রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস কী ভাবে শুভবুদ্ধির বিনাশ ঘটাল
আগের দিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংসদীয় রীতির প্রতি ন্যূনতম শ্রদ্ধা দেখাননি রাহুল গান্ধী
- Total Shares
রাহুল গান্ধী ও তাঁর দল কংগ্রেসের সাম্প্রতিক যা আচরণ দেখলাম তাতে আমি একটি দৃঢ় সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। আমাদের ভারতীয়দের কাছে কংগ্রেস অত্যন্ত বিড়ম্বনার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
পরশুদিন মাত্র ২৪ ঘণ্টায় আমি যা দেখেছি তা থেকেই আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি। কেন আমার দৃষ্টিভঙ্গি এরকম হয়েছে এখন সেটাই ব্যাখ্যা করব।
১। সংসদের প্রতি কোনও শ্রদ্ধাই নেই
হয়তো আপনি কোনও একটা বিষয় ঠিক ভাবে বুঝতে পারছেন না। তখন আপনার উচিত আরও একটু বাড়তি পরিশ্রম করে ওই বিষয়টি আরও স্পষ্ট ভাবে বোঝার একটু চেষ্টা করা। গত পরশু দিন সংসদে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি রাফাল চুক্তির প্রাথমিক বিষয়গুলি ব্যাখ্যা করে বোঝানোর চেষ্টা করছেন তখন সেটি বোঝার চেষ্টা করার বদলে কংগ্রেসের সাংসদরা ব্যস্ত রইলেন কাগজের বিমান তৈরি করে অর্থমন্ত্রীকে লক্ষ করে তা ওড়াতে।
আরও দুর্ভাগ্যজনক হল, সংসদে যখন অধ্যক্ষ তাঁকে বললেন যে তিনি তাঁর দাবি প্রমাণ করতে পারবেন কিনা তখন সে্ই বিতর্কে পরাজিত হয়ে কংগ্রেস সভাপতি সাড়ম্বর একটি সাংবাদিক বৈঠক করলেন এবং তার সেই বৈঠকের বিষয়বস্তু টুইটও করলেন। একটা কথা নিশ্চিত ভাবে বলতে পারি যে সংসদ ভবনের ভিতরে কোনও একজনের আচরণ ও ভবনের বাইরে তাঁর আচরণের মধ্যে কিছুটা ফারাক থাকা উচিত এবং জনপ্রতিনিধি হিসাবে জনগণকে যে বার্তা দিচ্ছেন তার যথোপযুক্ত মাত্রা থাকা আবশ্যিক।
২। গোলমেলে ‘প্রমাণ’কে আইনসিদ্ধ করা
লোকসভার মাননীয়া অধ্যক্ষা সুমিত্রা মহাজন যখন তাঁকে সেই টেপের (তথাকথিত মনোহর পার্রিকরের সেই টেপ) সত্যতা প্রমাণ করতে বললেন তখন রাহুল গান্ধী দ্রুত সেই প্রসঙ্গ থেকে সরে গেলেন এবং সেই চ্যালেঞ্জ গ্রহণই করলেন না।
এখন অনেকেই হয়তো মনে করতে পারবেন যে এই গোষ্ঠীটির কাছে জালিয়াতি কোনও কঠিন ব্যাপার নয়। যখন রাজীব গান্ধীর বিরুদ্ধে কঠিন লড়াই করছেন বিশ্বনাথ প্রতাপ সিং, তখন তাঁর পুত্রের নামে সেন্ট কিটস দ্বীপে কল্পিত ও অতিরঞ্জিত একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের কথা এরা প্রচার করেছিল।
মোদ্দা কথাটি হল কেন রাহুল গান্ধী সেই তথাতথিক রাফাল-টোপটি সংসদে বাজালেন না?
সোজাসাপ্টা উত্তর হল তিনি জানেন যে যদি প্রমাণ হয়ে যায় যে টেপটি নকল তা হলে তার অত্যন্ত গুরুতর মামলায় তিনি জড়িয়ে পড়তে পারেন। এমন একজন ব্যক্তি যিনি ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় ইতিমধ্যেই জামিনে রয়েছেন তিনি আরেকটি মামলার মুখে পড়তে চাইছেন না। তবে তাঁর সাংবাদিক বৈঠক এবং তারপরে টুইট করা থেকে একটি ব্যাপার স্পষ্ট হয়ে গেছে যে তিনি এ নিয়ে প্রচার থেকে পিছু হঠবেন না। গুরুতর কোনও দাবি করার ক্ষেত্রে তথ্যপ্রমাণের যে মর্যাদা রয়েছে তিনি সেই মর্যাদার প্রতি কি শ্রদ্ধা দেখাতে পারলেন?
লোকসভার অধ্যক্ষা সুমিত্রা মহাজন যেই রাহুল গান্ধীকে ওই টেপটির (মনোহর পার্রিকরের তথাকথিত টেপ) সত্যতা যাচাই করতে বললেন তক্ষুণি পিছু হঠলেন রাহুল গান্ধী (ছবি: পিটিআই)
এই নির্ভেজাল বালখিল্যপনা দেখার পরে একজন মনে ভাবতেই পারেন যে কংগ্রেস দলটা হল স্রেফ সুযোগসন্ধানী।
৩। ভাঙা রেকর্ড বারে বারে বাজিয়ে চলা
গোটা তিন-চারেক প্রশ্ন রয়েছে যা গত একবছর ধরে অনর্গল ভাবে করে চলেছে কংগ্রেস। এই প্রতিটি প্রশ্নেরই বিস্তারিত উত্তর দেওয়া হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে কংগ্রেস ওই সব প্রশ্নের উত্তর বুঝেই উঠতে পারছে না এবং সে জন্য বারে বারে তারা একই প্রশ্ন করে চলেছে। ২৪ ঘণ্টা আগে আরও একবার সেই একই প্রশ্নগুলি করলেন রাহুল গান্ধী।
প্রশ্ন ১: কেন ১২৬টির বদলে ৩৬টি এয়ারক্র্যাফ্ট চাইছে ভারতীয় বায়ুসেনা?
প্রশ্ন ২: কেন ৫৬০ কোটি টাকার বদলে প্রতিটির দাম ১,৬০০ কোটি টাকা?
প্রশ্ন ৩: কেন এইচএএলের বদলে এএ?
এখানে অসংখ্যবার জিজ্ঞাসা করা এই তিনটি প্রশ্নের সোজাসাপটা উত্তর দিয়ে দিচ্ছি।
উত্তর ১: কারণ এই ৩৬টি বিমান একবারে উড়ানের জন্য প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনার তাড়া ছিল বলেই চুক্তিটি ত্বরাণ্বিত করা হয়েছে।
উত্তর ২: কংগ্রেস একটি এয়ারক্র্যাফ্টের কাঠামোর দামের সঙ্গে সম্পূর্ণ ভাবে সমরাস্ত্রে সজ্জিত একটি বিমানের দামের তুলনা করছে।
উত্তর ৩: একটি এয়ারক্র্যাফটকে পুরোপুরো প্রস্তুত করতে এইচএএলের ২.৭ গুণ বেশি কর্মদিবস প্রয়োজন হবে এবং সে ক্ষেত্রে খরচও অনেক বাড়বে এবং আবার নতুন করে দেরি হবে।
প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের কোনও প্রমাণ নেই এবং অত্যন্ত কুরুচিকর ভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে। (ছবি: পিটিআই)
আমি আরও একটা কথা বলতে চাই যে রাহুল গান্ধী যে ভাবে কোনও প্রমাণ ছাড়াই প্রধানমন্ত্রীকে ‘চোর’ বলে উচ্চগ্রামে প্রচার করছেন তাতে তিনি কঠোর ভাবে মানহানির মামলার মুখে পড়তে পারেন, অন্তত আমার বিবেচনায় সে কথাই মনে হচ্ছে।
যাই হোক আমরা কখনোই চাই না যে তিনি তাঁর এই নীচ মানসিকতা গণমাধ্যমে প্রচার না করতে পারেন। তার চেয়ে বরং আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে কংগ্রেসকে উপযুক্ত জবাব দিক দেশের মানুষ।
যেহেতু আমার মনে হয়েছে যে রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস দল দেশের মানুষের কাছে বিড়ম্বনা হয়ে দাঁড়িয়েছেন, তাই এখানে আমি একেবারে আমার প্রাথমিক দৃষ্টিভঙ্গিটাই তুলে ধরেছি। দলটা এখন মাত্রাজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে এবং স্থান-কাল-পাত্রের বিবেচনাও করতে পারছে না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

