গগনদীপ বন্দনা বন্ধ করে আমাদের বৃহত্তর ছবিটার উপর মনোনিবেশ করা উচিৎ

হিন্দুদের হাত থেকে এক মুসলমানকে রক্ষা করেছেন এই উত্তরাখণ্ডের সাব-ইন্সপেক্টর

 |  3-minute read |   25-05-2018
  • Total Shares

গগনদীপকে নিয়ে পড়ে না থেকে আরও বৃহত্তর ছবির উপর মনোনিবেশ করা উচিৎ আমাদের।

উত্তরাখণ্ড পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর গগনদীপ সিং উত্তরাখণ্ড পুলিশ ও শিখ সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন। তাঁর কাজ ও ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি যে তাঁকে এমন একটি কাজের জন্য নায়ক তৈরি করে দেওয়া হয়েছে যা যে কোনও সুরক্ষা বাহিনীতে কর্মরত অফিসারের স্বাভাবিক দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। মানুষকে সুরক্ষা দেওয়া যে কোনও সুরক্ষা বাহিনীরই দায়িত্বের অঙ্গ। তার সঙ্গে মধ্যে নায়ক হয়ে ওঠার কোনও সম্পর্ক নেই।

একটা কথা আমি আগেই জানিয়ে রাখতে চাই। গগনদীপের জন্য আমিও গর্বিত। তাঁর প্রচেষ্টাকে আমিও কুর্নিশ করি। তা সত্ত্বেও আমাদের বৃহত্তর ছবিটার দিকে মনোনিবেশ করতেই হচ্ছে।

আমার মনে হয় আমাদের মধ্যে যে অবিশ্বাস দানা বেঁধেছে এবং আমাদের সমাজ এতটাই ভেঙে পড়েছে যে আমরা গগনদীপকে নায়ক হিসাবে প্রতিপন্ন করতে কতকটা বাধ্যই হচ্ছি। আসলে আমরা গগনদীপের পোশাককে বা তাঁর দায়িত্বকে ধর্মের চোখে দেখছি - একজন শিখ হিন্দুদের হাত থেকে একজন মুসলমানকে রক্ষা করেছেন। এর মূল কারণ সুরক্ষা বাহিনীগুলোর উপর আমরা আসলে বিশ্বাসটাই হারিয়ে ফেলেছি। আমার মতে, আমার ধারণা যদি সত্যি হয় তা হলে ইউনিফর্মের আর কোনও দামই রইল না।একটা বিষয় কিন্তু কোনও সন্দেহ নেই - গড়চিরৌলি, বস্তার, কাশ্মীর, পঞ্জাব বা উত্তর পূর্বাঞ্চলে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর থেকেই কিন্তু আমাদের মধ্যে এই অবিশ্বাসের জন্ম হয়েছে।

body_052518070014.jpgগগনদীপ সিং উত্তরাখন্ড পুলিশ ও শিখ সম্প্রদায়ের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছেন

আসলে এই তালিকার সত্যিই কোনও শেষ নেই। আশির দশকে পঞ্জাবে আমার বেড়ে ওঠা। সেই সময় আমরা শুধু একটা প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজে যেতাম - পুলিশ না সন্ত্রাসবাদী, কারা বেশি সাংঘাতিক? এখনও খাকি পোশাক দেখলে আমার বুক ধড়ফড় করে ওঠে। আমি খুব কম মহিলাকে চিনি যিনি এই সতর্ক বার্তা শোনেননি - রাত-বিরেতে পরিস্থিতি যতই ভয়াবহ হোক না কেন একা একা থানায় যাওয়া উচিৎ নয়।

বর্তমানে যে রাজনৈতিক ধারার সৃষ্টি হয়েছে তাতে এই শিখ অফিসারকে নিয়ে নানা ধরণের রাজনীতি হতে পারে। একজন শিখ হিসাবে আমি বলব যে স্বাধীনতার আগে ও পরে শিখদের নিজেদের দায়িত্বের প্রতি নিষ্ঠা কিন্তু প্রশ্নাতীত।

স্বাধীনতা সংগ্রামে যে ১২১ জন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে ফাঁসি কাঠে চড়তে হয়েছিল তার মধ্যে ৯৩ জন শিখ ছিলেন, অর্থাৎ চার ভাগের তিন ভাগ। যে ২,৬৪৬ জন সংগ্রামীকে আজীবন কারাবাসে দণ্ডিত করে দ্বীপান্তরে পাঠানো হয়েছিল তার মধ্যে ২,১৪৭ জন শিখ ছিলেন, অর্থাৎ পাঁচ ভাগের চার ভাগ। দেশে যখন জরুরি অবস্থা জারি ছিল তখন দেশজুড়ে যে ১.৫ লক্ষ লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল তার অর্ধেক তো পঞ্জাব থেকে।

ধরে নেওয়াই যায় প্রতিটি শিখ ন্যায়ের জন্য লড়াই করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, এই ভাবনাটা কিন্তু সত্যি নয়। তাই তো গগনের গল্প ইংরেজি সোশ্যাল মিডিয়া গোগ্রাসে গিললেও পঞ্জাবে তা নিয়ে খুব একটা শোরগোল পড়ল না।

আসলে বর্তমানে পঞ্জাবের অবস্থা খুবই করুণ। আদালতে উচ্চপদের পুলিশ অফিসাররা একে অপরের বিরুদ্ধে বয়ান দিচ্ছেন। রাজ্যের পুলিশ প্রশাসন এতটাই দুর্বল যে মুখ্যমন্ত্রীকে জেল পাহারা দেওয়ার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়োগ করতে হচ্ছে। এই ধরণের আরও হাজারো ঘটনা রয়েছে।

আমাদের এখন বুঝতে হবে ন্যায় বিচারের মাপকাঠিতে শিখরা এখন ঠিক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছেন। কেন আমাদের সুরক্ষা বাহিনীগুলোর এই করুণ দশা, সেই কারণগুলো আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে গগন কিন্তু আমাদের অনুপ্রাণিত করবার জন্য আদর্শ। সোশ্যাল মিডিয়ায় গগন বন্দনা বন্ধ করে গগনের দায়িত্ববোধকে আমাদের অনুপ্রেরণা করে তুলতে হবে। শুধুমাত্র তাহলেই আমরা গগনকে যোগ্য সম্মান দিতে পারব।

(লেখাটি সর্বপ্রথম লেখকের ফেসবুকে পোস্ট করা হয়েছিল)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment