কর্নাটকে নিজের প্রাসঙ্গিকতা বজায় রাখার পাশাপাশি মমতাকে চাপে ফেলল কংগ্রেস

অস্তিত্ব বজায় রাখতে সফল কংগ্রেস, আরও পিছনে তৃতীয় ফ্রন্টের স্বপ্ন

 |  5-minute read |   20-05-2018
  • Total Shares

ভোটের আগে সমর্থন করেছিলেন বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) নেত্রী মায়াবতী। তবে দু’দিনের মুখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা ইস্তফা দেওয়ার পরে এইচডি কুমারস্বামীকে প্রথম ফোনটি করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেই এ নিয়ে টুইট করেন মমতা।

২০১৪ সালে কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদী সরকার গঠনের পরে একের পর এক রাজ্যে সরকার গঠন করেই চলেছে বিজেপি। কোথাও ভোটের আগে বৃহত্তম জোট, কোথাও ভোটের পরে বিরোধী বিধায়করা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। বড় রাজ্যগুলির মধ্যে পঞ্চাব ছাড়া তেমন কোথাও মাথা তুলতে পারেনি কংগ্রেস। এই অবস্থায় কর্নাটকে বিজেপিকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে পেরে উচ্ছ্বসিত কংগ্রেস। আগের বারের চেয়ে দুটি আসন কম পেয়ে, রাজ্যের নির্বাচকদের কাছে আরও গুরুত্বহীন হয়ে কংগ্রেসের সমর্থন পেয়ে এইচডি কুমারস্বামীও অভিভূত। ২১ মে তাঁর শপথ নেওয়ার কথা থাকলেও, এই দিন রাজীব গান্ধীর মৃত্যুদিন, তাই বুধবার তিনি শপথ নেবেন। হঠাৎ গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ায় কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী খোঁচা মারতে ছাড়েননি রাজনীতিতে তাঁর প্রধান প্রতিপক্ষকে।

কুমারস্বামীর শপথ আরও পিছিয়ে গেলেও অবাক হওয়াক কিছু নেই, কারণ যে ভাবে অন্য রাজ্যগুলোতে বিজেপির মুখ্যমন্ত্রীদের শপথে আড়ম্বর দেখা গেছে, তার চেয়ে পিছিয়ে থাকতে রাজি নন কুমারস্বামীও। তাই রাজভবনে নয়, কান্তিবীর স্টেডিয়ামে শপথ গ্রহণ করবেন। সেখানে শুধু রাহুল গান্ধী নন, থাকতে পারেন তৃতীয় ফ্রন্টের তাবড় নেতা-প্রতিনিধিরা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিলেশ যাদব, মায়াবতী, চন্দ্রবাবু নায়ড়ু, কে চন্দ্রশেখর রাও প্রমুখ। কুমারস্বামীকে আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে রেখেছন অনেকেই। তালিকায় আরজেডির তেজস্বী যাদবও আছেন।

এক কথায় তৃতীয় ফ্রন্টের ভাবনায় যে সব দল রয়েছে, তাদের তাবড় নেতাদের পাশাপাশি দেখা যেতে পারে জনতা দল সেকুলারের মুখ্যমন্ত্রী এইচডি কুমারস্বামীর শপথ অনুষ্ঠানে। কিন্তু অকংগ্রেস-অবিজেপি সরকারের যে ভাবনা রয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তেলাঙ্গনা রাষ্ট্রসমিতির প্রধান তথা তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের, সেই ভাবনার পথে তাঁরা কতটা এগোতে পারবেন, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েইছে। কুমারস্বামীকে শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি কংগ্রেসকেও শুভেচ্ছা জানাতে ভোলেননি ডিএমকে-র প্রধান এমকে স্ট্যালিন এবং ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির প্রধান শরদ পওয়ার। 

কুমারস্বামী মুখ্যমন্ত্রী হওয়ায় তৃতীয় ফ্রন্টের শরিকরা যতই মাতামাতি করুন না কেন, কুমারস্বামীর জিয়নকাঠি এখন কংগ্রেসের হাতে। কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী থাকতে হলে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে কুমারস্বামী কিছুই করতে পারবেন না। তা হলে সারা দেশে কংগ্রেস ও বিজেপিকে বাইরে রেখে বড় আঞ্চলিক দলগুলোর লড়াইয়ের ভাবনা প্রথমেই ধাক্কা খাবে কর্নাটকে, যেখানে বিজেপির জয়যাত্রা ধাক্কা খেয়েছে বলে উল্লসিত তৃতীয় ফ্রন্ট।

kum_body3_052018063951.jpgবিধানসভায় ইস্তফা দেওয়ার কথা ঘোষণা করছেন ইয়েদ্যুরাপ্পা

কর্নাটকে কুমারস্বামীর জয় সাময়িক ভাবে বিজেপি-বিরোধী শিবিরকে উল্লসিত করলেও, ২০১৯ সালে লোকসভা ভোটে সুবিধা করে দেবে বিজেপিকেই। সংগঠন আরও মজবুত করে লোকসভা ভোটে রাজ্যের ২৮টি আসনেই বিজেপিকে জেতাতে চাইবেন। বিনিময়ে বিজেপিও চাইবে আগামী কয়েকমাসে কংগ্রেসকে ভাঙাতে। কারণ সরকারে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও তাদের বসতে হবে ট্রেজারি বেঞ্চের পিছনের দিকে। যাঁরা মন্ত্রিসভায় ছিলেন এবং এ বারেও জয়ী হয়েছেন তাঁরাও যুক্ত হতে পারেন বিক্ষুব্ধদের তালিকায়। সেই সুযোগ পুরোমাত্রায় তুলতে চাইবে বিজেপি।

kumar_body_052018063847.jpgইয়েদ্যুরাপ্পা ইস্তফা ঘোষণার পরে কুমারস্বামী

কর্নাটকে জয় কি তা হলে কাঁটা হয়ে দাঁড়াল তৃতীয় ফ্রন্টের কাছে? কর্নাটকের এই রায় কাটাছেঁড়া করলে দেখা যাবে, দলের অভ্যন্তরে কোন্দল থাকলেও মোদীর প্রচারের জেরে শেষ বেলায় অনেকটাই চাঙ্গা হয় বিজেপি শিবির, তারা ১০৪টি আসন পায়। গতবারের চেয়ে ৬৫টি বেশি আসন তারা পেয়েছে। যদিও লোকসভা ভোটের বিধানসভাভিত্তিক ফল বিচার করলে দেখা যাবে, তাদের ২৬টি আসন কমেছে। রাহুল গান্ধী নিজেকে দেশের নেতা হিসাবে তুলে ধরে কর্নাটকে জিততে চেয়েছিলেন, কিন্তু আগের বিধানসভা ভোটের তুলনায় এ বার কংগ্রেস ৪৩টি কম আসন পেয়েছে, লোকসভার বিচারে একটি বেশি। এবার তাদের প্রাপ্ত আসন ৭৮। নেতা হিসাবে রাহুল গান্ধী আরও একবার ব্যর্থ হলেন। যদিও প্রাপ্ত ভোটের শতাংশের হিসাবে এ বারে বিজেপির থেকে এগিয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। এবার জেডিএস, মুখ্যমন্ত্রী কুমারস্বামী ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দেবগৌড়ার দল। গতবারের চেয়ে তাদের ২টি আসন কমলেও, লোকসভা ভোটের চেয়ে তাদের ফল অনেক ভালো হয়েছে। এ বার তারা পেয়েছে ৩৮টি আসন। লোকসভার ফলের বিচারে বেড়েছে ২৩টি। 

তবে এত কিছুর পরেও কর্নাটক ধরে রাখতে পেরেছে কংগ্রেস এবং একই সঙ্গে তারা তৃতীয় ফ্রন্টের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত করে দিল। পরবর্তী লোকসভা ভোটের লড়াইয়ে একটু হলেও নিজের অবস্থান ভালো করে নিল।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMITRO BANDYOPADHYAY
Comment