এইচআইভি বা এডসকে কেন অবহেলা করা উচিত নয়?
এই ভয়াবহ সমস্যা কিন্তু ফের মাথা চাড়া দিয়ে আমাদের উপর থাবা বসাতে পারে
- Total Shares
এ বছর পয়লা ডিসেম্বরের সকালটা আর পাঁচটা দিনের মতোই শুরু হয়েছিল। সকালে উঠে আমার দৈনন্দিন কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কতকটা আচমকাই ওই বিশেষ তারিখের কথা আমার মনে পড়ে গেল - 'আরে, আজ তো পয়লা ডিসেম্বর। মানে, বিশ্ব এডস দিবস।'
মেজাজটা কেমন যেন বিগড়ে গেল। গত ৩০ বছর ধরে দিনটিকে আমরা বিশ্ব এডস দিবস হিসেবে উদযাপন করছি। যখন এই জীবাণুর প্রকোপ সবচাইতে বেশি ছিল, সেই নব্বই দশক থেকে গত ১২ বছর ধরে আমি এইচআইভি বা এডস নিয়ে কাজ করছি। অথচ আমি নিজেই এই দিনটির কথা বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম। তাহলে যাঁরা এই রোগটি সম্পর্কে সচেতন নন বা সম্পূর্ণ রূপে উদাসীন তাঁদের কী অবস্থা হবে?
এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে বসে পড়লাম। অনেক ভেবেচিন্তে কয়েকটি যুৎসই উত্তর খুঁজেও পেলাম। উত্তরগুলি ম্যাড়ম্যাড়ে হতে পারে, কিন্তু ধ্রুব সত্য।
আমার মনে হয়েছে, আমরা ধারণা করে বসে আছি যে খারাপ সময়টা আমরা পার করে ফেলেছি।
এইচআইভি বা এডসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই হবে [ছবি: রয়টার্স]
তিরিশ বছর কিন্তু দীর্ঘ সময়। আর এই তিরিশ বছর ধরে একটি জীবাণু আমাদের মধ্যে রয়ে গিয়েছে যার ফলে প্রতি বছর গোটা বিশ্বজুড়ে কয়েক লক্ষ লোকের প্রাণহানি ঘটছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রমাণ করে দিয়েছে যে এই জীবাণু এতটাই ভয়াবহ যে প্রতি চারজন আক্রান্তের মধ্যে একজনকরে আক্রান্ত জানেই না যে সে এই জীবাণু তার শরীরে থাবা বসিয়েছে।
আমরা জানি যেএইচআইভি বা এডস সকলের উপরই প্রভাব ফেলতে পারে। কিন্তু আতঙ্কে ভুগে আমরা অনেকেই পরীক্ষা করতে চাই না। এর ফলে এই জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করা দুষ্কর হয়ে পড়ছে।
২০১০ সাল নাগাদ এই জীবাণুর প্রকোপ অনেকটাই কমে গিয়েছে। আর প্রকোপ কমার সঙ্গে সঙ্গে রক্তদাতা আর এই সংক্রান্ত নিধিনির্ধারকদের দৃষ্টি এর থেকে সরে গেছে।
তাই বলে জীবাণু কি আর নিজের দৃষ্টি আমাদের থেকে সরিয়ে রাখবে?
আমার তো তা মনে হয় না। এইচআইভির প্রকোপ কমলেও এইচআইভি জীবাণু রয়ে গেছে।
আপনার হয়ত বেশ কিছু প্রতিবেদন বা রিপোর্ট পড়েছেন যাতে বলা হয়েছে যে সমস্ত এলাকায় এইচআইভি ছিল না সেখানেও নতুন করে এই জীবাণুর প্রকোপ দেখা গিয়েছে কিংবা যেখানে জীবাণুর প্রকোপ কমেছে সেখানে আবার বৃদ্ধি পেয়েছে।
এর থেকে আমরা কী বার্তা পেতে পারি?
খুব সাদামাটা বাংলায়, আমরা আত্মতুষ্টিতে ভুগছি। আমরা ভাবতে শুরু করে দিয়েছি যে আমরা এই জীবাণুকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছি।
বিশ্ব এডস দিবসের সপ্তাহখানেক আগের একটি রিপোর্ট পড়ে মনে হচ্ছে যে নব্বইয়ের দশককে ও তার পরবর্তী দশকের শুরুতে আমরা এই জীবাণু প্রতিরোধের জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম করলাম সেই পরিশ্রম আবার বিফলে যেতে বসেছে।
সত্যি বলতে, আক্রান্তদের একঘরে করে রাখার গল্প আমি আর শুনতে চাই না। হাসপাতালে আলাদা করে সংরক্ষণ করে রাখা ঘরগুলো আমি আর দেখতে চাইনা। মৃত্যু পথযাত্রী একজনকে আমি আর সেবা করতে চাই না বা জীবাণু আক্রান্তদের পরিবারবর্গকে আমি আর সান্ত্বনা দিতে চাইনা। এই কাজগুলো সত্যিই বেশ বেদনাদায়ক।
সে ক্ষেত্রে, আমি ঠিক কি চাই?
আমরা ব্যক্তিগত ভাবে সরকারি বা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলোর সাহায্য ছাড়াই অনেক কিছু করতে পারি। প্রথমেই, আমাদের এই বিষয়ে নিয়ে আবার আলোচনা শুরু করে দিতে হবে।
এইচআইভি বা এডসের বিরুদ্ধে লড়াই এখনও শেষ হয়নি [ছবি: রয়টার্স]
লজ্জায় বা অপমানিত হওয়ার আশঙ্কায় আক্রান্তরা আবার নীরব হয়ে ওঠার আগেই আমাদের উচিত বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু করে দেওয়া। ঠিক নব্বইয়ের দশকে যে রকম করা হয়েছিল। যাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, সেই তরুণদের সচেতন করা শুরু করে দেওয়া উচিত। স্কুলে বা কলেজে গিয়ে কিংবা বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপসের মাধ্যমে এই সচেনতা গড়ে তোলা যেতে পারে।
প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষাগারগুলো যেমন হোর্ডিংয়ে এক্স-রে বা এমআরআই স্ক্যানের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়, সেরকম ভাবে স্বেচ্ছায় এডস পরীক্ষা করানোর বিজ্ঞাপন দেওয়া যেতে পারে।
যাঁরা এইচআইভি আক্রান্ত হয়েও জীবিত আছেন তাঁদের উচিত সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজেদের রোগভোগের কাহিনি শোনানো।
সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা বিভিন্ন ধরণের উদ্ভট বিষয় নিয়ে পড়াশোনা করে থাকি। তাহলে, এইচআইভি নিয়ে নয় কেন?
সব শেষে নিজেদের ও নিজেদের প্রিয়জনদের দায়িত্ব অবশ্যই আমাদেরই নিতে হবে।
ভুলে গেলে চলবে না জীবাণু আমাদের ভুলের পুনরাবৃত্তির জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে, তাদের একবার শেষ সুযোগ দিলে আর রক্ষে নেই।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

