রাষ্ট্রপতিশাসন জারি করে ভোট হোক, রায় মাথা পেতে নেব
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একটি আসনে জয়ী বিজেপিও
- Total Shares
শুরুতেই একটা কথা বলি, এ রাজ্যে গণতন্ত্রের অধিকার অধিকার এখন আর সাধারণ মানুষের হাতে নেই, সেই অধিকার চলে গিয়েছে নেতাদের হাতে। আর নেতারা ক্ষমতার দম্ভে মশগুল। তাঁরা গণতন্ত্রের পথে না হেঁটেই ক্ষমতা দখল করতে চাইছেন। তবে রাজ্যে এই ধারা নতুন নয়, এ রাজ্যে এ ভাবে নির্বাচনের ইতিহাস অনেক দিনের পুরোনো।
এখন মনোনয়ন জমাই দিতে দেওয়া হচ্ছে না বিরোধীদের, ক্ষমতা আর দম্ভ দিয়ে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের নামিয়ে, তাদের সামনে রেখে গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করছে শাসক দল। তারপরেও ব্যতিক্রমী ঘটনা ঘটেছে হুগলি জেলার সরাই-তিন্না অঞ্চলে।
একটা কথা বলে রাখা দরকার, সরাই-তিন্না অঞ্চলে, যেখানে আমাদের প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিতেছেন, সেখানে আমাদের পক্ষে সন্ত্রাস করে বা ভয় দেখিয়ে শাসক দলের প্রার্থীকে মনোনয়ন জমা দিতে বাধা দেওয়া সম্ভব নয়। এখানে আসলে মানুষ আমাদের উপরেই ভরসা রেখেছিলেন, এখনও ভরসা করে আছেন। তাই অন্য কোনও দল এখানে প্রার্থী খুঁজেই পাননি।
বছর দেড়েক আগের একটা ঘটনা বলি। আমি ওই অঞ্চলেই গিয়েছিলাম আমাদের পঞ্চায়েত সদস্যাকে মারধর করা হয়েছে এমন খবর পেয়ে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখি, যারা তাঁকে মারধর করেছে, এলাকার লোকজন তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। যারা সেদিন মারধর করেছিল, মানুষের রুখে দাঁড়ানো দেখে এখন তারা ভয় পেয়ে গিয়েছে, তারা আজও সামনে আসতে পারছে না। ওই এলাকায় মানুষ এখন স্বতস্ফূর্ত ভাবে বিজেপির পক্ষে।
উল্লসিত বিজেপি: ছবিটি উপস্থাপনা মূলক, প্রতিবেদনের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়
সঠিক ভাবে যদি গণতন্ত্র যাচাই করা হয়, তা হলে দেখা যাবে, এখন রাজ্যে বিরোধী হিসাবে অন্য দলের চেয়ে এগিয়ে আছে বিজেপিই। শাসকদল এখন তাদের ক্ষমতার দম্ভ আর ঔদ্ধত্যে অনেকটাই জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে, সেটা তারাও বুঝতে পারছে, তাই ভোটে জিততে মরিয়া হয়ে বিরোধীদের মনোনয়ন পর্যন্ত জমা দিতে দিচ্ছে না।
বীরভূম, কেশপুর, গড়বেতা-সহ বিভিন্ন জায়গায় তারা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়লাভ করছে। আরও বহু জায়গায় এমন ঘটনা ঘটছে। এটা কখনও সুস্থ গণতন্ত্রের নমুনা হতে পারে না। ভারতের কোথাও এই ঘরনের ঘটনা ঘটে না যে বিরোধীরা মনোনয়ন পর্যন্ত জমা দিতে পারছেন না।
তবুও আজ এখানে প্রার্থী দিতে পারেনি সরকারি দল, কারণ এখানে মানুষ সরকারের প্রতি এতটাই বীতশ্রদ্ধ, সরকারের আচরণে একতটাই বিরক্ত যে এখানে সরকারি দলের হয়ে কেউ প্রার্থীই হতে চাননি। তাদের আত্মগরিমা আর দুর্নীতি দেখে রাজ্যের মানুষও অসন্তুষ্ট। কিন্তু সরকারি দল দুষ্কৃতীদের এগিয়ে দেওয়ায় সাধারণ মানুষ কিছু করতে পারছে না। এটা আগামী দিনে সরকারের কাছে অশনিসঙ্কেত হতে পারে। সরকারেরও এ কথা ভাবা দরকার, বোঝা দরকার।
এটা আমার মত, একান্ত ব্যক্তগত। তা হল, একবার পরীক্ষা করার জন্য রাষ্ট্রপতিশাসন জারি করে এ রাজ্যে ভোট করা হোক, যেখানে কোনও শাসকদল থাকবে না, পুলিশ-প্রশাসন থাকবে নিরপেক্ষ। কারও কোনও ক্ষমতা থাকবে না। দেখা যাক, মানুষ আসলে কী বলছে। আমি সেই জনতার রায় মাথা পেতে নেব, সেই রায় যাই হোক না কেন।

