একসময় অনুপ্রবেশের বিরোধিতা করলেও এখন কেন উল্টো কথা বলছেন মমতা

অসমে ধর্মীয় তকমা ফেলে সকলকে বাঙালি বলছেন কেন তৃণমূলনেত্রী

 |  2-minute read |   06-08-2018
  • Total Shares

২০০৫ সালে লোকসভায় তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঝড় তুলেছিলেন, তাঁর অভিযোগ ছিল, রাজ্যের ভোটার তালিকায় নাম উঠে যাচ্ছে বাংলাদেশিদের। তখন পশ্চিমবঙ্গে বাম শাসকদলের বিরুদ্ধে বিরোধীদের লড়াইয়ের অদম্য মুখ ছিলেন মমতাই।

রাজ্যের অবস্থাকে বিপর্যয়ের সঙ্গে তুলনা করে এ বিষয়ে লোকসভায় আলোচনার দাবি করেছিলেন বামেদের বিরুদ্ধে সেই সময়ের একমাত্র যোদ্ধা। তাঁর আবেদন খারিজ কয়ে দেওয়ায় তিনি অধ্যক্ষের আসনের দিকে উঠে যান এবং ভোটার তালিকা ছুড়ে দিয়ে নাটকীয় ভাবে কক্ষ ত্যাগ করেন।

mamata-pti_1_080618063205.jpg১৩ বছরে অনুপ্রবেশ নিয়ে নীতি বদলেছেন মমতা

১৩ বছর পরে অসমে এনআরসি ইস্যুতে এখন কেন তিনি সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থান গ্রহণ করে সবচেয়ে বেশি সরব?

উত্তরটা সম্ভবত লুকিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গের বদলে যাওয়া রাজনৈতিক পরিস্থির ভিতরে। দ্বিতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর এখন বিজেপিই তাঁর সবচেয়ে বড় বিরোধী।

দেশভাগে ক্ষতবিক্ষত হওয়ার ঘটনা জড়িয়ে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যের ইতিহাসে, বাম আমলে কয়েক দশক ধরে যে ক্ষত কিছুটা চাপা পড়ে গিয়েছিল, এখন আবার বিজেপির মেরুকরণের রাজনীতি এই ক্ষত আরও গভীর করে দিয়েছে।

সাম্প্রদায়িকতার ফাটল যত চওড়া হবে বিজেপির পক্ষেও এ রাজ্যে মাটি পাওয়া তত সহজ হবে। প্রাথমিক ভাবে এই মেরুকরণের ফলে মুসলমান ভোট ব্যাঙ্ক সহজেই চলে আসবে মমতার দিকে। ক্রমাগত তিনি বিজেপিকে আক্রমণ করে যাওয়ার ফলে তিনিই যে সংখ্যালঘুদের একমাত্র রক্ষাকর্তা এবং পশ্চিমবঙ্গ যে সংখ্যালঘুদের কাছে নিরাপদ স্বর্গ, সেই ভাবমূর্তি তিনি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন।

তবে খুব দ্রুত বামেদের সরিয়ে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে বিজেপির উঠে আসা মমতাকে বেশ ভাবিয়ে তুলেছে। রাজ্যের সংখ্যাগুরু হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রতিক্রিয়ার কথা না ভেবেই, বিশেষ করে তাঁর সংখ্যালঘু তোষণ নিয়ে বিজেপির ক্রমাগত প্রচারের জবাব দিতে গিয়ে এবং তাদের ধর্মীয় প্রচারের মোকাবিলা করতে গিয়ে মমতা গেরুয়া-তাস খেলতে বাধ্য হলেন।

একই সঙ্গে বিজেপি ও বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মোকাবিলা করতে গিয়ে ও তাদের পালের হাওয়া কাড়তে গিয়ে গত দু’বছর ধরে তৃণমূলের নেতারাও যোগ দিতে শুরু করে দিলেন রামনবমী ও হনুমান জয়ন্তী পালনে।

এই অবস্থায় অসমের এনআরসি রিপোর্ট মমতার সামনে এনে দিল ভাষাগত তাস ফেলার সুযোগ। নাগরিকত্ব সমস্যার অভিমুখ ঘুরিয়ে তৃণমূল প্রচার করতে শুরু করল, এটা হল অসম থেকে বাঙালিদের তাড়াতে বিজেপির চাল।

পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু-মুসলমানের মধ্যে ফাটল ধরিয়ে যখন তা থেকে ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি, তখন মমতা চাইছেন ভাষা দিয়ে ও বাঙালিআনার কথা তুলে ধরে এই ফাটল মেরামত করতে। এক্ষেত্রেও তাঁর লক্ষ্য অবশ্য সেই সংখ্যালঘু ভোট।  

মমতার মতে, হিন্দু হোক বা মুসলমান, আসমে সব বাঙালিকেই বাংলাদেশি বলে তকমা দিয়ে দেওয়া হচ্ছে, আসলে এই বাংলাদেশি তকমার মধ্য দিয়ে সব গরিব বাংলাভাষী মুসলমানকেই প্রতিবেশী দেশের অনুপ্রবেশকারী বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

nrc-assam-pti__080618064441.jpgমমতার বক্তব্য, গরিব বাঙালি মুসলমানদের নিশানা করেছে বিজেপি

এনআরসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠে মমতা বলছেন, এটি ওই রাজ্য থেকে বাঙালিদের (পড়ুন বাঙালি মুসলমানদের) তাড়াতে বিজেপির একটা পরিকল্পিত চাল। ওঁরা বাস্তুচ্যুত হলে পশ্চিমবঙ্গ কি ঠাঁই দেবে? উত্তরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “আমরা ওঁদের ফিরিয়ে দিতে পারব না।”

এই কারণে নরেন্দ্র মোদী যখন রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, তখনও মমতা তার বিরোধিতা করেছিলেন, কারণ তাঁদের প্রায় সকলেই মুসলমান।

ধর্মীয় পরিচয় সরিয়ে রেখে বৃহত্তর ভাবে ভাষাগত পরিচয় তুলে ধরে, যাঁদের নাম ওই চূড়ান্ত খসড়া থেকে বাদ পড়েছে তাদের সমর্থন করার মধ্য দিয়ে, এক হাতে বাঙালি মুসলমানদের রেখে অন্য হাতে বিজেপিকে নস্যাৎ করার কৌশল নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

INDRAJIT KUNDU INDRAJIT KUNDU @iindrojit

The writer is principal correspondent, India Today TV and AajTak.

Comment