মাত্র একটি শর্তেই পাকিস্তানের সংঘর্ষ বিরতি প্রস্তাব মানা উচিৎ ভারতের

নিয়ন্ত্রণরেখায় শুধু শান্তি প্রতিষ্ঠান নয়, জঙ্গি কার্যকলাপও বন্ধ করতে হবে পাকিস্তানকে

 |  3-minute read |   03-06-2018
  • Total Shares

গত মাসের শেষ সপ্তাহে ভারত ও পাকিস্তানের ডিরেক্টরেট জেনারে, মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও) এক বৈঠকে পুনরায় সংঘর্ষবিরতির ঘোষণা করেন। ২০০৩ সালে সর্বপ্রথম দু'দেশের পক্ষ থেকে সংষর্ষ বিরতির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল।

বৈঠকে দু'পক্ষই সায় দেয় যে প্রাণহানি কমাতে নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দু'দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি। ভারতের প্রতিরক্ষা দপ্তরের তরফ থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, "সীমান্তবর্তী এলাকায় বসবাসকারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর ডিজিএমও নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর শান্তি প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্যে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে রাজি হয়েছেন।"

body_060318012754.jpgনিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর দু'দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠা অত্যন্ত জরুরি

এখন পাকিস্তানও সংঘর্ষবিরতি চায়

এই বিজ্ঞপ্তির বয়ান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার - সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব পাকিস্তানের তরফ থেকেই এসেছিল। এই পরিস্থিতিতে ভারত পাকিস্তানের প্রস্তাব রাজি হয়ে একবারে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দু'দেশের শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানান উচিৎ।

এ ক্ষেত্রে শুধুমাত্র নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর নয়, জঙ্গিরা যে সব এলাকায় জঙ্গি কার্যকলাপ করে চলছে সেই এলাকাগুলোতেও শান্তি স্থাপন হওয়া উচিৎ। পাকিস্তানের তরফ থেকে কেন সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব দেওয়া হল বা এই প্রস্তাবের ফলে ভবিষ্যতে কী প্রভাব পড়তে পারে, এই কারণগুলো কিন্তু পরিষ্কারভাবে অনুধাবন করতে হবে ভারতকে।

body1_060318012822.jpgজঙ্গিরা যে সব এলাকায় জঙ্গি কার্যকলাপ করে চলছে সেই এলাকাগুলোতেও শান্তি স্থাপন হওয়া উচিৎ

হটাৎ এই মনোভাব পরিবর্তন কেন?

পাকিস্তানের এই মত পরিবর্তনের কারণটা কী? আন্তর্জাতিক মহল থেকে ক্রমাগত চাপ দেওয়ার ফলে হয়ত পাকিস্তান এই প্রস্তাব পেশ করতে বাধ্য হয়েছে। আরও একটি কারণ খুব শক্তিশালী বলে মনে হচ্ছে - সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার কমানোর জন্যে পাকিস্তানের কাছে সংঘর্ষ বিরতিই এই মুহূর্তে এক মাত্র পথ।

এর মধ্যে প্রথম কারণটি কিছুটা হলেও অকল্পনীয়। বরঞ্চ দ্বিতীয় কারণটি অনেক বেশি যুক্তিপূর্ন। নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর ভারতীয় সেনাবাহিনী যা নীতি নিয়েছে তাতে পাকিস্তানী সৈনিকদের প্রাণহানি অনেকটাই বেড়েছে। সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে, নিজেদের সেনাবাহিনীকে রক্ষা করতে পাকিস্তান এই প্রস্তাব পেশ করেছে। তাই বলে জম্মু কাশ্মীর জুড়ে চলতে থাকা জঙ্গি কার্যকলাপ যেমন চলছিল তেমনই চলবে। এভাবেই তো পাকিস্তান সেই ২০০৩ সাল থেকে চালিয়ে আসছে।

body3_060318012850.jpgযুদ্ধ যেখানে অসম্ভব সেখানে পাকিস্তানের লাভটাই বেশি

অন্য উপায় ছিল না ভারতের

যুদ্ধ যেখানে অসম্ভব সেখানে পাকিস্তানের লাভটাই বেশি। পাকিস্তান একদিকে সেনাবাহিনীর ব্যয়ভার কমাবে অন্যদিকে জঙ্গি পাঠিয়ে ভারতকে রক্তাক্ত করে যাবে। হাজার হোক, পাকিস্তানের কাছে এই জঙ্গিদের প্রাণের কোনও দাম নেই। অন্যদিকে, নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর শান্তি স্থাপনের প্রস্তাবে রাজি হয়েই খুশি থাকতে হচ্ছে ভারতকে। গত তিরিশ বছর ধরে সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েকহাজার নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে ভারতের হাতে এই প্রস্তাবে সাড়া দেওয়ার ছাড়া অন্য কোনও উপায় ছিল না। সব মিলিয়ে এই মুহূর্তে পাকিস্তান কিন্তু অনেক বেশি সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে পাকিস্তান যে সংঘর্ষ বিরতির প্রস্তাব আনবে তা স্বাভাবিক ছিল। ভারতও কিন্তু শর্ত সাপেক্ষে পাকিস্তানের প্রস্তাব মানতে পারত - এ দেশের জঙ্গি কার্যকলাপ আগে বন্ধ করুক পাকিস্তান।

body2_060318012919.jpgযদি জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু হয় তাহলে এমন উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে যার আওয়াজ যেন রাওলপিন্ডি অবধি পৌঁছাতে পারে

এর পরও যদি রাওলপিন্ডির জঙ্গি ব্যবসায়ীরা ভারতে আক্রমন করে তাহলে ভারতের উচিৎ বিষয়টিকে সংঘর্ষ বিরতি লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করে যোগ্য জবাব দেওয়া। পাকিস্তান যদি সত্যি সত্যি সংঘর্ষ বিরতিতে রাজি থাকে শুধু তবেই ভারতের সংঘর্ষ বিরতি নিয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকা উচিৎ।

আমাদের বুঝতে হবে সংঘর্ষ বিরতি শুধুমাত্র কাগজে কলমে হয় না। এর জন্য দু'দেশেরই সদিচ্ছার প্রয়োজন রয়েছে। আর এই প্রস্তাবে কিন্তু ভারতকে পাকিস্তানের জঙ্গি কার্যকলাপকেও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এর পরও যদি জঙ্গি কার্যকলাপ শুরু হয় তাহলে এমন উচিৎ শিক্ষা দিতে হবে যার আওয়াজ যেন রাওলপিন্ডি অবধি পৌঁছাতে পারে।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

COLONEL VIVEK CHADHA COLONEL VIVEK CHADHA

Colonel Vivek Chadha (Retd) is a research fellow at the Institute for Defence Studies and Analyses and author of Lifeblood of Terrorism: Countering Terrorism Finance.

Comment