রাহুল বলছেন সিবিআইয়ে এই পরিস্থিতির নেপথ্যে রয়েছে যে রাফাল চুক্তি, তিনি কতটা ঠিক?

বিষয়টা আরেকটু খতিয়ে দেখা যাক

 |  3-minute read |   30-10-2018
  • Total Shares

সিবিআই যখনই সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা) থেকে সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনফাইটিংয়ে (কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা সংস্থা) পরিণত হয়েছে তখন তার দিকে নজর পড়েছে কেন্দ্রীয় সরকার, বিভিন্ন বিরোধী রাজনৈতিক দল এমকি দেশের আদালতেরও।

বিরোধীরা যখন বিজেপি সরকারের প্রশাসন চালানোকে নিশানা করেছে – তারা যখন অভিযোগ করছে যে নির্দেশক অলোক ভার্মাকে রাতারাতি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কারণ প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্ত করছিলেন আর এই তদন্তের ফলেই বিপাকে পড়েছিল সরকার।

কংগ্রেসের এই অভিযোগ কতটা সত্যি এবং অলোক ভার্মা কি আদৌ রাফাল চুক্তি নিয়ে তদন্ত করার অবস্থায় ছিলেন?

alok-rakesh_10261811_103018072009.jpgদুই আধিকারিকের মধ্যে প্রাতিষ্ঠানিক দ্বন্দ্ব নাকি কারণ আরও গভীর? (ছবি: ইন্ডিয়া টুডে)

এ কথা ঠিক যে ওই চুক্তি নিয়ে প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ যখন অলোক ভার্মা শুনেছিলেন তখন সরকার খুবই হতাশ হয়েছিল। ৪ অক্টোবর সিবিআই দপ্তরে গিয়ে ১৩২ পৃষ্ঠার অভিযোগপত্র জমা করেছিলেন প্রশান্ত ভূষণ।

অভিযোগ ছিল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ, রিলায়েন্স এডিএ গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান অনিল আম্বানি এবং দাসো অ্যাভিয়েশেনের সিইও এরিক ট্র্যাপিয়ের-এর বিরুদ্ধে।

প্রশান্ত ভূষণের অভিযোগ ছিল, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অনিল আম্বানিই এই ষড়যন্ত্রের মূলে। ব্যক্তিগত ভাবে এই ধরনের অভিযোগ সিবিআই ডিরেক্টর নিজে গ্রহণ করাকে সরকারের চোখে ছিল বিদ্রোহের সামিল। এবং এর মাত্র কয়েক দিন পরেই অলোক ভার্মা এবং তাঁর ঠিক পরের পদে থাকা রাকেশ আস্থানার মধ্যে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব শুরু হয়ে গেল আর তা এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেল যে নিজের প্রতিষ্ঠানের সর্বাপেক্ষা ক্ষমতাশালী দ্বিতীয় আধিকারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করল সিবিআই, তাদের নিজেদের ডেপুটি সুপারিন্টেন্ডেন্ট অফ পুলিশকে গ্রেফতার করল সিবিআই নিজেই, নিজেরাই নিজেদের প্রধান কার্যালয়ে তল্লাশি করল এবং পুরো বিষয়টি আদালতের দোরগোড়ায় পৌঁছে গেল।

সরকারি ভাবে সিভিসি (চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার) যে বিবৃতি দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে আস্থানী তাঁর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন তার তদন্ত করার সময় অলোক ভার্মা ‘অসহযোগী’র মতো আচরণ করেছিলেন, এবং প্রতিষ্ঠানের দুই শীর্ষকর্তাকে জোর করে ছুটিতে পাঠানোর ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তবে এই সবই করা হয়েছে রাত ১১টা থেকে ভোর চারটের মধ্যে, যা কংগ্রেস ও অন্যান্য বিরোধী দলকে প্রশ্ন তোলার সুযোগ করে দিয়েছে।

modi-nirmala-inside__103018072110.jpgপ্রশান্ত ভূষণ তাঁর অভিযোগপত্রে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারমণের নাম করেছেন (ছবি: পিটিআই ফাইল)

কংগ্রেসের অবস্থান হল, রাফাল চুক্তি নিয়ে অলোক ভার্মা তদন্ত শুরু করতে যাচ্ছিলেন যার ফল সরকারের দুর্নীতি প্রকাশ্যে চলে আসতে পারত, তাই গভীর রাতে তাঁকে অপসারিত করা হয়।

যদিও সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশেন সূত্রে ডেইলিও জেনেছে যে রাফাল চুক্তি নিয়ে কোনও ধরনের তদন্তের বা কোনও অভিযোগ দায়ের করার কোনওরকম নির্দেশই দেওয়া হয়নি।

তবে বিরোধীরা এত সহজে এই ইস্যুটিকে হাতছাড়া করতে রাজি নয়, বিশেষ করে নির্বাচনের আগে তো নয়ই। সেই কারণেই ২৬ অক্টোবর এ নিয়ে প্রতিবাদে নামেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী ও অন্য নেতারা।

gandhi-cbi_102618083_103018072240.jpg২৬ অক্টোবর দিল্লিতে প্রতিবাদ সমাবেশে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী (ছবি: পিটিআই)

সিবিআইকে সেই ক্ষমতা দেওয়া আছে বলে যে কোনও কারও বিরুদ্ধে প্রাথমিক তদন্ত (প্রিলিমিনারি এনকোয়্যারি) শুরু করা অথবা কোনও অভিযোগকে এফআইআর করার ক্ষমতা রয়েছে সিবিআই ডিরেক্টরের। প্রতিষ্ঠানের নির্দেশক হিসাবে অলোক ভার্মা কি রাফাল চুক্তি নিয়ে কোনও তদন্ত করাতে প্রস্তুত হচ্ছিলেন? তবে একমাত্র অলোক ভর্মাই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন।

কোনও ভাবেই নিজের পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে সিবিআইয়ের এক আধিকারিক বলেন, “যদি পুরো পদ্ধতিটি খেয়াল করেন তা হলে দেখবেন যে সবকিছুই ঘটেছে গভীর রাতে। এর অর্থ হল সরকারি আধিকারিকরা অপেক্ষা করছিলেন কতক্ষণে অলোক ভার্মা সেই কার্যালয় ছেড়ে তাঁর বাড়িতে যাবেন। গভীর রাতে এক পত্রবাহন তাঁর কাছে নির্দেশিকা পৌঁছে দিল (যে তাঁকে ছুটিতে পাঠানো হচ্ছে) এবং একই সঙ্গে সেই বাড়ি ঘিরে ফেলা হল যাতে কেউ সেখানে প্রবেশ করতে না পারেন। তা না হলে তার ১২টার সময় অস্থায়ী নির্দেশককে কেন দায়িত্ব নিতে হল?  

অলোক ভার্মা যখন সরকারের বিরুদ্ধে সঙ্ঘাতে যাওয়ার কথা ভাবলেন তখন তাঁর আর ৯০ দিন চাকরি ছিল।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MUNISH PANDEY MUNISH PANDEY @itsmunish

Special Correspondent, India Today Group

Comment