জম্মু-কাশ্মীরে পঞ্চায়েতে বিজেপির ভালো ফলাফলে কেন কাশ্মীরে ইতিহাস সৃষ্টি হল
ভোটারদের বার্তাটা খুব পরিষ্কার: তারা ভারতীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার উপর আস্থা হারায়নি
- Total Shares
১৩ বছর পর জম্মু ও কাশ্মীরে পঞ্চায়েত ভোট সম্পন্ন হল। রাজ্যের দুই প্রধান দল ন্যাশনাল কনফারেন্স (এনসি) ও জম্মু ও কাশ্মীর পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি। কিন্তু তা সত্ত্বেও, জঙ্গি সংগঠনগুলোর হুমকিকে তোয়াক্কা না করে যে ভাবে রাজ্যের সাধারণ মানুষ ভোটদান করেছেন তাতে একটা বিষয় পরিষ্কার - এই নির্বাচনগুলোর ঐতিহাসিক তাৎপর্য সম্পর্কে রাজ্যের সাধারণ মানুষ ওয়াকিবহাল।
এর আগে একটি লেখায় আমি বলেছিলাম যে তৃণমূল স্তরে যদি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায় তা হলে ভোটদাতাদের ক্ষমতায়নের ব্যবস্থা করা যাবে, পাকিস্তানের মদতপুষ্ট জঙ্গি বাহিনীগুলোর বিরোধিতা করা সম্ভব এবং সর্বোপরি রাজ্যের তরুণরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই ঠিক করতে পারবেন। রাজ্যের প্রথম দফা নির্বাচনেই ৬৫ শতাংশ ভোটদান হয়েছে। এর মানে স্থানীয় শুধুমাত্র ভারতীয় গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় আস্থা রাখেনি, একই তারা উপত্যকায় এক নতুন ধারার মূলস্রোত রাজনীতিকে আহ্বান জানিয়েছে।
অনন্তনাগ, কুলগাম, পুলওয়ামা ও সোপিয়ান - দক্ষিণ কাশ্মীরের চার জঙ্গি অধ্যুষিত জেলায় বিজেপির বিপুল সাফল্য বুঝিয়ে দিচ্ছে যে স্থানীয় লোকেরা আর দড়ি টানাটানি খেলায় আকৃষ্ট হচ্ছেন না। খুব সম্ভবত রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বিজেপির সাফল্য নিয়ে খুব বেশি মাথা ঘামাবেন না। কিন্তু তাই বলে বর্তমান পরিস্থিতিকে কখনোই উপেক্ষা করা যাবে না।
ইতিহাস সৃষ্টি করলেন কাশ্মীরের জনগণ [ছবি: রয়টার্স]
সোপিয়ানে ১৩টি আসনে বিরোধী প্রার্থী না থাকায় সবকটি আসনেই জয়লাভ করেছে বিজেপি। এখানে বিজেপিকে মুসলমান প্রার্থী দিতে দেখেও সংবাদমাধ্যমের ব্যাখ্যা ছিল যে গেরুয়া শিবির সমানাধিকারের জায়গা নেই।
এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন লোক ভিন্ন মত পোষণ করতেই পারেন। কিন্তু এই নির্বাচন থেকে যে একটা স্পষ্ট বার্তা পাওয়া গিয়েছে তা কেউই অস্বীকার করতে পারবেন না। বেশ কয়েকটি জায়গায় যেখানে স্থানীয়রা ভেবেছে যে তৃণমূল স্তরেই তাদের সমস্যা মুক্তি হবে সেখানে তারা কংগ্রেসের মতো দলকেও ভোট দিতে কুণ্ঠা বোধ করেনি। মোট ২৬৭টি ওয়ার্ডে জয়লাভ করেছে কংগ্রেস। আবার অন্য জায়গায় যেখানে স্থানীয়রা পরিবর্তনের প্রয়োজন মনে করেছেন সেখানে ভালো ফলাফল করেছে বিজেপি।
ফলাফল বিশ্লেষণ করতে বসলে দেখা যাবে অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ এলাকাগুলোতে কংগ্রেস ভালো ফলাফল করেছে। যেমন লেতে ১৩টি আসন পেয়েছে কংগ্রেস। আবার যে সব এলাকায় অশান্তির বাতাবরণ রয়েছে সেখানে স্থানীয়রা বিজেপিকে ভোট দিয়েছে। ৩০০টি ওয়ার্ডে জয়লাভ করে এই নির্বাচনে রাজ্যের একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে উঠে এসেছে বিজেপি। অর্থাৎ, বিজেপির পিডিপির সঙ্গ ছাড়া নিয়ে ভোটাররা একেবারেই বিচলিত নন।
এর মানে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর উপর এখনও আস্থা হারায়নি কাশ্মীরের জনগণ। সংবাদমাধ্যম যতই বিজেপিকে 'গেরুয়া দল' বা হিন্দু দল হিসেবে প্রচার করুক, কাশ্মীরের সাধারণ মানুষ মোদীর শাসনকেই পছন্দ করছে।
নির্বাচন কাদের জন্য অনুষ্ঠিত হয় [ছবি: পিটিআই]
সর্বভারতীয় বা মূলস্রোতের সংবাদমাধ্যমগুলো যে ভাবে নির্বাচনের ফলাফলের ব্যাখ্যা করছে তা একান্ত তাদের নিজস্ব মতামত। কিন্তু ১৩ লক্ষ মানুষ একটি তৃণমূল স্তরের নির্বাচনে নিজেদের পছন্দকে থেকে বাছাই করবে। এ ব্যাপারে মতামত চাপিয়ে দেওয়ার অধিকার তাদের নেই।
অনেকেই আবার বলতে পারেন যে রাজ্যের দুই প্রধান দল এই নির্বাচনে যোগ না দেওয়ায় এই নির্বাচনের কোনও গুরুত্ব নেই। তাতে কীই বা এসে গেল? যাদের জন্য এই নির্বাচন সেই সাধারণ মানুষ তো এই নির্বাচনে ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন। বরঞ্চ উল্টো, যারা যাঁরা এই নির্বাচনে অপ্রয়োজনীয় ছিল তারাই এই নির্বাচনে ছিল না। এবং তারা না থাকলে ভোটারদের যে কিছু যায় আসে না সেই বার্তাটাই কাশ্মীরি জনগণ দিয়েছেন।
একটা ঘটনা ঘটা আর একটি ইতিহাস সৃষ্টির মধ্যে ফারাক আছে। ইতিহাসকে প্রত্যক্ষ করতে হয়। মানুষই পারে একটি সাধারণ ঘটনার মধ্যে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করতে। কাশ্মীরে এখন ঠিক সেটাই হচ্ছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

