্যের চাবিকাঠি ছিল

দলের ক্যাডারদের কাছে তিনি শুধু নেতা নন, তাঁদের আবেগ, পরামর্শদাতা এবং ভালো বন্ধু

 |  3-minute read |   08-08-2018
  • Total Shares

৫৪ বছরের বাদাম বিক্রেতা সারথি কিন্তু ডিএমকে দলের সদরদপ্তরে বেশ পরিচিত মুখ। ডিএমকে নেতা এম করুণানিধি সদরদপ্তরে প্রবেশ করা মানেই সারথিকেও ওই চত্বরে দেখা যাবে। সারথি নিজেও অবশ্য ডিএমকের একনিষ্ঠ কর্মী। সেই ২০ বছর বয়স থেকেই তিনি ডিএমকে সমর্থক।

তামিলনাড়ুরর কলাইনার হিসেবে পরিচিত এম করুণানিধি। আর, এই কলাইনার বলতে সারথি অজ্ঞান। কলাইনারের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলেই তাঁর মুখ খুশিতে ঝলমল করে ওঠে। তাঁর জীবনের একটি অভিজ্ঞতার কথা বলতে কখনই ক্লান্ত হন না সারথি।

"বছরটা ঠিক মনে পড়ছে না। একবার কলাইনার সদরদপ্তরে বসে ছিলেন। হটাৎ করেই ভিতর থেকে আমার ডাক পড়ল। প্রবেশ করতেই আমাকে নাম ধরে ডাকলেন কলাইনার। আমার কাছ থেকে বাদাম কিনলেন। ঘরে উপস্থিত বাকি দলীয় নেতা নেত্রীদের বাদাম দিতে বললেন।"

গতকাল (অগাস্ট ৭) ৯৪ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন কলাইনার। বহুদিন ধরে বয়স জনিত রোগে ও মূত্রনালী সক্রমণে ভুগছিলেন তিনি। সারথির মতো আর কয়েক হাজার সমর্থক এতদিন ধরে এই কলাইনারের নেতৃত্বে মন্ত্রমুগ্ধ ছিলেন। এদের মন জয় করতে কলাইনার বক্তৃতা শুরুর সময় তামিল ভাষায় একটি কথা বলতেন। যার মোটামুটি বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায়, "আমার গুরুভাইয়েরা, আমি তোমাদের নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসি।" করুণানিধির মুখে এই শব্দগুচ্ছ শুনে এক ধরণের গণহিস্টিরিয়া সৃষ্টি হত গোটা তামিলনাড়ু জুড়ে।

দল হিসেবে ডিএমকে সর্বদাই ক্যাডার নির্ভর। আর এই ক্যাডারদের মধ্যে করণানিধির জনপ্রিয়তা ছিল চোখে পড়ার মতো। দলের অনেক সদস্যকে তিনি নামে চিনতেন। এমনকি, বেশ কিছু সময় জনসভা চলাকালীন সকলকে অবাক করে দিয়ে দলের সবচেয়ে নব্য সমর্থককে নাম ধরে ডাকতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। তাঁর মধ্যে কর্মশক্তির কোনও ঘাটতি ছিল না। আর এই শক্তির পুরোটাই তিনি দলের জন্যে নিংড়ে দিতেন।

body_080818033109.jpgক্যাডারদের ভ্রাতৃসম বলে সম্বোধন করে তাদের উদ্দেশ্যে প্রায় ৪,০০০ চিঠি লিখেছিলেন করুণানিধি [পিটিআই]

বিশিষ্ট লেখক আর কান্নন একবার বলেছিলেন যে ডিএমকের সাফল্যের আসল চাবিকাঠি কিন্তু করুণানিধির সঙ্গে তাঁর দলের ক্যাডারদের সম্পর্ক। লেখক হিসেবেও অনবদ্য ছিলেন কলাইনার। ক্যাডারদের ভ্রাতৃসম বলে সম্বোধন করে তাদের উদ্দেশ্যে প্রায় ৪,০০০ মতো অনবদ্য চিঠি লিখেছেন তিনি।

কান্নন বলেছেন, "জনগণ ও দলীয় ক্যাডারদেড় সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের জেরেই তিনি তাঁর দলের এক বর্ষীয়ান সহকর্মীকে পিছনে ফেলে দলের প্রতিষ্ঠাতা সিএন আন্নাদুরাইয়ের স্থলাভিষিক্ত হন। কঠিন পরিশ্রম করলে আপনি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠবেনই। আর, ঠিক এই কারণেই করুণানিধি দীর্ঘ পঞ্চাশ বছর ধরে একটানা ডিএমকেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি একটি যুগের প্রতীক।"

ডিএমকে প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই আন্না সবচাইতে বেশি বিশ্বাস করতেন করুণানিধিকে। একবার স্থানীয় নেতাদের মধ্যে বিবাদের জেরে দলে ভাঙ্গন অবশ্যম্ভাবী হয়ে পড়েছিল। সেই সময় এই সমস্যার সমাধানের জন্যে আন্না করণানিধিকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন। তরুণ করুণানিধি সেই দায়িত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছিলেন।

বর্ষীয়ান সাংবাদিক এস মুরারীর মতে করুণানিধি দলীয় মুখপত্র মুরাসোলির মাধ্যমে জীবনভর দলের ক্যাডারদের রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদান করে গেছেন। এই মুখপত্রের মাধ্যমে তিনি তাঁর দলীয় ক্যাডারদের রাজ্যের সামাজিক সমস্যাগুলো সম্পর্কেও সচেতন করে তুলেছিলেন।

মুরারি জানাচ্ছেন, "ক্যাডারদের কাছে করুণানিধির গ্রহণযোগ্যতা ও দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রই কিন্তু দল হিসেবে ডিএমকেকে এত বছর ধরে একজোট করে রেখেছিল।"

ষাটের দশকের শুরুতে ক্যাডারদের সঙ্গে করুণানিধির সম্পর্কই কিন্তু ডিএমকেকে রাজনীতির ময়দানে প্রবল শক্তিশালী করে তুলেছিল।

সাংবাদিক তথা লেখক সন্ধ্যা রবিশঙ্কর বলছিলেন যে করুণানিধির সঙ্গে ক্যাডারদের সুসম্পর্কটাই যেন ডিএমকের নৌকার মাস্তুল ছিল। তিনি জানালেন, "জনসভা আগে করুণানিধি ক্যাডারদের সঙ্গে কাটাতেন, তাদের সঙ্গে বসে খেতেন তাদের সঙ্গে খোলা মাঠে ঘুমতেন। দলের ক্যাডারদের কাছে তিনি নেতার চাইতেও বেশি কিছু। তাঁদের আবেগ, তাদের সকল কাজের পরামর্শদাতা এবং সর্বপরি তাদের সত্যিকারের ভালো বন্ধু ছিলেন করুণানিধি।"

তামিলনাড়ুর প্রত্যেকেই একটি বিষয় একমত। ক্যাডারদের অতিপ্রিয় দ্রাবিড় ভাবাদর্শই শুধু নয়, অদম্য কর্মশক্তিও কলাইনারকে একের পর এক বড় মাপের রাজনৈতিক যুদ্ধ জয় করতে সাহায্য করেছে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

LOKPRIYA VASUDEVAN
Comment