শবরীমালায় দুই মহিলার প্রবেশ নারিত্বের জয়, এবার বিজেপি-কংগ্রেসের উত্তর দেওয়ার পালা

এর সঙ্গে পঞ্চাশের দশকের রোজা পার্কের ঘটনার প্রভূত মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে

 |  4-minute read |   03-01-2019
  • Total Shares

নতুন বছরের শুরুটা ভারতীয় মহিলাদের জন্য বেশ আশাব্যঞ্জকই হল। সুপ্রিম কোর্ট শবরীমালা মন্দিরে সব বয়সী মহিলার প্রবেশ অবাধ করে দেওয়ার নির্দেশের পুরো তিন মাস বাদে, ২ জানুয়ারি দু'জন মহিলা শেষ পর্যন্ত এই মন্দিরে প্রবেশ করতে পারলেন।

বিভিন্ন ভাবে খতিয়ে দেখলে এই ঘটনাটির সঙ্গে পঞ্চাশের দশকে ঘটা রোজা পার্কের ঘটনাটির প্রভূত মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে।

লিঙ্গ বৈষম্যের সঙ্গে বর্ণ বৈষম্যের খুব একটা ফারাক নেই। রজঃস্বলা নারীরা অশুচি নন, অপিবত্র নন, এমনকি 'প্রলুব্ধ' হওয়ার মতো কোনও 'অপিবত্র' বস্তুও নন।

১৯৫৫ সালে রোজা পার্ক এক ব্যক্তিকে বাসের আসন ছেড়ে দিতে রাজি হননি। বিন্দু ও কনকদুর্গা নামের যে দুই মহিলা শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করলেন তাঁরাও একই ভাবে উচ্চবর্ণের হিন্দুদের কুসংস্কারকে মেনে নিয়ে নিজেদের অধিকার হারাতে রাজি হননি।

শবরীমালা মন্দিরের এই রীতি-রেওয়াজ চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে একুশ শতকেও মহিলাদের অবস্থানটা ঠিক কী রকম। পরিস্থিতি এমনই যে দেশের শীর্ষ আদালতকে শেষ পর্যন্ত নির্দেশ জারি করে বলতে হয় যে রজঃস্বলা নারীদের মূর্তিপুজোর অধিকার কেড়ে নেওয়া যাবে না। কিন্তু এই রায়ের পরেও হিন্দু কট্টরপন্থীরা মাস তিনেক ধরে মন্দিরের প্রবেশদ্বার আটকে বসেছিলেন।

body_010319043609.jpg১৯৯৫ সালে এক শেতাঙ্গকে বাসের আসন ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন রোজা পার্ক [সৌজন্যে: উইকিম্যাপিয়া কমন্স]

দেশের শাসকদল বিজেপির সমর্থনও আদায় করে ফেলেছিলেন এই বিক্ষোভকারীরা। শীর্ষ আদালত নির্দেশ যাতে দেশ জুড়ে কার্যকর হয় তার দায়িত্ব সর্বপ্রথম কেন্দ্রীয় সরকারের উপর বর্তায়। অথচ, বিজেপি নিজের ভোটব্যাঙ্ক অটুট রাখতে সেই দায়িত্ব সহজেই ভুলে যায়।

দেশের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেসের আচরণ তো আরও খারাপ। দলের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে স্বাগত জানানো হয়েছিল। দলের সভাপতি রাহুল গান্ধী সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। অথচ, দলের রাজ্য কমিটিকে দেখা গেল বিক্ষোভকারীদের সমর্থন করতে।

এই ভাবেই ধর্মীয় ও রাজনৈতিক নেতারা একজোট হয়ে মহিলাদের তাঁদের আইনসঙ্গত অধিকার থেকে বঞ্চিত করলেন।

এ সবের মাঝেই কেরলের সিপিএম সরকার একবারে সঠিক সময়ে সঠিক প্রতিবাদ জানিয়ে ছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ কার্যকর করতে ব্যর্থ হল।

body1_010319043759.jpgসুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ নিয়ে প্রচুর বিক্ষোভ হয়েছিল, অবশেষে জয়ী হলেন নারীরা [ছবি: পিটিআই]

কিন্তু ২ জানুয়ারি ওই দুই মহিলাকে মন্দিরে প্রবেশের ব্যবস্থা করে দিয়ে পিনারাই বিজয়ন সরকার শেষ পর্যন্ত প্রমাণ করল যে তাঁর সরকারের দেশের আইন প্রতিষ্ঠা করতে পারার ক্ষমতা রয়েছে।

এর মধ্যে অবশ্য অন্য রং চড়ানোর চেষ্টা চলেছে। বলা হচ্ছে যে কমিউনিস্ট সরকারের পক্ষ থেকে হিন্দু ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে। বুঝতে হবে, এক ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ভাবাবেগ দেখা সরকারের কাজ নয়, দেশের আইন প্রতিষ্ঠা করা বা আদালতের নির্দেশ মেনে চলাটাই সরকারের কর্তব্য। এ ক্ষেত্রে এই কর্তব্য আরও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করা উচিত কারণ বছরের পর বছর যেখানে মহিলাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছিল।

পয়লা জানুয়ারি আরও একটি গুতুত্বপূর্ণ ঘটনার সাক্ষী থাকল কেরল। রাজ্যের উত্তরে অবস্থিত কাসারগড় জেলা থেকে উত্তরের তিরুঅনন্তপুরম জেলা অবধি কয়েক লক্ষ মহিলা মানব প্রাচীর তৈরি করেছিলেন। যে সকল অসাম্প্রদায়িক শক্তি তাদের অধিকার খর্ব করছে তাদের বিরুদ্ধে রাজ্যের মহিলারা এই অভিনব বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।

এই বিক্ষোভ হৃদয় ছুঁয়ে গেলেও এই বিক্ষোভ ঘিরে একটা প্রশ্নের উদয় হয়েছিল। এই বিক্ষোভকে সমর্থন করেছিল সিপিএম। তাই প্রশ্ন উঠেছিল, এই বিক্ষোভ নিয়ে মাতামাতি না করে সিপিএম চালিত সরকার কেন রাজ্যে মহিলাদের অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না যা দেশের শীর্ষ আদালত মহিলাদের হাতে তুলে দিয়েছে?

body2_010319043931.jpgলক্ষ লক্ষ মহিলা কেরল জুড়ে মানব প্রাচীর সৃষ্টি করেছিলেন [ছবি: পিটিআই]

এর পরেই দুই মহিলার মন্দিরে প্রবেশ নিশ্চিত করে বিজয়ন নিশ্চিত করলেন 'তাঁর কথার দাম রয়েছে'।

এই পরিস্থিতি বিজেপি ও কংগ্রেসের মনোভাব কী ছিল তা ইতিহাস মনে রাখবে।

শবরীমালা শুধুমাত্র এক মন্দিরের গল্প নয়। শবরীমালা রজঃস্বলা নারীদের কেন্দ্র করে কুসংস্কারের গল্প, শবরীমালা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সেন্টিমেন্ট ভুলে দেশের আইন প্রতিষ্ঠার গল্প, শবরীমালা রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব পালনের গল্প।

বিজেপি ও কংগ্রেস কোন পথ নেবে তা তাদেরই ঠিক করে নিতে হবে। তারা এক হয় সঠিক পথটা বেছে নিক, নয়তো ইতিহাস তাদের এমন একটি দল হিসেবে মনে রাখবে যে দল ভোটব্যাঙ্ক রক্ষা করতে একুশ শতকে দাঁড়িয়েও মহিলাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে পিছপা হয়নি।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment