রাফাল নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর উপরে রাহুলের আক্রমণ আর তথ্যের লড়াই নেই

বাস্তবতা যেতে সরে ধারণার ভিত্তিতে বিতর্ক চলছে, এখন লক্ষ্য বাকযুদ্ধ জয়

 |  6-minute read |   08-01-2019
  • Total Shares

নানা রকম উপমা ও রূপক ব্যবহার করে কোনও বিষয়কে আরও প্রাঞ্জল ও হার্দিক করে তোলার ব্যাপারে প্রবল ঝোঁক রয়েছে এমন এক অত্যন্ত নামী সাংবাদিকের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছিল।

তাঁর পছন্দের একটা কথা ছিল – কোনও সম্পর্কে জড়িত বলে কেউ যদি তোমার দিকে আঙুল তোলেন তা হলে কখনও তা অস্বীকার করবে না। উল্টে তাঁকেই জিজ্ঞাসা করবে, “তোমার কি হিংসা হচ্ছে?” যদি তার পরেও সেই ব্যক্তি একই কথা বলতেই থাকেন তা হলে এ বার তাঁকে জিজ্ঞেস কর, “তোমার কি মনে হয় না যে আমার পছন্দ বেশ ভালো?” তা হলে তারা চুপ করে যেতে বাধ্য। তবে তুমি যদি সটান অস্বীকার করতে যাও তা হলে সেটাই ওই গুজবে ইন্ধন জোগাবে।

রাফাল নিয়ে এখন যে তু-তু-ম্যায়-ম্যায় কাণ্ডকারখানা চলছে তা আমাকে সেই ব্যক্তির কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

আমি অবাক হব যদি কংগ্রেসের এই অভিযোগ শুনে বিজেপির কোনও নেতানেত্রীর প্রতিক্রিয়া এই ধরনের হয় যে, “আপনাদের আমলে এটি হয়নি বলে কি হিংসা হচ্ছে – নাকি আপনারা এর কৃতিত্ব নিতে পারছেন না বলে...?”

যদি তার পরেও তদন্ত-তদন্ত বলে শোরগোল করতে থাকে তা হলে মুখের মতো জবাব হতে পারে: “আপনাদের কি মনে হচ্ছে না যে রাফাল পছন্দ করা অত্যন্ত ভালো পদক্ষেপ এবং এটি ইউরোফাইটারের চেয়ে অনেক ভালো যুদ্ধবিমান?”

modi-rafale-story-ne_010819042451.jpgঅনেক দেরিতে কংগ্রেসের চাল বুঝতে পেরে নতুন করে কৌশল ঠিক করছে বিজেপি (ছবি: পিটিআই)

আমি নিশ্চিত করে বলতে পারছি না এই কথা বলে সেই বিতর্কে জল ঢেলে দেবেন কিনা কিংবা একটা মোচড় দিয়ে পুরো বিষয়টার অভিমুখ বদল করে দেবেন কিনা।

অগস্ট মাসে ফিরে যাই, ভোটদাতাদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কংগ্রেসের ডেটা অ্যানালিটিক্স সেলের প্রধান প্রবীণ চক্রবর্তী প্রথম ইস্যু হিসাবে রাফালকে তুলে ধরেন।

আগে আমার লেখা বিভিন্ন প্রতিবেদনে এই প্রসঙ্গের অবতারণা আমি করেছি এবং সেখানে বলেছি যে এই পদক্ষেপটি তারা করেছে সুফল লাভ করার উদ্দেশ্যে। বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে রক্তের স্বাদ পাওয়া কংগ্রেস সুর নরম করবে, তা মনে হয় না।

দেখা গেছে যে ক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে ভারতে প্রত্যর্পনের দাবি রাফালের কয়েকটা ব্যাপার স্পষ্ট করতে পারে, কিন্তু তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিস্ফোরক কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

christian_michel-690_010819042550.jpgক্রিশ্চিয়ান মিশেলকে জেরা করে বিস্ফোরক কোনও কিছুই জানা যায়নি। (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

দিল্লিতে আসতে পারাকে শাপে বর বলেই ভাবতে পারেন মিশেল, তিনি অতি গোপন কোনও তথ্য তিনি প্রকাশ করবেন না। তাই কংগ্রেসও অগস্তা সংক্রান্ত ব্যাপার এড়িয়ে রাফাল নিয়ে খোঁচা দেওয়া বন্ধ করবে না।

  • এ থেকেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে এটা এখন আর তথ্যের লড়াই নেই – এখন এটা তর্কযুদ্ধের জায়গায় পৌঁছে গেছে।

প্রথম দিকে তথ্য দিয়ে কংগ্রেসকে পাল্টা আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল বিজেপি। কিন্তু দেখা গেল যে বিজেপির সেই চেষ্টা মাঠে মারা যাচ্ছে, কারণ প্রতিটি স্তরে চতুর রাজনীতি করে কংগ্রেস চেষ্টা করছে বিজেপির এই চেষ্টা ভণ্ডুল করে দিতে, উল্টে তারা বিজেপির লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলছে। এটা কংগ্রেসের রণনীতির একটা অঙ্গ বলেসই মনে হচ্ছে এবং এ ব্যাপারে আশপাশ থেকে তারা সমর্থকও জুটিয়ে নেয় বিজেপিকে আক্রমণ করার ব্যাপারে। তাই ‘আংশিক সময়ের জাতীয়তাবাদী’দের মধ্য থেকে অরুণ জেটলির মতো তিন নেতা পুরনো ঘটনার কথা সংবাদমাধ্যমকে দিয়ে যেতে শুরু করেন যাতে প্রেক্ষাপট স্পষ্ট হয়ে যায়।

jaitley-story_010319_010819042704.jpgবফর্স, অগস্টা ওয়েস্টল্যান্ড ও ন্যাশনাল হেরাল্ডের মতো ঘটনার কথা টেনে এনে কংগ্রেসকে কিস্তিমাত করে দিতে পারেন অরুণ জেটলি-সহ বিজেপির অন্য নেতারা। (ছবি:  সৌজন্য লোকসভা টিভি)

১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী একটি সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে কয়েকদিন আগে সংসদে অরুণ জেটলি বলেন, কেউ কেউ মনে করছেন যে কংগ্রেসের কৌশল অনেক পরে আঁচ করতে পেরেছে বিজেপি এবং তারা এখন তাদের কৌশল নতুন করে খতিয়ে ভাবছে।

পরিকল্পনাটি এই রকম হতে পারে যে নরেন্দ্র মোদী নীতিবাক্য কথা শোনাবেন এবং বলবেন যে শুধুমাত্র ভোটের জন্য তিনি দেশের নিরাপত্তার প্রস্তুতির স্বার্থে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ফাঁদে পা দেবেন না বা এই সব প্রচারে পাত্তা দেবেন না, যখন জেটলি ও অন্য নেতারা বফর্স, অগস্তা ও ন্যাশনাল হেরাল্ডের প্রসঙ্গ টেনে এনে কংগ্রেসকে কিস্তিমাত করবেন।

এই কৌশলে কাজ হোক বা না হোক, যা জানা যাবে তা যৎসামান্য এবং যা কিছু জানা যাবে তাও অনেক, অনেক পরে। কিন্তু তার মধ্যে কংগ্রেস নেতৃত্ব অনেক কপটতাই করতে পারে।

অনাস্থা প্রস্তাবে রাহুল গান্ধীর বক্তৃতার কোনও অংশেই কোনও গাম্ভীর্য ছিল না।

তাঁর ঠোঁটে সর্বদাই একটা কৃত্রিম হাসি লেগে ছিল, অধ্যক্ষের আপত্তিতেও তিনি বিন্দুমাত্র শ্রদ্ধা দেখাননি ‘এএ’ ও ‘মনোহর পার্রিকর’-এর নাম করার ব্যাপারে এবং অর্থমন্ত্রীর বক্তৃতা চলাকালীন তাঁকে হেয় করার জন্য ছেঁদো ও অস্থিরমতিত্বের পরিচয় দিয়ে তাঁর দলীয় সহকর্মীরা কাগজের তৈরি উড়োজাহাজ ওড়ানো শুরু করেন লোকসভার কক্ষের মধ্যেই – এ থেকেই বোঝা যায় যে ব্যাপারটি কতটা ফোঁপরা।

rahul690_010819050937.jpgরাহুল গান্ধী কি সমস্যায় পড়েছেন? (ছবি: পিটিআই)

স্পষ্টতই, কংগ্রেসের হয়ে যাঁরা প্রচারের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা প্রধানত দু’টি দিক নিয়ে কাজ করছেন। প্রথমটি হল প্রধানমন্ত্রীর স্বচ্ছ্ব ভাবমূর্তি ও ব্যক্তিগত যোগ্যতাকে দুরমুশ করা। দ্বিতীয়টি হল কৃষকদের দুরবস্থা (কৃষিঋণ মকুব করার মাধ্যমে), জিএসটি, বিমুদ্রাকরণ এবং কর্মসংস্থান নিয়ে বিজেপিকে জড়িয়ে প্রচার করে জনধন প্রকল্প, উজ্জ্বলা প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো বিজেপির সাফল্যকে ঢেকে দেওয়া।

যদি রাজ্য বিধানসভাগুলির ফলাফলের নিরিখে বিচার করা যায় তা হলে বলতে হবে যে মনে হচ্ছে তাদের পরিকল্পনায় কাজ হচ্ছে।

তবে আমার মনে হয়, আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সোশ্যাল মিডিয়ার একাংশের সঙ্গে কংগ্রেস নিজেকে যুক্ত করে ফেলেছে। এ থেকে হয়তো বোঝা যাবে যে কেন স্বাধীনতা ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তথ্যের পেশ করার দিকে না হেঁটে রাহুল গান্ধী কেন শুধুমাত্র ‘এএ’-র অফসেট সুবিধা, হিন্দুস্তান এরোনটিক্স রাফালের বরাত না পাওয়ায় কর্মসংস্থানের কতটা ক্ষতি হল তার মনগড়া হিসাব নিয়ে ব্যস্ত রইলেন।

ঋণ মকুব করা নিয়ে সংবাদমাধ্যমের একাংশকে খুব একটা অখুশি দেখায়নি, তারা খুব দ্রুতই জনধন খাতে জাতীয় পেনশন প্রকল্পের কথাও তুলে ধরেছে এবং ব্যবসায়ীদের ঋণ শোধ করতে না পারার প্রসঙ্গের সঙ্গে তার তুলনাও করেছে।

সংবাদমাধ্যম কতটা কংগ্রেসের লাইন নিচ্ছে তা বলা বেশ কঠিন তবে পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে যে তারাই অভিমুখ ঠিক করে দিচ্ছে। তাই রাহুল গান্ধী যদি মনে করেন যে তিনি দমবন্ধকরা অবস্থার মধ্যে রয়েছেন তা হলে তার যথেষ্ট কারণ আছে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SANDIP GHOSE SANDIP GHOSE @sandipghose

Writer and blogger on current-affairs.

Comment