দক্ষিণ কোরিয়াকে শান্তি প্রস্তাব পাঠিয়ে কী ভাবে গোটা বিশ্বকে অবাক করলেন কিম জং-উন

কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক করতে চান উত্তর কোরিয়ার নেতা

 |  3-minute read |   29-04-2018
  • Total Shares

কয়েক মাস আগেই কোরীয় উপদ্বীপে এক ভয়াবহ পরমাণু যুদ্ধের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। পরিস্থিতি এতটাই জটিল ছিল যে কেউ ঘুণাক্ষরেও ভাবতেই পারেনি যে দু'টি দেশ নিজেদের মধ্যে স্থায়ী শান্তির স্থাপনের লক্ষ্যে সচেষ্ট হবে। তাও আবার প্রস্তাবটা প্রথমে উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে আসবে!

কিন্তু এই অসম্ভব ২৭ এপ্রিল বাস্তবে পরিণত হল। সেদিন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুন জায়ে ইন ও উত্তর কোরিয়ার তরুণ স্বৈরাচারী শাসক কিম জং উন একটি শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এই চুক্তিপত্রে দু'টি দেশই শপথ নিয়েছে যে কোরীয় উপদ্বীপে আর কোনও যুদ্ধ হবে না এবং দুই নেতাই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণের লক্ষ্য়ে কাজ করবেন বলে সম্মত হয়েছেন।

সেনামুক্ত অঞ্চলে (ডিমিলিটারাইজড জোন) এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে মুন ও কিম করমর্দন করলেন। একটি বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের পরে দুই নেতা একটি ম্যারাথন বৈঠকে মিলিত হন। দেখে মনে হল উত্তর কোরিয়া সত্যি সত্যিই শান্তি প্রক্রিয়া বজায় রাখতে বদ্ধপরিকর। উত্তর কোরিয়া খুব দ্রুত অতীতকে ভুলে নতুন করে শুরু করতে মরিয়া। সীমান্তের দু'দিকের দু'টি দেশই বহু যুগ ধরেই অভিন্ন ইতিহাস, অভিন্ন ঐতিহ্য ও ধমনীতে একই রক্ত বহন করে এসেছে। তারা এখন সেই একাত্মবোধ রক্ষা করবার জন্য সচেষ্ট হয়েছে।

body1_042918071006.jpgসেনামুক্ত অঞ্চলে (ডিমিলিটারাইজড জোন) এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে মুন ও কিম করমর্দন করলেন।

এই বৈঠক সাফল্যমণ্ডিত করে তোলবার জন্য দু'জন নেতাই প্রসংশার দাবি করতে পারেন। তাঁরা একে অপরের সঙ্গে খোলাখুলি কথাবার্তা বলে দুই দেশের সম্পর্কে এগিয়ে নিয়ে গেলেন।

এরকম স্পর্শকাতর বিষয়ে এত বড় ধরণের বৈঠক খুব অল্প সময়ের মধ্যে আয়োজন করবার জন্য মুনকে শুভেচ্ছা জানানো উচিৎ। যে মুহূর্তে তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে উত্তর কোরিয়া বন্ধুত্বের হাত বাড়াতে চায়, তিনি কোনওরকম ভুল না করে সেই প্রস্তাব মাথা পেতে নিয়েছেন।

মুন এমনিতেই শান্তির পক্ষে। অচলাবস্থার সময় তিনি কঠোর ছিলেন, কিন্তু একই সঙ্গে তিনি নমনীয়ও ছিলেন। চিন বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন দুই দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলাচ্ছিল তখন তিনি তাদের বাধা দেননি। আবার নিজেকে অনেকটা দূরেও সরিয়ে রেখেছিলেন। কয়েক মাস আগে যখন যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও যুদ্ধ এড়়াতে চাইছিলেন, তখন মুন পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছিলেন যে ট্রাম্পের অনুমোদন ছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া যুদ্ধ করবে না। ট্রাম্প তথা চিনের জি জিনপিং বা জাপানের শিনজো অ্যাবের মতো বড় বড় নেতাদের মাঝে মুন নিজেকে একজন সত্যিকারের রাজনীতিবিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছেন।

তবে ২৭ এপ্রিলের বৈঠকে নিজেকে নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠা করলেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম। কিমকে "একটি ছোট রকেট মানব" বলে সম্বোধন করেন ট্রাম্প। গোটা বিশ্বে তিনি একজন উন্মাদ ও অত্যাচারী নেতা হিসেবে পরিচিত। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে সম্যক কোনও ধারণা নেই তাঁর। ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রনেতা হিসেবে তিনি মাত্র একটি বিদেশ সফর করেছেন, তাও চিনে।

কিন্তু, তা সত্ত্বেও, মুনের সঙ্গে বৈঠকের সময় তিনি অস্বস্তিতে আছেন বলে একবারও মনে হয়নি। পিস হাউসে বৈঠক শেষে উত্তর কোরিয়ার নেতা গেস্ট বুকে লিখেছেন, "দুই দেশের শান্তি প্রক্রিয়া শুরুর মধ্যে দিয়ে আজ এক নতুন ইতিহাসের সূচনা হল।" তিনি মুনকেও উত্তর কোরিয়া সফরে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠকের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে কিমের দক্ষিণ কোরিয়া সফর কী বাকি বিশ্বকে স্বস্তি দেবে? উত্তর কোরিয়ার উপর কী সত্যি সত্যি বিশ্বাস করা যায়?

body_042918071035.jpgআগের অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা পরিষ্কার:  উত্তর কোরিয়া গভীর জলের মাছ

আগের অভিজ্ঞতা থেকে একটা কথা পরিষ্কার যে উত্তর কোরিয়া খুবই গভীর জলের মাছ। ২০০০ ও ২০০৭ সালে দু'বার এই চেষ্টা করা হয়েছিল এবং কোনওবারেই তা ফলপ্রসূ হয়নি। উত্তর কোরিয়ার নেতারা কিন্তু নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতে পছন্দ করেন। এবার কী অন্যরকম কিছু আশা করা যায়? উত্তর জানতে বিশ্বকে এখন অধীর আগ্রহে উত্তর কোরিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে।

তবে আশা করা যেতেই পারে কারণ কিম এখন ভালোভাবে জানেন যে তাঁর ভুলভাল আচরণ গোটা বিশ্ব কিন্তু ভালো চোখে দেখবে না। কিম বুঝতে পেরেছেন ট্রাম্পও কিন্তু তাঁর মতো অস্থিরমতি। এই পরিস্থিতিতে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ প্ৰকল্প নিয়ে কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ না করার জন্য তাঁদের উপর যে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, তার জন্য ভুগতে হচ্ছে উত্তর কোরিয়ার জনগণকে।

কিম আর মুনের বৈঠকে যার সূচনা হল তা কোন দিকে গড়াচ্ছে বোঝা যাবে কিম ও ট্রাম্পের বৈঠকের পরে।

পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ মুখে বলা এক জিনিস আর কাজে করে দেখানো আর এক জিনিস।

উত্তর কোরিয়াকে তাদের সিদ্ধান্ত নিয়ে আরও স্বচ্ছ হতে হবে। এই অবস্থায় কিম ট্রাম্পের বৈঠকের গুরুত্ব অপরিসীম। এই বৈঠক কোরীয় উপদ্বীপে পাকাপাকি ভাবে শান্তি স্থাপন করে ইতিহাস সৃষ্টি করতে পারে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

AJAY LELE AJAY LELE

The writer is a Senior Fellow with Institute of Defence Studies and Analyses, Delhi.

Comment