বিরাটের স্বভাব কি সত্যি সত্যিই খারাপ?

তাঁর স্বভাবের জন্যে প্রশংসার থেকেও নিন্দা বিরাটের ভাগ্যে বেশি জোটে

 |  3-minute read |   19-12-2018
  • Total Shares

মাঠে বিরাট কোহলিকে দেখলে সত্যিই মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। আবেগপ্রবণ, মারাত্মক লড়াকু এবং সর্বদাই অভিব্যক্তিপূর্ণ। বিরাট নামক যোদ্ধাটি যেন একাই বিপক্ষ শিবিরে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে দেন। আপনি যদি মাঠে নেমে ভারতকে পরাস্ত করতে চান তাহলে আপনাকে বিরাটের আগ্রাসনের মোকাবিলার জন্যে প্রস্তুত থাকতে হবে।

আর, আপনি যদি অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেটার হয়ে থাকেন তাহলে জেনে রাখবেন বিরাটের অগ্রাসন বাড়তে বাধ্য।

কোহলির দুটো দিক রয়েছে - ব্যাটসম্যান বিরাট ও মানুষ বিরাট।

ব্যাটসম্যান বিরাটকে থামানো সহজ নয়। পর পর দু'বছর ধরে বছরে ১১টি করে শতরান করেছেন তিনি। এ বছর এখনও একটি টেস্ট ম্যাচ বাকি রয়েছে। ডিসেম্বরের শেষে মেলবোর্নে সেই টেস্ট অনুষ্ঠিত হবে। গত বছরের মতো এবছরেও কোহলি প্রায় তিন হাজার আন্তর্জাতিক রান করে ফেলেছেন।

body_121918051621.jpgযোদ্ধা বিরাট কিন্তু বিপক্ষ দলের দুঃস্বপ্ন [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]

এ বছর বিদেশের মাটিতে, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ডে, ভারত একদম সুবিধা করে উঠতে পারেনি। এই পরিস্থিতিতেও ব্যাট হাতে একা লড়াই করে গিয়েছেন কোহলি। কঠিন পরিস্থিতিতে বিশ্ব শ্রেষ্ট বোলারদের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি শতরানের দৌলতে তিনি সর্বকালীন বিশ্ব সেরাদের তালিকায় ইতিমধ্যেই নিজের নামটা লিখিয়ে ফেলেছেন।

এবার মানুষ কোহলির কথায় আসা যাক।

পেন মুরলি বিজয়কে টেস্ট চলাকালীন জিজ্ঞেস করেছিলেন তিনি সত্যিই অধিনায়ককে পছন্দ করেন কিনা। অস্ট্রেলীয় অধিনায়কের এই কথা স্টাম্প মাইক্রোফোনে ধরা পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে ভাইরাল হয়ে যায়। আসলে ভারতে কোহলির ক্রেজ কিন্তু সাংঘাতিক। বিরাট ভক্তরা তাঁকে বেশ পছন্দই করেন।

body1_121918051727.jpgবিরাট কোহলি ইনিংসগুলো ক্রিকেট লোকগাথা হয়ে গিয়েছে [সৌজন্যে: ইন্ডিয়া টুডে]

কিন্তু তা জানা সত্ত্বেও পেন ঝামেলার সলতে পাকিয়ে ছিলেন। প্রায় দু'দিন ধরে ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়কের মধ্যে তীব্র দ্বন্ধ চলে। দু'জনকে দেখেই স্কুলের ছাত্র বলে মনে হচ্ছিল। একটা সময়ে তো পেন কোহলিকে 'মাথা মোটা' বলেও সম্বোধন করে ফেলেন।

পরের দিন দু'জনের মধ্যে এমন ঝামেলার সৃষ্টি হয় যে আম্পায়ারকে এসে দু'জনকে আলাদা করে দিতে হয়। একজনের বয়স ৩০ অন্যজন্যের ৩৪। এর পরে তাঁরা যে কাণ্ড ঘটালেন তা নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক। ভারতীয় হিসেবে আমি ক্রিকেট খেলাটাকে সম্মান করি। কিন্তু সেদিনের সেই ঘটনা দেখে আমি যারপরনাই মর্মাহত, যারপরনাই ক্ষিপ্ত। সচিন তেন্ডুলকর ও রাহুল দ্রাবিড়ের খেলা দেখে আমি বড় হয়েছি। যে ভাবে রাহুল হুক শটগুলো খেলতেন বা এগিয়ে এসে শোয়েব আখতারের বল ডিফেন্ড করতেন তাতে তাঁকে বেশ আক্রমণাত্মক বলেই মনে হত।

বিরাটকে দেখলে আমার লজ্জাবোধ হয়। তাঁর কথা তাঁর হাবভাব দেখলে আমরা লজ্জাবোধ হয়। যে ভাবে ঘৃণাভরে তিনি আক্রমণ করেন তা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারেনি।

মাঠে দু'দলের মধ্যে কথা দেওয়া নেওয়া হবে এটাই তো স্বাভাবিক। বিষয়টিকে আমি সমর্থনও করি। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, বীরেন্দ্র সেহওয়াগ কিংবা হরভজন সিংয়ের কাছে এমন কাহিনী আপনারা হয়ত অনেক শুনেছেন। তাঁরা শুধুমাত্র বুদ্ধি দিয়ে বিরোধী শিবিরের স্লেজিং বন্ধ করে দিতে পারত।

কিন্তু কোহলি কী রকম যেন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছেন।

body2_121918051838.jpgএকটা সময়ে রাহুল দ্রাবিড়কে বেশ আক্রমণাত্মক বলে মনে হত [ছবি: রয়টার্স]

সঞ্জয় মাঞ্জেরেকর মনে করেন ভারত অধিনায়কের আরও দ্বায়িত্বশীল উচিত। সুনীল গাভাস্কার জানিয়েছেন ভারতের এই পরিস্থিতিতে পড়াটা ভবিতব্য ছিল কারণ তারা এই সফরে এবং ২০১৪ সালের সফরে বিনা কারণে বিপক্ষকে 'কাঠি করতে' শুরু করেছিল।

অস্ট্রেলীয়রা সচিন তেন্ডুলকরকে পেত। আবার তাঁকে সম্মানও করত। গোড়া অস্ট্রেলীয় সমর্থকরা ভারতীয় ক্রিকেটারদের বাহবা জানাতে ভুলতেন না। অস্ট্রেলিয়ার সব চাইতে বড় পথের কাঁটা ছিলেন ভিভিএস লক্ষ্মণ। কিন্তু তাঁকেও অস্ট্রেলীয়রা ভালোবাসতেন। রাহুল দ্রাবিড়কেও। সৌরভের বিষয়টি অবশ্য অন্যরকম ছিল। কিন্তু সৌরভ কোন দিনও ভুল ট্যাকটিকস সূর্যোগ করেনি। যা, বিরাট কোহলি প্রায়ই করে থাকেন।

body3_121918051937.jpgনাসিরুদ্দিন শাহও বিরাটের স্বভাবের সমালোচনা করেছেন [সৌজন্যে: টুইটার]

অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহও তো কোহলিকে বিশ্বের সবচাইতে খারাপ স্বভাবের ক্রিকেটার বলে সম্বোধন করেছেন।

কোহলিকে নিয়ে এত আলোচনার পাশাপাশি গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো পের্থ টেস্টে হেরেছে ভারত। এ বছরে বিদেশে খেলা ১০টি ম্যাচের মধ্যে এটি সপ্তম হার।

পাল্টা দিতে পেরে ভারতীয় দলকে, বিশেষ করে নেতা বিরাটকে, নিয়ে বোধহয় ঠাট্টা মস্করা শুরু হয়ে গিয়েছে অস্ট্রেলীয় শিবিরে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment